1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

মৌলবাদের সমাবেশ দেখে যারা ভীত তাদের জন্য তাৎক্ষনিক ভাবনা

ড. মঞ্জুরে খোদা (টরিক) প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৮, ২০২০, ০৪:৩৩ পিএম মৌলবাদের সমাবেশ দেখে যারা ভীত তাদের জন্য তাৎক্ষনিক ভাবনা
ছবি: আগামী নিউজ

ঢাকাঃ আমাকে অনেকে ইনবক্সে কাঠমোল্লা ও মৌলভীদের বিশাল মিছিল-সমাবেশের ছবি-ভিডিও পাঠান। এটা পাঠিয়ে তারা আমাকে বোঝাতে চান দেশে ধর্মান্ধ-মৌলবাদীদের অবস্থান, বিস্তার কতটা ভয়াবহ ও আতংকজনক। আমি সে সব বন্ধুদের বলছি, বাংলাদেশে মৌলবাদের বিপদ ও ধর্মভিত্তিক শিক্ষার একজন গবেষক হিসেবে শুধু এটুকু বলি, আমি এ বিষয়ে অবগত। এবং এ বিষয়ে সবসময় খোজ-খবর রাখতে চেষ্টা করি। আর জানি বলেই আমার লেখালেখি, বলাবক্তব্যে সে বিপদটা তুলে ধরি।

আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের মানুষ ঐতিহ্যগত ও ঐতিহাসিকভাবে অসাম্প্রদায়িক ও খোলা মনের মানুষ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের আবহমান কালের সংস্কৃতি। সাম্প্রদায়িকতার যে বিপদজনক ঘটনাগুলো ঘটেছে তার প্রায় সবই রাজনৈতিক দূরভিসন্ধি থেকে ও রাজনৈতিক কারণে। বর্তমানেও যে ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিপদ-ঝুকি তৈরী হয়েছে’ তার পুরোটাই রাজনৈতিক কারণেই ঘটছে। সাধারণ শান্তিপ্রিয়, গণতন্ত্রমনা মানুষ এগুলো চায় না, পছন্দ করে না। সেটা বলছি এই যুক্তিতে- ভালমন্দ যাইহোক দেশের মূলধারার প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো উদারগণতান্ত্রিক মতাদর্শের। কিন্তু এদের ক্ষমতাকেন্দ্রীক অপরাজনীতিই এই অবস্থা তৈরী করেছে।

জনগন এই বিষয়টি জানলেও, উপলব্দি করলেও এই অচলায়তন থেকে বেরুতে পারেনি এবং একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। এ কারণে এই মতাদর্শের সমর্থকদের বৃহৎজনগোষ্ঠী অসংগঠিত ও বিচ্ছিন্ন। এর বাইরে তারা তাদের স্বার্থের পক্ষে কোন রাজনৈতিক দলকে বেছে নিতে পারেনি, বা তাদের স্বার্থের পক্ষে কোন কার্যকর রাজনৈতিক দল গড়ে তুলতে পারেনি। এই শূন্যতায় ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে মানুষ অসহায়, আতংকিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ়।

মৌলবাদী কাঠমোল্লাদের ঐদ্ধত্য, হুঙ্কার, বিস্তার ও ব্যপকতা দেখে আপনারা আতংকিত হন, আমিও আতংকিত হই, কিন্তু অবাক হই না। তারা যা করছে তা তাদের দাগানো ছক ধরেই করছে। আমরাই দাগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি, বিভক্ত হয়ে আছি। তবে কোনভাবে কোনদিন যদি মানুষ উপযুক্ত নেতৃত্বে ও পরিকল্পনায় ঘুরে দাড়ায় তাহলে পরিস্থিতি পাল্টাতে মুহুর্ত সময় লাগবে না। তার সকল উপদানই আমাদের সমাজ, কাঠামো ও ঐতিহ্যে বিদ্যমান আছে। আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোয় যে বিশাল জনগোষ্ঠী ক্রীয়শীল আছেন, তাদের একটি অংশ যদি এ প্রশ্নে কখনো ঘুরে দাড়ায়, তাহলে ধর্মান্ধ-সাম্প্রদায়িক শক্তি আর মাথা তুলে দাড়াতে পারবে না। সাহসও করবে না। তার সাথে রাজনৈতিক ও ক্ষমতার কাঠামোয় পরিবর্তনও অত্যাসন্ন হবে।

মৌলবাদ মোকবেলার ‘একটি তাৎক্ষনিক বিকল্প প্রতিরোধ’ কেমন হতে পারে সে ভাবনাই এখানে তুলে ধরেছি। যে আলাপ আপাত বায়বিয় হলেও সে সম্ভবনার ভাবনা জনমনে কিছুটা স্বস্তির কারণ ও সাহস হতে পারে।

ইসলামী দলগুলোর শক্তি ও ভিত্তি কোথায়?

বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর বেশির ভাগের কার্যক্রম পরিচালিত হয় কওমি মাদ্রাসাগুলো থেকে। এই দলগুলোর অন্যতম ইসলামী ঐক্যজোটের জোটভুক্ত সাতটি দল, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস (ইসহাক), খেলাফতে ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতাকর্মী সবাই কওমি মাদ্রাসার। যে যত বড় মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রক সে তত বড় নেতা। যে নেতার মাদ্রাসায় যত বেশি ছাত্র, তিনি তত বেশী ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী।

ইসলামী ঐক্যজোটের কার্যালয় লালবাগ জামেয়া আরাবিয়া কোরানিয়া মাদ্রাসায়। দলটির শীর্ষ নেতাদের সবাই এ মাদ্রাসার শিক্ষক। খেলাফত আন্দোলনের কার্যালয় কামরাঙ্গীরচরের জামেয়া নূরানী মাদ্রাসায়। এ দলটির নেতারাও এই মাদ্রাসার শিক্ষক। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা দলীয় কর্মী। বাংলাদেশে খেলাফত মজলিসের পল্টনে একটি দুই কামরার কার্যালয় থাকলেও মোহাম্মদপুরের জামিয়া রহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে দলের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। খেলাফতে ইসলামের কার্যক্রম পরিচালিত হয় লালবাগ মাদ্রাসা থেকে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পরিচালিত হয় ফরিদাবাদের মাদ্রাসা থেকে। এসব দলের জেলা কার্যালয়ও ওই সব জেলার বিভিন্ন মাদ্রাসায় অবস্থিত। যেমন ময়মনসিংহের জমিয়া ইসলামী মাদ্রাসা ব্যবহৃত হয় ইসলামী ঐক্যজোটের কার্যালয় হিসেবে। ধর্মভিত্তিক সর্ববৃহৎ সংগঠন হেফাজতে ইসলামও পরিচালিত হয় চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে। সংগঠনের মহানগর, জেলা ও উপজেলা শাখার কার্যক্রম পরিচালিত হয় ওই সব এলাকার মাদ্রাসাগুলো থেকে।

তাদের মিছিল-সমাবেশে জমায়েতের উৎস কি?

দেশে এখন কওমী মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ২০-২৫ হাজার। এবং এ সব মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী, ব্যবস্থাপক, সহযোগী মিলে তাদের লোকবলের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখের কাছাকাছি। এখানকার শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, নীতি-আদর্শ এই রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও নীতি-আদর্শের অভিন্ন। এবং তাদের নেতাও একই, কোন ভিন্নতা নেই। কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর জমায়েতের উৎস-ভিত্তি হচ্ছে এই মাদ্রাসাগুলোই। এখানকার সকল শিক্ষার্থীর তাদের যে কোন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অংশগ্রহন বাধ্যতামুলক। এবং এটা তাদের শিক্ষা ও তালিমের অংশও।

এখানে অন্য কোন সংগঠন নেই, সেটা করার সুযোগ-অধিকার নেই। অধিকাংশ মাদ্রাসাই আবাসিক এবং নিয়ন্ত্রিত। তাদের শিক্ষা, শিক্ষাক্রম, সংগঠন ও নেতা একই বলয়ের সবাই। এই লাখ-লাখ কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীই হচ্ছে তাদের লোকবল ও জমায়েতের প্রধান উৎস ও ক্ষেত্র।

