ঢাকাঃ প্রতিষ্ঠার ২২ বছরে সিঙ্গাপুরে পাচার হাওয়া আরাফাত রহমান কোকোর ২০ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা (সিঙ্গাপুর ডলার) ছাড়া কোনো অর্থ ফেরত আসেনি বলে জানিয়েছে অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধের কেন্দ্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তবে অর্থপাচাররোধে ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানিয়েছেন বিএফআইইউর প্রধান মাসুদ বিশ্বাস।
সংবাদ সম্মেলনে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। বিএফআইইউ জানিয়েছে, গেল ২০২২-২৩ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে ১৪ হাজার ১০৬টি। এক বছরে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৬৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ বা ৫ হাজার ৫৩৫টি। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৫৭১টি এবং ২০২০-২১ ছিল ৫ হাজার ২৮০টি। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এমন লেনদেন ও কার্যক্রম হয়েছিল ৩ হাজার ৬৭৫টি। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এমন লেনদেন ও কার্যক্রম হয়েছিল ৩ হাজার ৫৭৩টি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সব সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) অপরাধ নয়। লেনদেন সন্দেহজনক হলে তদন্ত করি। এরপর যদি কোনো অপরাধের প্রমাণ মিলে তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই।
বিএফআইইউর প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের ৮০ শতাংশ হয় ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংক যদি এটি বন্ধে সহযোগিতা না করে তাহলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। কারণ একবার মানি লন্ডারিং হয়ে গেলে তা ফেরত আনা যায় না। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা ও সহযোগিতার জন্য ১০ দেশের সঙ্গে এমওইউর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এখন পর্যন্ত বিদেশে পাচার হওয়া কত টাকা ফেরত আনতে পেরেছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, মানি লন্ডারিং একটা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম। এখানে বহু পক্ষ জড়িত থাকে, বহু দেশ জড়িত থাকে। আমাদের দেশের আইন আর অন্য দেশের আইন এক নয়। আমরা কিছু আছি সিভিল ল’ কান্ট্রির দেশ, কিছু আমি কমন ল’ কান্ট্রির দেশ। এটা নিয়েও ভাববার আছে।
তিনি বলেন, একটা উদাহরণ আমাদের কাছে আছে, সিঙ্গাপুরে পাচার হওয়া ২০ লাখ ৪১ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার আমার ফেরত এনেছি। এটা কোকোর (আরাফাত রহমান) টাকা ছিল।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, বিএফআইইউর তথ্যের ভিত্তিতে অর্থ পাচারের মামলা হয়েছে ৫৯টি। এর মধ্যে দুদক মামলা করেছে ৪৭টি, সিআইডি ১০টি এবং এনবিআরের বিশেষ সেল ২টি। এগুলো এখনো এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
বিএফআইইউ প্রধান বলেন, একবার যদি মানি লন্ডারিং হয়ে চলে যায়, সেটা ফিরিয়ে আনা খুব কঠিন। সেটা আর ফিরে আসে না। আমরা ২০১২ সালে এমএলএ-অ্যাক্ট করেছি। আমরা ১০টি দেশে এমএলএ করার জন্য প্রস্তাবনা দিয়েছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটা নিয়ে কাজ করছে।
বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরো অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৮০৯টি সন্দেহজনক লেনদেনের রিপোর্ট জমা দিয়েছে ব্যাংকগুলো। তার আগের অর্থবছরে ৭ হাজার ৯৯৯টি রিপোর্ট জমা দিয়েছিল ব্যাংকগুলো। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো রিপোর্ট জমা দেয় ১২১টি। আর এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো ৯০০ রিপোর্ট জমা দিয়েছে।
এমআইসি/