সিরাজগঞ্জ: সারাদেশে যখন কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাসের) বিস্তার রোধে সরকার লকডাউন ঘোষণা করেছেন ঠিক সেই মুহুর্তে সিরাজগঞ্জ সদর থানার বাগবাটিতে কিছু অসাধু মানুষের স্বেচ্ছাচারিতা ও অর্থের লোভে লকডাউন উপেক্ষা করেই চলছে জমজমাট আসবাবপত্রের মেলা। তিন দিনের মেলা হলেও তা শেষ হয়নি পনের দিনেও। মানা হচ্ছেনা স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্বের লেশমাত্রও। শুধু তাই নয় মেলায় খাজনার নামে চলছে রীতিমতো চাদাবাজি। ব্যাবসায়ীরা ইজারাদারের নিকট জিম্মি হয়ে না পাড়ছেন মেলা ছেড়ে যেতে না পারছেন ইজারাদারের স্বেচ্ছাচারিতায় চাওয়া খাজনার নামে নেয়া চাদাবাজির অভিযোগ বা প্রতিবাদ করতে। এসব যেন দেখেও দেখছেনা স্থানীয় প্রশাসন।
সরেজমিনে বাগবাটি মেলায় ঘুরে ও স্থানীয় এবং ব্যাবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাগবাটি মেলাটি ঐতিহ্যবাহী মেলা। প্রতি বছরেই চৈত্র মাসের নির্দিষ্ট সময়ে মেলাটি হাটখোলা প্রাঙ্গণেই অনুষ্ঠিত হয়। অন্যান্য বারের মতো এবারেও ২২মার্চ মেলাটি শুরু হয়। মূলত ৩দিনের জন্য মেলার আয়োজন হয়ে থাকলেও ১৫দিনেও শেষ হয়নি মেলাটি। মেলায় সর্বমোট ৭১টি আসবাবপত্রের দোকান অংশ নিয়েছে। আর এটাকেই পুজি করে খাজনার নামে ইচ্ছে মর্জিতে ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা উত্তোলন করছেন ইজারাদার। যার বিপরীতে দেয়া হচ্ছেনা কোনো রশিদ পর্যন্তও। কোন সামগ্রীর বিপরীতে কত টাকা নিতে বা দিতে হবে সেটা জানেননা স্বয়ং ইজারাদার ও ব্যাবসায়ীরাও। মেলার খাজনা নির্ভর করছে বিক্রির উপরে না বরং ব্যবসায়ীদের আসবাবপত্রের উপরে। স্বাভাবিকভাবে বিক্রিত সংখ্যার উপরে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাজনা দেবার কথা থাকলেও দোকানে কয়টি আসবাব আছে তার উপরেই ইচ্ছেমতো নির্ধারণ করা হচ্ছে খাজনা। এবং সেই অনুযায়ীই হচ্ছে আদায়ও। যা সম্পুর্ন নিয়ম বহির্ভূত বলে বলছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যাবসায়ী বলেন, আমি ইতিমধ্যেই ২২হাজার টাকা খাজনা দিয়েছি। কিন্তু এর বিপরীত কোনো রশিদ বা কিসের জন্য এত টাকা তার উত্তর পর্যন্ত পাইনি। মেলায় কিছু ক্যাডার বাহিনী ঘোরাফেরা করে তাই এর প্রতিবাদ করার মতো সাহসও নাই।
একই অভিযোগ করেন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী। একজন বলেন, আমি মেলায় এখন পর্যন্ত ১৬-১৭টি খাট বিক্রি করেছি। এর বিনিময়ে এখন পর্যন্ত ১৩হাজার টাকা খাজনা দিয়েছি, জানিনা আরও কত দিতে হবে। আরেকজন একই ভাষায় বলেন, ১৮হাজার টাকা খাজনা দিয়েছি তবে শুনলাম আরও দিতে হবে। তবে এটাকে রীতিমতো খাজনার নামে চাদাবাজি বলেই উল্লেখ করছেন সবাই। কিন্তু লকডাউনে মেলায় দোকান খুলে রাখার বিষয়ে সবাই বলেন, যেহেতু অনেক টাকা খাজনা দিতে হচ্ছে তাই এমতাবস্থায় চলে গেলে মূলধনটাও থাকবেনা।
বাগবাটি হাট কতৃপক্ষের সভাপতি মো. সজলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এটা মেলার আসবাবপত্রের ইজারাদার বলতে পারবেন। আমরা ৩দিনের জন্য সাইফুল ইসলামকে মেলার ইজারা দিয়েছি। তিনিই এই বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। তবে এরকমটা হলে সেটা অন্যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি আমাদের কাছে কেও অভিযোগ দেয় তাহলে অবশ্যই সেই অনুযায়ী ব্যাবস্থা নিবো।
মেলার ইজারাদার সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা খাজনার টাকার জন্য কাউকে চাপ দিচ্ছিনা। তবে প্রতিবেদকের কাছে প্রমান আছে এবং খাজনা কেন নির্ধারণ করা হয়নি, কেন টাকার রশিদ দেয়া হচ্ছেনা ও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে লকডাউনেও কেন মেলা চালানো হচ্ছে এর একটি প্রশ্নেরও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি বরং অনেক রাজনীতিবিদদেরও নাম ভাঙ্গানোর চেষ্টা করেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বাগবাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলমকে একাধিকবার তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহাউদ্দীন ফারুকী বলেন, বিষয়টি জানতাম না। এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসন কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস) রোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আর লকডাউন উপেক্ষা করে এমনটা হয়ে থাকলে এখনই ব্যাবস্থা নিচ্ছি।
আগামীনিউজ/মালেক