এ জমায়েত, শক্তি উৎপাদন ও ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রধান কাজগুলোই মাদ্রাসায় পরিকল্পিতভাবে যুগযুগ ধরে হয়ে আসছে। নেতারা বসে সিদ্ধান্ত নেবে, সঙ্গে সঙ্গে সে সিন্ধান্ত চলে যাবে তাদের নিয়ন্ত্রিত-পরিচলিত সকল মাদ্রাসায়। আর তাদের অনুগত ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীরা দল বেঁধে কোন প্রশ্ন না করে ঈমানী দায়িত্ব পালনে, ইসলামী জোসে মিছিল-সমাবেশে হাজির হয়ে যাবে। তাদের জমায়েতের বিষয়টি খুব পরিষ্কার ও হিসেবে করা- মাদ্রাসার সংখ্যা ও লোকবল অনুযায়ী। এ জন্য আগাম বা বাড়তি কোন প্রস্ততি নিতে হয় না। কাউকে অনুরোধ করতে হয় না।

শ্রেনীপেশার মানুষের মধ্যে ধর্মান্ধদের কোন সংগঠন নেই

জামাতে ইসলামী বাদে এসব ইসলামী দলগুলোর শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে কোন উল্লেখযোগ্য সংগঠন নেই। বিশেষ করে শ্রমজীবী-কর্মজীবী নারীদের মধ্যে তাদের কোন অবস্থান নেই। কেন নেই, সে বিষয়ে কোন ঘোন আলাপে যাব না। শুধু এটুকো বলি, নারীদের নিয়ে তাদের বলা-বক্তব্য দেখলেই বুঝতে পারবেন তাদের অবস্থান কি। তাদের ভাষায় নারীদের ঘরে ও পর্দার ভিতর রাখতে হবে। নারীরা হচ্ছে সন্তান উৎপাদনের শষ্যক্ষেত্র। নারী হচ্ছে ঘরের শোভা বাইরের জন্য নয়। তারা নারীদের স্বামীর টাকা গোনা অবধি লেখাপড়াকে সমর্থন করে। মানে ৪-৫ ক্লাস পর্যন্তই যথেষ্ট। হেফাজতের প্রয়াত নেতা আল্লামা শফি প্রকাশ্যেই এমন মত প্রচার করেছেন। স্বভাবতই দেশের নারীসমাজ তাদের এ মতকে গ্রহন করে না। আরো এমন অজস্র তাদের বলাবক্তব্য, তথ্যপ্রমান পাবেন।

কওমীর তাই পেশাদার নারী মুফতি, মুয়াজ্জিন, ইমাম, শিক্ষক পাবেন না। তাদের কোন মিছিল-সমাবেশে নারীদের পাবেন না। মঞ্চের বক্তৃতায় নারীদের পাবেন না। তাদের দলীয় ও রাজনৈতিক কাঠামোতে নারীদের পাবেন না।

এই ধর্মান্ধরা নারীদের অফিস-আদালতে, কলে-কারখানায়, প্রতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজ করাকে সমর্থন করে না। তাদের ব্যবস্যা-বাণিজ্য সমর্তন করে না। তাদের স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়নকে সমর্থন করে না ইসলাম বিরোধী মনে করে। নারী-পুরুষের সহশিক্ষা, সহকর্মকে সমর্থন করে না। মোটকথা নারীদের সামাজিক, রাজনৈতিক, সংস্কৃতিক, ক্রীড়া, সেবা কোনখাতের অংশগ্রহন সমর্থন করে না। এগুলোকে তারা নাজায়েজ মনে করে। এ কারণেই শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে তাদের কোন সংগঠন নেই। শ্রমজীবী মানুষের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই।

এবার একটু ভিন্ন চিত্র কল্পনা করুণ

হেফাজত ইসলামী কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনগুলোর একটি জোট। কওমীর অবিভাবক সংগঠন। এবং এই সংগঠনের সাথে সকল ইসলামী দলের সম্পৃক্ততা আছে। তারা দেশে ইসলামী সমাজ ও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এটা তাদের কোন গোপন মিশন না, অনেকভাবে তারা তা প্রকাশ করেছে, এবং সে ছকে কাজও করছে। তারা সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যে তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পরিকল্পিত প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সে কাজ করছে।

কওমীর এই কাঠামোর বিপরীতে আমি দেশের গণতান্ত্রিক বিভিন্ন শ্রম, কর্ম ও শিক্ষাক্ষত্রকে তাদের সাথে একটি তুলনামুলক কাঠামোগত আলোচনা হাজির করেছি। আগেই বলেছি, এটি এ ধরণের ভাবনাগত আলাপ, এখানে অনেক যদি, কিন্তু, বা আছে। তবে আমি মনে করি যে কোন আলোচনা করতে সমস্যা নেই। পিঠ দেয়ালে ঠেকলে কি হবে তা বলা যায় না। কোথাকার জল কোথায় গড়াবে তা বলা মুশকিল। মানুষের বেঁচে থাকার আকাঙ্খার উপরই নির্ভর করবে তারা কোন সামাজিক পরিবেশে বাস করবে। পৃথিবীকে কোন শাসক ও পরিবেশই মানুষের চাওয়ার বাইরে তৈরী হয়নি, টিকে থাকেনি। ভবিষ্যতেও তা হবে না।

১। বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার ধারা উদারগণতান্ত্রিক মতাদর্শের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। এ শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে সরাসরি কোন দল-জোটকে রাজনীতি করার অধিকার আমাদের সংবিধান কাউকে দেয়নি। যদি দিতো তাহলে হয়তো তার চিত্র-চরিত্র কওমীর অনুরুপ হতো। সে কারণে মনে হলো হেফাজত যেভাবে কওমীর শক্তি নিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করছে, দেশে ইসলামী শাসন কায়েমের কথা বলছে, তাহলে তার বিপরীতে উদারগণতন্ত্রীদের সে অধিকার-হক তৈরী হয় বাংলাদেশের সাধারণ ধারার শিক্ষার্থীদের নিয়ে কওমীর বিপরীতে পাল্টা ক্যাম্পেইন করার। ধরলাম উদারগণতন্ত্রীরা বা সরকার (আমি যে কোন সরকারের কথা বলছি) ঢাকার বা অনুরুপ বিভিন্ন বিভাগে-জেলায় সাধারণ শিক্ষার ধারার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে নানা ইস্যুতে মিছিল-সমাবেশ করে তাহলে অবস্থাটা কি দাড়াবে, ভেবে দেখেছেন? শুধু ঢাকা শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হিসেবেটাই করে দেখেন, কল্পনা করেন, কি অভাবনীয় অবস্থা-পরিবেশটা হবে সেদিন ঢাকা শহরে। দেশে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা লক্ষ্যাধিক ছাত্রসংখ্যা প্রায় সারে চার কোটি। এর অর্ধেক ছাত্রছাত্রীর মিছিল-সমাবেশে বিস্তৃতি ও পরিধি কতদূর ব্যাপক হতে পারে তা একটু কল্পনা করুণ!

তাহলে যারা কওমীর জমায়েত দেখে ভয় পাচ্ছেন, তারা বুঝতে পারছেন না, সমাজে তার বিপরীত কি চিত্র-চরিত্র, শক্তি ও সামর্থ প্রবলভাবে বিদ্যমান। মূল বিষয় অসংগঠিত শক্তি শতগুন বৃহৎ হলেও তা চোখে পরে না, দৃশ্যমান হয় না বলে তারা শক্তিহীন, ক্ষমতাহীন থাকে। মৌলবাদের বিরুদ্ধে যদি এই অবস্থা কোন ভাবে তৈরী হয়, সেই শক্তিই যথেষ্ট তাদের মোকাবেলা করার জন্য।

২। এবার দেখা যাক শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা; বিশেষত শ্রমজীবী-কর্মজীবী নারীদের কথাই যদি বলি। বিজিএমইএ’র তথ্য মতে দেশে গার্মেন্টস সেক্টরে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ৪০ থেকে ৪২ লাখ। যে শিল্প দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই শিল্প মূলত ঢাকাকেন্দ্রীক এবং এর ৭০ ভাগ নারী শ্রমিক। ঢাকায় গর্মেন্টস মালিক-শ্রমিকরা যদি মৌলবাদ বিরোধী সমাবেশের ডাক দেয় আর সেখানে যদি ৪২ লাখ শ্রমিকের অর্ধেক ২১ লাখও একদিকে হাটা দেয় তাহলে তাহলে অবস্থাটা কি হবে ভাবুন। তাদের সামনে এই কাঠমোল্লারা টিকবে, থাকবে? থাকবে না।

৩। এবার একটু পরিবহন খাতকে নিয়ে এমন কল্পনা করি। বাস-ট্রাক-ভ্যান-মটরগাড়ীতে নিয়োজিত শ্রমশক্তির সংখ্যা পরিবহন সংস্থার তথ্য মতে, প্রায় ৯০ লাখ। ( ৪ লাখ গাড়ি, ৩ লাখ ট্রাক, একলাখ বাস) এর ৩ ভাগের ১ ভাগও যদি এই জঙ্গীবাদ-মৌলবাদ বিরোধী অবস্থান নিয়ে পথে নামে পরে কি সেটাও হবে এক নজীরবিহীন অবস্থা। শাপলার জমায়েত থেকে যারা এখনও চোখ থেকে সরাতে পারছেন না, তারা কল্পনাও করতে পারবেন না তা হবে কতটা বিস্তৃত এক মহাজনসমুদ্র!

৪। ঢাকা শহরে হকার, ছিন্নমূল, বস্তিবাসী হিসেবে নেন। তাদের সংখ্যা হবে প্রায় ৩০ লাখ।

৫। কৃষক-ক্ষেতমজুরদের মধ্যে তাদের সংগঠন নেই। বাংলাদেশে প্রায় ৬৫-৭০ ভাগ মানুষ কৃষিকাজের সাথে যুক্ত। সে শ্রমশক্তির হিসেব এখানে নাই আনলাম।

৬। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ যেমন শিক্ষক, ডাক্তার, উকিল, প্রকৌশলী, চাকুরীজীবীদের মধ্যে তাদের ব্যাপক অবস্থান ও সংগঠন নেই।

৭। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নারী, শিশু, মানবাধিকার, স্বেচ্ছাসেবী, এনজিও, সংগঠন, লেখক, বুদ্ধিজীবী, মুক্তমনারা যদি পথে নেমে আসে সে সংখ্যাও কম হবে না।

৮। আর যদি দেশের ডান-বাম গণতান্ত্রিক দলগুলো তাদের ভুল-সংকির্ণতা বুঝতে পেরে, আসন্ন সমুহ বিপদ মোকাবেলায় এক জায়গায় দাড়ায় পারে তাহলে বর্তমান জনশঙ্কা দূর করা হবে সময়ের ব্যাপার মাত্র। কর্ষণ ও যত্নের অভাবে আগাছা মূল গাছকে ঘিরে ফেলেছে, একবার নাড়া দিলেই সব আগাছা ঝরে যাবে, কারণ আগাছা নিজের শক্তিতে দাড়াতে অক্ষম।

মৌলবাদী শক্তি এতটা দৃশ্যমান হবার কারণ তারা সংগঠিত। আগেই বলেছি, বৃহৎশক্তি শতগুন, হাজারগুন অধিক হলেও তা যদি হয় অসংগঠিত সেটা কখনোই শক্তি হয়ে উঠবে না, কোন ভূমিকা রাখতে পারবে না।

মৌলবাদ এখনও আমাদের দেশে কোন সামাজিক শক্তি হয়ে ওঠেনি। আমাদের সামাজিক ভাবাদর্শ এখনো তাদের পক্ষে নয়। তবে ক্রমশ তারা সে অবস্থা তৈরী করতে তৎপর। তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা কতটা দূর্বল তার একটা উদাহরণই যথেষ্ট। স্বাধীনতার পর দেশের ৪টি গ্রহনযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল তুলে ধরছি। যে চারটি নির্বাচন হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক (১৯৯০, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮) সরকারের অধীনে। সে হিসেবে জামাতে ইসলামসহ দেশের সকল ইসলামী দলে ভোট যোগ করলে দাড়ায় ৭-১০ শতাংশ। সে ভোটের হিসেবটাও ছিল জোট-মহাজেটের শরীক হিসেবে। এককভাবে এর পরিমান হয়তো আরো কম হতো।

দেশে মৌলবাদের বিকাশ-বিস্তার ঘটছে, তাকে অস্বীকার করার সুযোগ-প্রয়াস এখানে নেই। মানুষের ধর্ম বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে তারা ক্রমশ একটি উদারগণতান্ত্রিক সমাজের পরিবেশকে বিপদগ্রস্থ করছে। এবং দেশে একটি মৌলবাদী রাষ্ট্রের ঝুকির সৃষ্টি করছে। শাসক যদি তার ক্ষমতার সমীকরণে এই মরণখেলা থেকে বেড়িয়ে না আসে তাহলে সামাজিক, নাগরিক ও বিকল্প রাজনৈতিক উদ্যোগের কোন বিকল্প-অন্যথা নেই।

ড. মঞ্জুরে খোদা টরিক, লেখক, গবেষক ও অনলাইন এ্যাক্টিভিষ্ট

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner