ঢাকাঃ ৫ লাখ ৬০ হাজার শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ, সুরক্ষা ও সাঁতার সুবিধা দেওয়া হবে। এজন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। রবিবার (১২ জুন) এ প্রকল্পের উদ্বোধন হবে।
‘সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশু যত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং শিশুর সাঁতার সুবিধা প্রদান‘ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সমাজভিত্তিক শিশু যত্ন কেন্দ্র স্থাপন ও শিশুদের সাঁতার শেখানোসহ অভিভাবকদের সচেতন করা হবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে, যা শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আবেগিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মত সংশ্লিষ্টদের। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্যেমে সারা দেশের ১৬টি জেলার ৪৫টি উপজেলায় ৮ হাজারটি শিশু যত্ন কেন্দ্র পরিচালনা করা হবে।
ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে কাল সকালে প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭১ কোটি ৬১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিজ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউট, যুক্তরাজ্যের অনুদান ৫৪ কোটি ২০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। বাকি ২১৭ কোটি ৬১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়িত হবে।
প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেছেন, সুষ্ঠু শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক ও আবেগীয় বিকাশের জন্য শিশুদের জীবনের প্রথম আট বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে শিশুর শিক্ষা ও বিকাশের ভিত্তি রচিত হয়। গর্ভাবস্থা থেকেই মা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি চালু করেছে। সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশু যত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে ৫ লাখ ৬০ হাজার শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ, সুরক্ষা ও সাঁতার সুবিধা দেওয়া হবে।
প্রকল্পের পটভূমি থেকে জানা গেছে, শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ, শিক্ষা এবং যত্ন নিশ্চিত করার মাধ্যমে সার্বিক বিকাশ, নিরাপত্তা ও সুরক্ষা এবং মৃত্যুঝুঁকি কমিয়ে আনাই সরকারের মূল উদ্দেশ্য। এ প্রকল্পের আওতায় ৮ হাজারটি শিশু যত্ন কেন্দ্র পরিচালনার পাশাপাশি ৬২৪ জন প্রশিক্ষক, ১৬ হাজার যত্নকারী এবং ১ হাজার ৬০০ জন সাঁতার ইনস্ট্রাক্টরকে মৌলিক ও রিফ্রেশার্স প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ১৯ হাজার ২০০ জন অভিভাবকের সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর বাইরেও প্রকল্প কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় পর্যায়ের ৪৬০ জন সদস্যকে প্রশিক্ষণ বা ওরিয়েন্টেশন দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বৈদেশিক প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবনায় উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়া, প্রকল্প প্রস্তাবনায় সেমিনার, কনফারেন্স, কর্মশালা রয়েছে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর সংকট মেটাতে ১৭টি অফিস ভবন ভাড়া করা হবে। এর মধ্যে একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ১৬টি জেলা কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
এদিকে, পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি ২০২১-২২ অর্থবছরের (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) এডিপিতে বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকের বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়েছে।
কমিশন সূত্রে আরও জানা গেছে, সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশের জন্য সমাজভিত্তিক শিশু যত্ন কেন্দ্র স্থাপন এবং শিশুর জীবন দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে শিশুর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এ বিবেচনায় প্রকল্পটি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
এসএস