ঢাকা: করোনার কারণে মূলত মার্চ থেকে স্থবির সারাদেশ। ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী পাওয়া যায়। আর ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরে তা কয়েকদফা বাড়িয়ে ৫ই মে পর্যন্ত করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই ছুটি আরো বাড়তে পারে।
এরই মধ্যে চলমান ২০১৯-২০২০ অর্থবছর শেষের দিকে। আর এখনই আগামী ২০২০-২০২১ নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এবং অর্থনীতিতে এর অভিঘাতের কথা মাথায় রেখেই তৈরি হচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপি। আর এতে গুরুত্ব পেতে পারে কৃষি ও স্বাস্থ্য খাত।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, করোনার কারণে মার্চে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) ৩১৪টি প্রকল্প দ্রুত শেষ করার জন্য সিদ্ধান্ত হলেও কোনো কার্যক্রম এগোয়নি। এ অবস্থায় বাড়তে পারে পুরানো প্রকল্পের ব্যয়। একইসঙ্গে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া পাচ্ছে স্বাস্থ্য খাতে। পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কৃষি খাতেও। আর নতুন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্তি কিংবা প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখা হচ্ছে সম্পদের সীমাবদ্ধতার বিষয়টিকে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এডিপি তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. নূরুল আমিন বলেন, করোনার কারণে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও এই দুইটি খাতে জোর দিতে বলেছেন।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি মাথায় নিয়েই আগামী এডিপি তৈরি হবে। তাছাড়া মানুষের অভাব-অনটন দূর করতে সামাজিক নিরাপত্তাসহ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোতে জোর দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে এডিপির অন্যতম উদ্দেশ্য হবে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-৪১ ও এসডিজি লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ খাতগুলোতে অগ্রাধিকার দিয়ে বরাদ্দ দেওয়া। এর মাধ্যমে উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কৃষি উন্নয়ন, পরিবহন, পরিবহন, ভৌত ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন, নগর উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের মতো বিষয়গুলো স্বাভাবিকভাবেই অগ্রাধিকার পাবে।
জানা যায়, দীর্ঘমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি কৌশল ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকারের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে এডিপি। প্রতিবছর জুন মাসে বাজেট ঘোষণার আগেই মে মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে নতুন অর্থবছরের এডিপি অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়।
সেই কারণে মার্চেই শুরু হয়ে যায় এডিপি তৈরির কাজ। আর এ বছরের ২৩ মার্চ জারি করা হয়েছে এডিপি প্রণয়নের নির্দেশিকা। এরপর করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলেও থেমে নেই এর কাজ।
জানা যায়, এডিপির নীতিমালায় বলা হয়েছে বরাদ্দহীন নতুন প্রকল্প যুক্ত করার ক্ষেত্রে বৈষম্য হ্রাস, দারিদ্র নিরসনসহ সংশ্লিষ্ট বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এছাড়া অঞ্চলভিত্তিক সুষম উন্নয়ন, এসডিজির (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) অর্জন, নদীভাঙন-জলাবদ্ধতা রোধে ড্রেজিং, নদী শাসন ও রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে পরিবেশ ও প্রতিবেশের বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে সমন্বিত প্রকল্প প্রণয়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এতে আরো বলা হয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সফটওয়্যার শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা বিকাশের মাধ্যমে রফতানি বাড়ানো ও কর্মসংস্থান তৈরির প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া এডিপিতে ৩০ শতাংশ প্রকল্প সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে এর আগে অধিগ্রহণ করা অব্যবহৃত জমি কিংবা খাস জমি ব্যবহারের প্রস্তাব করতে হবে। তাছাড়া মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো (এমটিবিএফ) অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দের প্রক্ষেপণ বিবেচনায় নিয়ে নতুন প্রকল্প প্রস্তাব করতে হবে। চলতি অর্থবছরের বরাদ্দহীন অননুমোদিত প্রকল্প নতুন এডিপিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্তর্ভুক্ত হবে না। যেসব প্রকল্প এরই মধ্যে পরিকল্পনা কমিশন প্রক্রিয়াকরণের জন্য বিবেচনা করেনি, সেসব প্রকল্পকে ফের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।
আরো বলা হয়েছে, সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও কাঙ্ক্ষিত সুফল নিশ্চিত করতে এডিপিতে নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়ার চেয়ে চলমান প্রকল্প শেষ করার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। পরিকল্পনা শৃঙ্খলা ও বাজেট ব্যবস্থাপনার স্বার্থে চলতি অর্থবছরে শেষ করার জন্য নির্ধারিত কোনো প্রকল্প নতুন এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা যাবে না। এছাড়া আগামী ৩০ জুন মেয়াদ শেষ হবে, এরকম কোনো প্রকল্পও মেয়াদ না বাড়িয়ে এডিপিতে যুক্ত করা যাবে না।
আগামীনিউজ/মিঠু/মিজান