ঢাকাঃ প্রায় ২২ বছর আগে আনসার সদস্যকে গুলি করে হত্যা ও পুলিশ সদস্যকে হত্যাচেষ্টার আসামি শুক্কুর আলী সোহেল সোহাগকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এর আগে রোববার সাভার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানায়, ২০০২ সালের ১২ মার্চ রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শ্যামলী এলাকায় ছিনতাইকারীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন আনসার সদস্য ফজলুল হক। একই সঙ্গে হত্যাচেষ্টা করা হয় এক পুলিশ সদস্যকেও। সে সময় তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আনসার সদস্যকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল আকমান হোসেন বাদী হয়ে রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় তিনজনের নামে একটি হত্যা মামলা করেন।
২০১৯ সালে ওই মামলার তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পরোয়ানাও জারি করেন। এছাড়া ওই মামলায় পুলিশ কনস্টেবল আবদুল জলিল ফরাজীকে হত্যাচেষ্টার দায়ে শুক্কুর আলী ওরফে সোহেলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাস সশ্রম কারাদণ্ডে দেন আদালত। কিন্তু রায় ঘোষণার পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন।
কী ঘটেছিল সেদিন?
ঘটনার দিন দুপুরে শুক্কুর আলী দুই সহযোগীকে নিয়ে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে রাজধানী মোহাম্মদপুরের শ্যামলী এলাকায় ‘দূর-দূরান্ত’ নামের একটি বাস কাউন্টারের সামনে অবস্থান করেন। শুক্কুর আলী ও তার সহযোগীরা মিলে অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। তখন কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল আকমান হোসেন, কনস্টেবল আব্দুল জলিল ফরাজী ও আনসার সদস্য ফজলুল হক দ্রুত ঘটনাস্থলে যান ও ছিনতাইকারী শুক্কুর আলীসহ ৩ জনকে আটকের চেষ্টা করেন। কিন্তু শুক্কুর আলী ও তার সহযোগীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের কাছে থাকা রিভলভার দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর এলোপাথাড়ি গুলি করেন। এতে আনসার সদস্য ফজলুল হক গুলিবিদ্ধ হন এবং একজন পুলিশ সদস্যকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম হন। এ সময় অপর পুলিশ সদস্য আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি করলে শুক্কুর আলী ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, শুক্কুর আলী ১০ বছর বয়স থেকেই বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়েন। পরে তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা, অপহরণ ও মাদক কারবারসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতেন। আনসার সদস্য ফজলুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে প্রায় সাড়ে ৩ বছর কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনি। শুক্কুর আলী চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। গ্রেফতার এড়াতে বিভিন্ন সময়ে ছদ্মবেশ ধারণ ও নাম পরিবর্তন করে কিছুদিন পরপর অবস্থান পরিবর্তন করতেন। তার বিরুদ্ধে মাদক সংক্রান্ত মামলায় প্রায় ৪ বছর, অস্ত্র সংক্রান্ত মামলায় প্রায় ৫ বছর ও অপহরণসহ বিভিন্ন মামলায় সাজা হয় এবং তিনি কারাভোগ করেছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৫টির বেশি মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এমআইসি/