Dr. Neem on Daraz
Victory Day

বাড়েনি আয়, বেড়েছে পানি-বিদ্যুতের দাম


আগামী নিউজ | আগামীনিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২০, ০২:৩৫ পিএম
বাড়েনি আয়, বেড়েছে পানি-বিদ্যুতের দাম

একটি বেসরকারি ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার রুবিনা আক্তার খানম জানতে চান, ‘বছরে বেতন বাড়ে সামান্য কয় টাকা, খরচ বাড়ে চারদিক দিয়ে। তাহলে আমরা চলবো কিভাবে?’ যারা এসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তারা সাধারণ মানুষের খবর রাখেন কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি।

গত কয়েকমাস ধরে পেঁয়াজ-রসুনসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ে চরম অস্বস্তিতে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। এর সঙ্গে এবার যুক্ত হলো বিদ্যুৎ ও পানির দাম। বিশেষ করে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে চাপে পড়বেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘বিদ্যুৎ এমন পণ্য যেটার মূল্য বাড়লে সঙ্গে আরো অনেক কিছুই বাড়ে। পুরো জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। আসলে এই সেক্টরে সরকার যে ৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়, সেটা এখন আর দিতে চাচ্ছে না। এখন এই মূল্য বৃদ্ধির ফলে এই সেক্টর থেকে সরকার তিন হাজার কোটি টাকা তুলে নেবে। এতে সরকারের সার্বিক আয় খুব একটা বাড়বে বলে মনে হয় না। কারণ, মানুষের তো আয় বাড়ছে না। তাহলে সে কী করবে? খরচ কমিয়ে দেবে। কেনা-কাটা কমিয়ে দেবে। তাতে সরকার ট্যাক্স, ভ্যাট কম পাবে। দিন শেষে মানুষ কষ্টে থাকবে, সরকারের খুব একটা আর্থিক লাভ হবে না। শুধু অযোগ্য দুর্নীতিবাজরা লাভবান হবে।’

পহেলা মার্চ থেকে বিদ্যুৎ ও পানির দাম বৃদ্ধি কার্যকর হবে। ফলে চাহিদা অনুসারে সরবরাহ না মিললেও এপ্রিল থেকে গ্রাহককে পানি ও বিদ্যুতের জন্য অতিরিক্ত টাকা গুনতে হবে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি সারা দেশের জন্য প্রয্যেজ্য হলেও পানির দাম বৃদ্ধি কার্যকর হবে শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরীর গ্রাহকদের জন্য। সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটের (কিলোওয়াট/ঘণ্টা) জন্য গড়ে ৩৬ পয়সা করে বেশি দিতে হবে। ঢাকা ওয়াসার প্রতি হাজার লিটার পানিতে আবাসিকে বেড়েছে ২৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ ও বাণিজ্যিক ৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ। চট্টগ্রাম ওয়াসার আবাসিক প্রতি হাজার লিটার পানিতে ২৫ শতাংশ এবং বাণিজ্যিকে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ দাম বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের উপর।

রুবিনা আক্তার খানমের প্রশ্ন, ‘এভাবে প্রতি বছর বিদ্যুৎ-পানির দাম বাড়লে মানুষ কিভাবে চলবে?'' কিভাবে খরচ ম্যানেজ করবেন? এই প্রশ্নের জবাবে রুবিনা খানম বলেন, ‘আমাদের দৈনন্দিন যে চাহিদা আছে, সেটা কমাতে হবে। এছাড়া তো কোনো উপায় নেই। কারণ, যে আয় তার মধ্যেই তো চলতে হবে। টাকা তো আর ইচ্ছে করলেই বাড়াতে পারবো না।’

কারওয়ান বাজারের চায়ের দোকানি শাহজাহান আলী বলেন, ‘যারা চাকরি করেন, তাদের তো মাস শেষে একটা আয় আছে। কিন্তু আমরা যারা ছোট দোকানি, তাদের সমস্যা তো আরো বেশি। চা-বিস্কুট বেঁচে কয় টাকা আয় হয়? মানুষের পকেটে টাকা না থাকলে তা-ও খেতে চায় না। আমাদের আয়ও কমে যায়। দুই সন্তান আর স্ত্রী-কে নিয়ে কোনোভাবে বেঁচে আছি। এখন মনে হচ্ছে, এসব বাদ দিয়ে গ্রামে চলে যেতে হবে।’

শাহজাহানের চায়ের দোকানে তখন বসে কথা বলছিলেন রিক্সা চালক রফিকুল ইসলাম। পঞ্চাশোর্ধ এই রিক্সাচালক বলছিলেন, ‘সারাদিন রিক্সা চালিয়ে মালিকের জমা বাদে ৫শ' টাকা ঘরে নেওয়া কঠিন। গত এক সপ্তাহে চালের দাম কেজিতে ৩/৪ টাকা বেড়েছে। পেঁয়াজ খাওয়া তো ছেড়েই দিয়েছি। এখনো পেঁয়াজের দাম একশ' টাকার বেশি। এবার বিদ্যুৎ-পানির দাম বাড়লে আমরা কিভাবে বাঁচবো? আমাদের দুঃখগুলো কি দেখার কেউ নেই? আরেক রিক্সাচালক মো. খোরশেদও বলছিলেন তার কষ্টের কথা, ‘স্যার, সত্যি চলতে কষ্ট হয়। বউ-বাচ্চাদের গ্রামে রেখেছি, সব মিলিয়ে মাসে ৬-৭ হাজার টাকার বেশি পাঠাতে পারি না। মেয়েটার স্কুলের বেতনও চেয়েচিন্তে দিতে হয়। ওরা মাছ খায় সপ্তাহে একদিন। আসলেই আমাদের বাঁচা কঠিন।’

মিরপুরের শেওড়াপাড়ার শামীম সরণীর মুদি দোকানি আসলাম শেখ বলছিলেন, ‘এখন কিছু মানুষ দাম বাড়ানোর জন্য সুযোগের অপেক্ষায় বসে থাকে। বিদ্যুতের দামের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও অনেক কিছুর দামই বেড়ে যাবে। বাস ভাড়া, বাসা ভাড়া, এমনকি রিক্সা ভাড়াও বেড়ে যাবে। তাহলে সাধারণ মানুষ চলবে কিভাবে? আমাদের দোকানে বিক্রিও কমে যাবে। কারণ, মানুষের আয় তো বাড়ছে না। তারা বাসার কেনাকাটা কমিয়ে দেবে। খাওয়া কমিয়ে দেবে? তা না হলে চলবে কিভাবে? এভাবেই বাঁচতে হবে সাধারণ মানুষকে।’সূত্র : ডয়চে ভেল।

আগামীনিউজ/মাসুম

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে