ঢাকা : সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের শনিবারের মধ্যে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দিলেন সাংবাদিক নেতারা।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই আল্টিমেটাম দেয়া হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে ডিইউজে সভাপতি আবু জাফর সূর্য বলেন, ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় সাংবাদিক নির্যাতনের পরও বিচার পাইনি। আমরা অনশন পালন করেছিলাম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু তিনি কথা রাখেন নাই। এ যাবত যত সাংবাদিক নির্যাতন হয়েছে কোনোটার বিচার কখনো দৃশ্যমান হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা। সুশাসন, গণমন্ত্র সুরক্ষার জন্য সাংবাদিক সুরক্ষা দরকার। আগামী শনিবারের মধ্যে সাংবাদিক নির্যাতনে জড়িতদের গ্রেফতার করতে হবে। আহত সাংবাদিকদের কল্যাণ তহবিল থেকে চিকিৎসা খরচা দিতে হবে। আগামী শনিবারের মধ্যে বিচার না পেলে রবিবার স্বরাষ্ট্র ও তথ্য মন্ত্রণালয় বরাবর কালো স্মারক লিপি দেয়া হবে।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘নির্যাতিত সাংবাদিকদের অপরাধ তারা সত্য সংবাদ সংগ্রহের কাজ করতে নেমেছিল। বাক স্বাধীনতার জন্য, গণতন্ত্র ও মানবতার জন্য সাংবাদিকরা লড়াই করে আসছে। কিন্তু আমরাই মার খাচ্ছি। যে কারণে গণমাধ্যমকর্মী আইন আজো পাস করা হয়নি। ওয়েজবোর্ড পাস করা হলেও তা কার্যকর করা হয়নি। আমরা পদে পদে নির্যাতিত হচ্ছি সব ক্ষেত্রেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিনীত অনুরোধ, কয়েক দিনের মধ্যে সাংবাদিক নির্যাতনকারী, হেনস্তাকারী, হামলাকারীদের গ্রেফতারে কার্যকরী পদক্ষেপ নেবেন।’
ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল খায়ের বলেন, ‘সাংবাদিকদের হামলা করাটা যেন সহজ হয় গেছে। স্বাধীনতার পর থেকে যত সাংবাদিকদের নির্যাতন, হেনস্তা, হত্যা করা হয়েছে কোনোটার বিচার হয়নি। আমরা চাই বিচার হোক। আশা করছি দ্রুত আসামিরা গ্রেফতার হবেন।’
ডিআরইউর সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শুক্কুর আলী শুভ বলেন, ‘সাংবাদিকরা নিউজ কাভার করতে গিয়ে কারো প্রতিপক্ষ হতে চান না। সত্যটিই তুলে ধরেন।’ আগামীতে যেন সাংবাদিকরা পেশাগত কাজ নিরাপত্তার সঙ্গে করতে পারেন। সে লক্ষ্যে জড়িতদের গ্রেফতারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, ‘সরকার যেসব ঘটনা সিরিয়াসলি নিয়েছে সেসবের বিচার হয়েছে। সম্প্রতি সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যেন জেগে জেগে ঘুমাচ্ছেন। আমরা বিশ্বাস করি সরকার সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার করবে এবং অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতরা গ্রেফতার হবেন।’
রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতি, ঢাকার সভাপতি মোকসুদার রহমান মাকসুদ অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেন, ‘মোস্তাফিজুর রহমান সুমনকে যেভাবে কোপানো হয়েছে তা কোনোভাবে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। রাষ্ট্রযন্ত্র আমাদের নিরাপত্তা দিতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে।’
নির্যাতিত সাংবাদিক উজ্জ্বল হোসেন জিসান বলেন, ‘ইসির ইস্যুকৃত বৈধ কার্ড নিয়েও হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে, শার্টের কলার ধরে টেনে বের করে দিয়েছে, মোবাইল কেড়ে নিয়েছে। এলাকা ছেড়ে চলে যাবার শর্তে মোবাইল ফিরিয়ে দিয়েছে। মাথা নিচু করে আমাকে ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে। এটা সাংবাদিক হিসেবে আমার জন্য লজ্জার। আমি এখন ট্রমার মধ্যে আছি।’
রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন, ‘একজন সাংবাদিককে কোপানো হবে আবার হাসপাতালে গিয়ে হুমকি দেয়া হবে এটা পুরো সাংবাদিক সমাজের জন্য লজ্জা। আমি মনে করি বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার সময় এসেছে।’
ডিইউজের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেনের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাব এডিটরস কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি নাছিমা আক্তার সোমা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, ডিইউজের সাবেক জনকল্যাণ সম্পাদক মেহেদি হাসান।
আগামীনিউজ/এআর/এস/এনএনআর