1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

নারীকে পরের দিনের সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হতে হয়

সোহেল মুন্সী প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০২১, ১০:৫৩ এএম নারীকে পরের দিনের সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হতে হয়
ফাইল ছবি

ঢাকাঃ আজ ০৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সব দিবসের পেছনে কোন না কোন ইতিহাসের প্রেক্ষাপট রয়েছে। তেমনি নারী দিবসের সাথে জড়িত আছে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের ইতিহাস।

“বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।” বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘নারী’ কবিতায় বলে গেছেন এই কথা। মানবসভ্যতার ইতিহাসও বলে বিশ্বের সব ক্ষেত্রেই রয়েছে নারী-পুরুষের সমান অবদান। তবে নারীদের অধিকার আদায়ের স্বীকৃতিস্বরূপ যে নারী দিবস আমরা পালন করছি তার পেছনে কিন্তু পুরুষদের চেয়ে নারীদের ভূমিকাই বেশি ছিল।

পূজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা মানুষকে যেমন ভাগ করেছে মুসলিম হিন্দু খ্রিষ্টান তেমনি আলাদা করেছে মানুষকে নারী পুরুষে, উপস্থাপিত করেছে নারীকে পণ্যরুপে।

ইতিহাসের পাতায় নারী দিবস:

এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন।

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা রাস্তায় নামেন। ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ নারী শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নিজস্ব ইউনিয়ন গঠনে ব্যর্থ হয়। 

১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনের নেত্রী ক্লারা জেটকিন পুরুষের পাশাপাশি নারীর সম-অধিকারের দাবিটি আরও জোরালো করে।

১৯০৭ সালে জার্মানির স্টুটগার্টে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলন।

১৯০৮ সালে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের ( জার্মানি কমিউনিস্ট পার্টির নেত্রী) নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। 

১৯১০ সালে কোপেনহেগেনে ১৭টি দেশের ১০০ জন প্রতিনিধি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন।১৯১১ সাল থেকে ৮ মার্চ দিনটিকে ‘নারীর সম-অধিকার দিবস’ হিসেবে পালিত হয় ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে এই সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ।

১৯১১ সালের ১৯ মার্চ প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করা করা হয়। এই দিনে সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক, অষ্ট্রিয়া ও জার্মানিতে লক্ষাধিক নারী মিছিল ও সমাবেশের মধ্য দিয়ে এ দিনটি উদযাপন করেন। বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রবাদীরা এর সমর্থন দেন।

১৯১৪ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে।১৯৪৫ সালে সানফ্রান্সিসকোতে রাষ্ট্রসংঘ স্বাক্ষর করে ‘জেন্ডার ইকুয়ালিটি’ চুক্তিতে নারী অধিকারের যৌক্তিক দাবিগুলো বিবেচনায় রেখে ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে অনেকটা এগিয়ে যায়।১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষধে ৮ মার্চ নারী দিবস পালনের জন্য উত্থাপিত বিল অনুমোদন পায়।

১৯৮৪ সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণা করে রাষ্ট্রসংঘ। ঐতিহাসিক সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রসংঘ এই সিদ্ধান্ত নেয়।

এবারের নারী দিবস

করোনাভাইরাস অতিমারির কারণে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলিকে চিহ্নিত করা হচ্ছে চলতি বছরের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে। 

প্রতি বছরই পৃথক পৃথক থিমে পালিত হয় এই দিনটি। প্রথমবার ১৯৯৬ সালে নির্দিষ্ট থিমে পালিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। চলতি বছরের থিম হচ্ছে Women in leadership: an equal future in a COVID-19 world (নেতৃত্বে নারী: কোভিড ১৯ পৃথিবীতে সমান ভবিষ্যৎ লাভ)। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া, বিশেষত নীতি নির্ধারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় মহিলারাও সমান অংশীদার হতে পারেন, তাই এই থিমের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায়ী, সমান ভবিষ্যৎ এবং অতিমারি থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য মহিলাদের চেষ্টাকে সকলের সামনে তুলে ধরাও এই থিমের অন্যতম উদ্দেশ্য। 

কোভিড ১৯ অতিমারি এবং নারীদের ভূমিকা: 

