ঢাকাঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ের পাশ থেকে চোখ উপড়ানো অবস্থায় উদ্ধারকৃত মরদেহের পরিচয় মিলেছে। তার নাম ফারুক হোসেন (২৬)। তিনি ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহণে কাজ করতেন। পরিবার নিয়ে থাকতেন তুরাগের বাউনিয়া এলাকায়। সেই সাথে এ ঘটনার নেপথ্যের ঘটনা উম্মোচনসহ মূল পরিকল্পনাকারীসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তাদের গ্রেফতারের পর বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। হত্যাকারীরা অকপটে জানিয়েছে, এ হত্যার কারণ ও কীভাবে তারা হত্যার মিশন সফল করেছিলেন।
এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নিজাম উদ্দিন (৩৬), সোহাগ (৩৮), জহিরুল ইসলাম (৪৮), রনি হোসেন (২৩) ও বাদশা (২৩)। বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুরের টঙ্গী ও লক্ষীপুরের রায়পুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে র্যাব।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে এসব বিষয় জানান র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, গত ৯ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ে রাস্তার পাশে একটি চোখ উপড়ানো অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মরদেহের সাথে থাকা মানিব্যাগে বিভিন্ন নথিপত্র এবং আঙুলের ছাপ দেখে পরিচয় শনাক্ত করা হয়। তাতে তিনি ফারুক হোসেন বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। তিনি চাঁদপুর জেলার আব্দুল বারেক শেখের ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার রূপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। সেই মামলায় হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরও জানান, হত্যার শিকার ফারুক হোসেন (২৬) স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সাথে রাজধানীর তুরাগের বাউনিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তিনি গাজীপুরের টঙ্গী চেরাগআলী এলাকায় ঢাকা এক্সপ্রেস নামের পরিবহনের ‘টিকিট কাউন্টার ম্যান’ হিসেবে বেশ কিছুদিন কাজ করতের। টঙ্গী চেরাগআলী এলাকায় বাসের টিকিট বিক্রির লভ্যাংশ দিয়ে নিজের ও পরিবারের খরচ চালাতেন। গত ০৮ জানুয়ারি সকালে ফারুক কাজের জন্য বাসা থেকে বের হয়ে টঙ্গী চেরাগআলী বাসস্ট্যান্ডে যান। প্রতিদিনের ন্যায় নির্দিষ্ট সময়ে বাসায় না ফিরলে তার মাসহ পরিবারের লোকজন তাকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে ফোন বন্ধ পায়। এ সময় তার পরিবারের লোকজন তাকে সম্ভব্য সকল জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান পায়নি। পরে গত ৯ জানুয়ারি ঘটনাস্থলে পৌঁছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ফারুকের শনাক্ত করেন।
র্যাবের মিডিয়া বিভাগের পরিচালক জানান, ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার হিসেবে কাজ করায় ফারুকের সাথে পরিচয় ও সম্পর্ক তৈরি হয় নিজাম নামে একজনের। পরে গ্রেফতারকৃত নিজাম উদ্দিনের সাথে ফারুকের বিভিন্ন লেনদেনের কারণে সম্পর্কের অবনতি হয় এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। গত ৮ জানুয়ারি গ্রেফতারকৃত নিজাম উদ্দিনের কাছে ফারুক পাওনা টাকা চান। এতে তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে ফারুকের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন নিজাম।
যেভাবে হত্যা করা হয় ফারুককে:
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত সোহাগ, জহিরুল, রনি ও বাদশাসহ আরও কয়েকজনের সাথে পরিকল্পনা করেন মূলহোতা নিজাম। পরিকল্পনা অনুযায়ী সকালে গ্রেফতারকৃত নিজাম মোবাইলে ফোনে ফারুককে টাকা নেওয়ার জন্য কাউন্টারে আসতে বলেন। ফারুক টাকা নিতে কাউন্টারে গেলে গ্রেফতারকৃত নিজামের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে গ্রেফতারকৃত সোহাগ, জহিরুল, রনি ও বাদশা ভিকটিমকে মারধর করেন। এক পর্যায়ে নিজামের নির্দেশে তারা ফারুককে জোরপূর্বক ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনের একটি খালি বাসে তুলে নেয়। এরপর পুনরায় ফারুকের শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেশিয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে গুরুতর জখম করেন তারা। এ সময় সোহাগ ও রনি ভিকটিম ফারুকের হাত-পা চেপে ধরে এবং গ্রেফতারকৃত বাদশা বাসে থাকা টুলবক্স থেকে স্ক্রু ড্রাইভার নিয়ে ফারুকের বাম চোখ উপড়ে ফেলেন। এক পর্যায়ে ফারুকের মৃত্যু নিশ্চিত হলে গ্রেফতারকৃতরা হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ফারুকের মৃতদেহটি বাসে নিয়ে কুড়িল ফ্লাইওভার হয়ে পূর্বাচল ৩০০ ফিট রোড এলাকায় চলে যান। সেখানে ঘুরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ে পাশে রঘুরামপুর এলাকার নির্জন রাস্তার পাশে মরদেহটি ফেলে বাসটি নিয়ে লক্ষীপুরের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায় তারা।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
এমআইসি/