মহামারি কোভিড-১৯ থেকে দেশের জনগণকে বাঁচাতে দীর্ঘ দুই মাসের অধিক সময় সাধারণ ছুটিতে ছিলো দেশ। তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাই এবার ভিন্ন পথে হাটছে সরকার। থানা, ওয়ার্ড, পাড়া বা মহল্লা হিসাবে লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। লাল, হলুদ ও সবুজ এই তিন নামে চিহ্নিত করে লকডাউনের গুরুত্ব আরোপ করা হবে।
ধারণা করা হচ্ছে আগামীকাল রবিবার রাত বা সোমবার সকাল থেকে এ লকডাউন কার্যকর হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সমন্বয়ে এ লকডাউনের এলাকা নির্ধারণ করা হবে। মন্ত্রণালয় সূত্র আশা করছে হয়তো আগামীকাল রবিবার পুরো সম্ভাব্য লকডাউনে যাওয়া এলাকার তালিকা তারা হাতে পাবে। এর পরই কার্যকর করা হবে এ লকডাউন।
লকডাউনের এলাকা নির্ধারণে বিবেচ্য বিষয় সমূহের মধ্যে বেশ কিছু দিক বিবেচনা করা হবে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- শহরে প্রতি এক লাখ লোকের মধ্যে যদি ৩০ জন এবং গ্রামে প্রতি এক লাখ লোকের মধ্যে ২০ লোক করোনায় ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়ে থাকে তবে সে এলাকাকে রেড (Red) জোন ঘোষণা করা হবে। অর্থাৎ প্রতি লাখ লোকের মধ্যে শহরে ৩০ এবং গ্রামে ২০ জন রোগী থাকলেই সেটা রেড জোন। তবে যদি এমন হয় যে একটি ওয়ার্ড বা থানার নির্দিষ্ট একটা পাড়া বা কয়েকটি গলিতেই উক্ত সংখ্যক বা বেশি রোগী আছে তবে সেই পাড়া বা গলি লকডাউন করা হবে। সেক্ষেত্রে পুরো থানা বা ওয়ার্ড লকডাউনের আওতায় আসবে না।
রেড (Red) জোন ঘোষিত এলাকার জনসাধারণকে বাসায়ই থাকতে হবে। যাতে করে তাদের দ্বারা বাহিরে কারো মধ্যে করোনা ছড়াতে না পারে বা ওই এলাকায় যাদের করোনা এখনো হয়নি তারা যাতে নিরাপদ থাকতে পারে।
হলুদ (Yellow) জোনও একই পদ্ধতিতে ঘোষণা করা হবে। তবে সেক্ষেত্রে শনাক্তের হার শহরে প্রতি এক লাখ লোকের মধ্যে যদি ৩ থেকে ২৯ জন এবং গ্রামে ৩ থেকে ১৯ জন লোক করোনায় ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়ে থাকে তবে সে এলাকাকে হলুদ জোন ঘোষণা করা হবে।
তবে কড়াকড়ির দিক দিয়ে রেড জোনের তুলনায় শিথিল থাকবে হলুদ জোন। তবে এটাকে ছাড় বা শিথিল বলতে চান না সংশ্লিষ্টরা।
এর পরই অবস্থান সবুজ (Green) জোনের। এখানে জনসাধারণের চলাচলে বাঁধা থাকবে না। তবে সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে সামাজিক ও ব্যক্তিগত দূরত্ব মেনে চলতে হবে।
লকডান ভিত্তিক এলাকার মানুষের খাদ্য সংকট কিভাবে মোকাবেলা করা হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, নির্ধারিত ওই এলাকায় হয়তো ভ্যান গাড়ির মাধ্যমে তারা তাদের প্রয়োজনীয় বাজার সংগ্রহ করবে। তবে এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এমনও হতে পারে এসকল এলাকায় বাজার থাকলে তা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খুলে দেয়া হতে পারে। তবে এটা আলোচনা করে আমরা ঠিক করবো। আমাদের উদ্যেশ্য যেহেতু মানুষ বাঁচানো, সেক্ষেত্রে লকডাউনে তো আমরা কাওকে না খেয়ে মারা যেতে দেবো না।
উল্লেখ্য মার্চের ৮ তারিখ দেশে প্রথম করোমা রোগী শনাক্তের পর রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। ইতিমধ্যে মোট মৃত্যু হয়েছে ৮৪৬ জনের এবং আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ২৬ জনে।
আগামীনিউজ/জেএস