এই অতিমারি দেখিয়েছে মহিলাদের নেতৃত্ব প্রদানের ইতিবাচক ফলাফল। করোনা ভাইরাস অতিমারির সময় কয়েকটি সফল ও দক্ষ প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব প্রদান করেছেন মহিলারা। অতিমারীর সঙ্গে মানব সভ্যতার যুদ্ধে তাঁরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত হোক বা বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, সেবিকা— সব ক্ষেত্রেই তাঁদের উপস্থিতি পরিস্থিতিকে উন্নত করেছে। তবে রাষ্ট্রসংঘের প্রকাশিত একটি রিপোর্ট জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী নিজের পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় ১১ শতাংশ হারে কম বেতন পাচ্ছেন প্রথমসারির করোনা মহিলা যোদ্ধারা। যা বেতন কাঠামোর বৈষম্যকেই প্রকাশ করে।

২০২১ সালের ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে জানা গিয়েছে, ৪৩.৫ কোটি মহিলা ও মেয়েরা দিনে প্রায় ১৩৫ টাকার চেয়েও কম উপার্জন করছেন। আবার করোনা অতিমারির সময়কাল ৪.৭ কোটি মহিলাদের দারিদ্রের মুখে ঠেলে দিয়েছে। রিপোর্টে এ-ও বলা হচ্ছে যে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের চাকরি ১৯ শতাংশ বেশি ঝুঁকির মুখে থাকে।

বাংলাদেশে নারী দিবসে আমাদের নারীরা:

জাতিসংঘের মতে, পৃথিবীতে শুধুমাত্র তিনটি দেশের সংসদে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি মহিলা রয়েছেন। শুধুমাত্র ২২টি রাষ্ট্রের প্রধান পদে আসীন আছেন মহিলারা। এমনকী পৃথিবীর ১১৯ টি দেশে কখনও মহিলারা রাষ্ট্রপ্রধানের ভূমিকা পালনের সুযোগ পাননি। 

জাতিসংঘ জানিয়েছে যে, বর্তমান উন্নয়নের হার এবং লিঙ্গসাম্যের বিষয়টি বিবেচনা করে বোঝা যাচ্ছে যে, ২০৬৩ সালের আগে সংসদে নিজের স্থান পাকা করতে পারবেন না মহিলারা।

বিশ্বের এক এক প্রান্তে নারীদিবস উদযাপনের লক্ষ্য ভিন্ন হয়ে থাকে । কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদযাপনের মুখ্য বিষয় হয়, আবার কোথাও মহিলাদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠাটি বেশি গুরুত্ব পাই।

এদেশে কোন বিষয়টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ তা নারীর প্রতি রাষ্ট্র বা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভরশীল। যদি দুটি অপশন দেয়া হয় নারীর সমাধিকার আগে না নারী নির্যাতন(খুন, ধর্ষণ, হয়রানি) বন্ধ করা আগে প্রয়োজন। অবশ্যই নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা জরুরি।

উন্নত দেশের নারীরা যেখানে মহাকাশ নিয়ে গবেশনায় ব্যস্ত আমাদের নারীরা নিজেদের সম্ভ্রম রক্ষা লড়াইয়ে। ইয়াসমিন থেকে তনু কল্পনা চাকমা থেকে রিশা আফসানা সহ শত নারী ধর্ষণ হচ্ছে খুন হচ্ছে প্রতিনিয়ত।যেখানে প্রতিনিয়ত আমাদের নারীদের নিজের সম্ভ্রম রক্ষার লড়াই চালাতে হচ্ছে সেখানে সমাধিকার চাওয়া বাতুলতা ছাড়া কিছু না। শুধু একদিন ঢাকঢোল পিটিয়ে দিবস পালন করলে কি হবে। যদি নারীর দিক থেকে দেখি, প্রতিদিনই আমাদের জন্য নারী দিবস। নারী দিবসে নারীর ও অধিকার নিয়ে আমরা নানা আলোচনা করি, প্রত্যয় ব্যক্ত করি;

এই আলোচনা ও প্রত্যয় আসলে প্রতিদিনই করা দরকার। কারণ নারীর সংগ্রাম প্রতিদিনই জারি থাকে, নারীর অধিকারের অন্বেষা প্রতিদিনই আমাদের সামনে এসে হাজির হয়। প্রতিদিনই নারীকে সংগ্রাম করতে হয় এবং পরের দিনের সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হতে হয়।

লেখকঃ সাংবাদিক 

আগামীনিউজ/সোহেল 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner