Dr. Neem on Daraz
Victory Day

এমপি পাপুল ও কতক প্রশ্ন


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২১, ০৫:২৯ পিএম
এমপি পাপুল ও কতক প্রশ্ন

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ অর্থ ও মানবপাচারের মামলায় কুয়েতে সাজাপ্রাপ্ত শহিদ ইসলাম পাপুলের লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি জানানো হয়। কুয়েতে পাপুলের সাজার রায় ঘোষণার দিন থেকে তার আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।  গত ২৮ জানুয়ারি পাপুলকে চার বছরের কারাদণ্ড দেন কুয়েতের ফৌজদারি আদালত। নৈতিক স্থলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ায় লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্য থাকবার যোগ্য নন। 

রাজনীতির ময়দানে কোনরূপ পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও ২০১৮ সালের নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে এমপি নির্বাচিত হয়ে তিনি আলোচনায় চলে আসেন। লক্ষীপুরবাসীর ধারণা, এটির পেছনেও রয়েছে তার কালো টাকার প্রভাব। কুয়েতে পাপুলের প্রসার ও পরিচিতি থাকলেও দেশে তাকে ২০১৬ এর আগে কেউ চিনত না।

পাপুলের নির্বাচিত এলাকার অনেকে এটাও ভেবে থাকেন যে, পাপুল নির্বাচনে তার জাতীয় পার্টির প্রতিপক্ষকে ঘুষ দিয়ে চুপ করিয়ে রাখেন; প্রতিপক্ষের প্রার্থী পাপুলকে বরং বিভিন্ন সময় 'সমর্থন' দিয়ে গেছেন। নিজে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েই পাপুল ক্ষান্ত থাকেননি, সংরক্ষিত আসনের কোটায় তার স্ত্রীকেও তিনি এমপি করে নেন।

"আরব সাগর শুকিয়ে যাবে কিন্তু আমার সম্পদ কখনো শেষ হবে না," লক্ষীপুরে সাংসদ নির্বাচিত হবার পর এক সংবর্ধনায় এ কথা বলেছিলেন মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম ওরফে কাজী পাপুল। এই একটি বক্তব্যই মানুষকে পাপুলের ব্যক্তিত্বের আভাস দিতে যথেষ্ট। তবে এটি কেবল একটি দিক, মুদ্রার অপর দিকটি অত্যন্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন; মানব পাচার, ঘুষ, অর্থ পাচার এবং অন্যায়-দুর্নীতির জালে আষ্টেপৃষ্ঠে ঘেরা।  

১৯৮৯ সালে পাপুল পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কুয়েতে যান এবং দুই দশকের ভেতরেই একজন স্বপ্রতিষ্ঠিত ধনকুবের হিসেবে আবির্ভূত হন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু এরপরই মানব পাচারকারী চক্র চালানোর অভিযোগে আসে তার বিরুদ্ধে। তিনি কুয়েতি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে গ্রেপ্তার হন, কুয়েতের আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন এবং সবশেষে কৃতকর্মের জন্য চার বছরের কারাদণ্ড প্রাপ্ত হন।

মানব ও অর্থ পাচারকারী পাপুল কিভাবে সাংসদ হন, এর দায় কার?

কথায় আছে-টাকায় বাঘের দুধ মেলে। বাঘের দুধের সঙ্গে বর্তমান রাজনীতির বাজারে টাকায় এমপি হওয়ার টিকেটও মেলে। পাপুল ও তার স্ত্রী সেলিনার এমপি হওয়া তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। এ প্রসঙ্গে হাজারো প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তীরের মতো এদিক-ওদিক ছুটছে। যে তীরে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে রাষ্ট্র। যারা টাকা খেয়ে নির্বাচনের নমিনেশন নিশ্চিত করে এমন গুণধর ‘এমপি দম্পতি’ দেশকে ‘উপহার’ দিলেন, এ বোধহীন, কাণ্ডজ্ঞানহীন অর্থলোভীদের কী হবে? তারা কি আড়ালে থেকে যাবেন? নাকি যে টাকা খেয়েছেন, তার কিছু উগরে অন্যকে দিয়ে পার পাওয়ার আনন্দে মুচকি হাসি হাসবেন? আর কত লুকাবেন? কেন একজন অরাজনৈতিক, মানব পাচারকারী, অর্ধশিক্ষিত বখাটে টাইপের ব্যক্তিকে এমপি বানানো হলো? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা জরুরি। উত্তর না মিললে সামনে ঘোর বিপদ। 

যারা রাজপথে রাজনীতি করেছেন, জনগণের কাঁধে চড়ে যারা সংসদে আসেন, বসেন, কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তারা পেছনের দিনগুলোর দিকে, সংসদের বাইরে রেখে আসা মানুষগুলোর দিকে ফিরে তাকান। বিনিয়োগকারীদের সেদিকে তাকানোর ফুসরত নেই। দায়বদ্ধতাও নেই। বিগত সময়ে অনেকে এমন আচরণও করেছে বটে। একটি কারখানার মালিক রাজনীতিতে টাকা ইনভেস্ট করে নামমাত্র জনপ্রতিনিধি হয়ে পরবর্তীতে গ্রুপ অব কোম্পানির মালিক বনেছেন। টাকার পাহাড় গড়েছেন। যার কারণে রাষ্ট্রে অগণিত হারে দুর্নীতি, অন্যায়, অনিয়ম, লুটপাট, ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষ, শিক্ষ্য-স্বাস্থ্যব্যবস্থা থেকে শুরু করে সবকিছু।

এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রাজনীতির এমন দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদটা রাজনৈতিক কর্মীদের থেকেই আসা উচিত। পাপুল গ্রেপ্তার হওয়ার পরেও দায়িত্বশীলদের কণ্ঠটা অনুচ্চারিতই থেকে গেছে। এটাই আমাদের রাজনীতির ভগ্নদশার ইঙ্গিত দেয়। যা রাজনীতির জন্য, রাষ্ট্রের জন্য ভীষণ অমর্যাদাকর।

আগামীনিউজ/এএইচ   

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে