মো. সাইফুল ইসলাম। কিশোরগঞ্জ জেলার কাটিয়াদি থানার মো. বিল্লালের ছেলে। একটি সিআর মামলায় সাজা পরোয়ানা মূলে ১২ অক্টোবর তাকে গ্রেফতার করে কিশোরগঞ্জ থানা পুলিশ। এরপর আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয় কারাগারে। সাইফুল ইসলামকে যে পরোয়ানায় গ্রেফতার করা হয় সেটি ছিল চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম চৌধুরীর নামে এবং সিল ও স্বাক্ষরযুক্ত। গ্রেফতারের পর চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলার উপনথির আবেদন করা হলে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
আদালত কর্মকর্তারা বলেন, এ গ্রেফতারি পরোয়ানা চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে পাঠানো হয়নি। এমনকি রেজাউল করিম চৌধুরী নামে চট্টগ্রামে কোনো চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বর্তমানে নেই এবং কখনও ছিল না। কে বা কারা ভুয়া সিল, স্বাক্ষর দিয়ে হুবহু গ্রেফতারি পরোয়ানা তৈরি করে নিরীহ সাইফুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় আদালতের নির্দেশে নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির মো. আবুল কালাম আজাদ। আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কে বা কারা ভুয়া সিল-সই ব্যবহার করে কিশোরগঞ্জ জেলার বাসিন্দা সাইফুল ইসলামের নামে পরোয়ানা সৃজন করেছে। বিষয়টি আদালতের নজরে আসার পর সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। এ জাল-জালিয়াতিতে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে।’
ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানায় কিশোরগঞ্জের সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার-হয়রানি করা হয়েছে শুধু তাই নয়; এর আগেও ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানায় একাধিক নিরীহ লোককে গ্রেফতার ও হয়রানির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানার বাসিন্দা মো. মোনছেব আলী, মো. চাঁন মিয়া, মো. শাহাদাৎ হোসেন ও সূর্যাভানু নেছা বিবি। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ভিন্ন ভিন্ন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠানো হয় চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নামে। এসব গ্রেফতারি পরোয়ানায় সাজার তারিখ উল্লেখ না থাকায় এবং পরোয়ানাগুলো পৃথক মামলায় হলেও সবগুলো একই তারিখ ইস্যু করায় সন্দেহ হয় সংশ্লিষ্ট থানার ওসির। যার কারণে এসব পরোয়ানা যাচাইয়ের জন্য চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। আদালত কর্মকর্তারা যাচাই করে দেখতে পান, উল্লিখিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জারি করা হয়নি। কে বা কারা বিচারকের নামে ভুয়া সিল ও সই দিয়ে এসব গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠিয়েছে।
এর আগে পটুয়াখালী জেলার দুমকী থানার নুরুল হক মৃধার ছেলে মিজানুর রহমানের নামেও চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নামে পাঠানো হয় ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটসহ বিভিন্ন আদালতের নামেও একাধিক ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠানো হয়। যার মধ্যে ছিল-ভুয়া সিআর-৭২৯/২০ মামলায় হুমায়ুন আহমেদ, সিআর-১৭৩৩/২০১৩, সিআর-৩৩৭৭/২০১১, সিআর-৮১৫/২০২০ মামলায় ফাজমিদা বেগম লিজা, সিআর-১৭৭১/২০১৩ মামলায় মো. আবদুল হাকিম মণ্ডল (নিম মণ্ডল), সিআর-৭২৮/২০২০ মামলায় আবদুল লতিফ শেখ, সিআর-১৬২৭/২০১৮ মামলায় মো. মোনছের আলী, সিআর-১২২৩/১৮, সিআর-১৯৭৪/২০১৬ মামলায় মো. চাঁন মিয়া, সিআর-১২২/১৭ মামলায় মো. শাহাদাৎ হোসেন, সিআর -১৯৭৫/২০১২ মামলায় সূর্যাভানুর নামে ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা সৃজন করে দেশের বিভিন্ন থানায় পাঠানো হয়। এছাড়া ২০১৯ সালে সিআর মামলা ৬০৭/২০১৫ মূলে মো. জসিম উদ্দিন নামে এক ব্যাংকারের বিরুদ্ধেও ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠানো হয়। বিষয়টি তৎকালীন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ওসমান গনির নজরে এলে তিনি এক আদেশে বলেন, ‘একটি সক্রিয় চক্র এরূপভাবে ভুয়া ওয়ারেন্ট সৃষ্টির মাধ্যমে আদালতের জাল সিল ও স্বাক্ষর সৃষ্টি করে বিভিন্ন থানায় পাঠিয়ে মানুষকে হয়রানি করছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। কোনো সক্রিয় চক্র কিংবা কারা এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তা খুঁজে বের করে আইনের আওতায় সোপর্দ করার নিমিত্তে প্রকাশ্যে ও গোপনে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ কমিশনার, ডিসি ডিবিকে বলা হলো।’