1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

কাজের সন্ধানে রাজধানীতে বাড়ছে উত্তরাঞ্চলের মানুষের ভিড়

ম. শাফিউল আল ইমরান প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২০, ০৮:১৮ পিএম কাজের সন্ধানে রাজধানীতে বাড়ছে উত্তরাঞ্চলের মানুষের ভিড়
ছবি সংগৃহীত

ঢাকা: কর্মসংস্থানের অভাব, কৃষিতে লোকসান, ঋণ পরিশোধের তাগিদ ও যৌতুকের অর্থ পরিশোধসহ নানান কারণে ঢাকামুখী হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের মানুষ। ঢাকায় আসা এসব মানুষের ভিড় বাড়ে সকাল সাতটা থেকে। রাজধানীর বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে  এসব অভাবী মানুষের মুখ দেখা যায় । সকাল আটটা না বাজতেই বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্সের সামনেও কাজের জন্য  অপেক্ষমাণ  এসব মানুষের সংখ্যা শত ছাড়িয়ে যায়। কেউ বা কোদাল আর টুকরি নিয়ে মাটিকাটা শ্রমিকেরা প্রতীক্ষায় থাকেন। আবার কেউ এমনিতে দাড়িয়ে অপেক্ষা করেন যে, কেউ তাদের কাজের জন্য ডাকবেন ।  আবার  অনেকে পথচারীরা তাঁদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ঘিরে ধরছেন কাজ পাওয়ার আশায়। বেশির ভাগ কাজ না পেয়ে রিক্সাকে ভরসা হিসাবে নেয়।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, রাজধানীতে লাইসেন্স করা রিক্সার সংখ্যা ৭৯ হাজার ৪০০। তবে, বাস্তবে এ সংখ্যা কয়েকগুন বেশি বলে জানা গেছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঢাকা শহরে প্রায় ৯০ শতাংশ রিক্সা চালক রংপুর অঞ্চল তেকে আসা। বাকীরা দেশের অনান্য জেলা থেকে আসা। তারা জানিয়েছেন, নিজ এলাকায় কর্মসংস্থানের অভাব, দরিদ্রতা, যৌতুক, এনজিওর ঋণ, কৃষিপণ্যের নিম্নমূল্য, নিম্ন মজুরি, স্থানীয় মহাজন শ্রেণির কাছে চড়া সুদের ঋণের কারণেই রাজধানীতে আগমন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গত এক দশকে বাংলাদেশে দারিদ্র্য হ্রাস পেলেও আঞ্চলিক পর্যায়ে দারিদ্র্য নিরসনের গতি সব অঞ্চলে সমান নয়। কিছু অঞ্চল বেশ পিছিয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চাইলে রংপুর অঞ্চলকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে দেশের উন্নয়ন সমতা বিধানের তাগিদ দিয়েছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে দেখাগেছে, রংপুরের পীরগঞ্জের রাজা মিয়া(৪৫) রাজধানীতে রিকশা চালান প্রায় ১৫ বছর ধরে। থাকেন মোহাম্মদপুরের আদাররের একটি রিকশা গ্যারেজে। গ্রামে থাকতে টুকটাক চাষাবাদের পাশাপাশি দিনমজুরের কাজ করতেন। নিয়মিত কাজ না পাওয়া ও সস্তা মজুরির কারণে সংসার চালাতে বেগ পেতে হতো।

তাই একদিন কাজের সন্ধানে ঢাকা চলে আসেন। এছাড়া, রংপুরের মেহেদী হাসান একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের পিয়নরে কাজ করে। কয়েকদিন আগে সাক্ষাতের সময় তিনি বলেন, ‘বাড়িতে দুইটা মেয়ে, এদের জন্য মন কাঁদে! কিন্ত বাড়ি গিয়ে কি করব কোনো তো কাজ নেই। শুধু  রাজা মিয়াই নন, তার সাথে কথা বলে জানা গেল, এমন হাজারো রাজা মিয়া শুধু জীবিকার তাগিদে রংপুর অঞ্চল থেকে ঢাকায় এসেছেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো(বিবিএস) এর জরিপেও এমন তথ্য এসেছে। গত বছরের মে মাসে প্রকাশিত জরিপে বিবিএস জানায়, কুড়িগ্রাম, রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধায় দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি। বিবিএসের হিসাবে কম দরিদ্র এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ।

এর কারণ অনুসন্ধানে এই প্রতিবেদক তার নিজ এলাকা রংপুরের পীরগঞ্জে কয়েকজন নিম্ন আয়ের মানুষের সাথে কথা বলেন। তারা জানায়, সরকার আইন করে যৌতুক নিষিদ্ধ করলেও এই অঞ্চলে এর প্রভাব পড়েনি। দিনমজুর ছেলের সঙ্গেও মেয়ে বিয়ে দিতে গেলেও যৌতুক দিতে হয়। এছাড়া ছেলে-মেয়ের চাকরির জন্য ঘুষ ছাড়া চাকরি মেলেনা। এসব অর্থের জোগান দিতে গিয়ে জমি বিক্রি, এনজিও বা স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে উচ্চসুদে ঋণ নিতে হয়। ঋণের টাকা পরিশোধ ও এলাকায় যুতসই কর্মসংস্থানের অভাবে ঢাকায় এসে রিকশা চালানো বা অনান্য কাজ করতে তারা ঢাকায় আসে।

২০১২-১৩ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এডিপিতে মোট বরাদ্দের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে জানা যায়, শতকরা ৩৮.৫৪ শতাংশ বরাদ্দ পেয়েছে ঢাকা বিভাগ এবং চট্টগ্রাম বিভাগ পেয়েছে ২৭.৭৫ শতাংশ। অপরদিকে রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ এবং রংপুর বিভাগের ক্ষেত্রে বরাদ্দের পরিমাণ যথাক্রমে ১০.১২, ৮.২০, ৪.৬০, ৪.১৮, ৩.৫৩ এবং ৩.১৩ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈষম্য শুধু বিভাগগুলোর মধ্যেই নয়, একই সঙ্গে তা একটি বিভাগের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত জেলাগুলোর মধ্যেও বিদ্যমান। বাংলাদেশের জেলাগুলোয় উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে অতি উচ্চ বৈষম্য রয়েছে। দেশের মধ্যাঞ্চল তুলনামূলক ভাবে বরাদ্দের বেশিরভাগ অংশ পেয়ে থাকে। এডিপিতে সবচেয়ে কম বরাদ্দ পাওয়া জেলাগুলো হচ্ছে নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর ও বগুড়া। সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাওয়া জেলাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, গোপালগঞ্জ, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক এবং নদী রক্ষা বিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক তুহিন ওয়াদুদ আগামীনিউজ ডটকমকে বলেন, এখানকার লোকজন তো আর বসে থাকেনা। কাজ থাকেনা বিধায় তারা ঢাকায় যায়। উত্তরের জেলাগুলোতে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এসব মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারে এমন উদ্যোগে সরকারকেই আগে নিতে হবে। কারণ এখানে যেসব শিল্প কারখানা আছে সেগুলোতে ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে।সরকারি প্রাণদনা পেলে নতুন কল-কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে।

তিনি আরো বলেন, বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল করে কর ছাড় দিয়ে হলেও উত্তরাঞ্চলে বিনিয়োগ আনতে সরকারকেই কাজ করতে হবে। বিনিয়োগ বাড়লে কর্মস্থান বাড়বে আর এখানকার মানুষরা কাজের সুযোগ পেলে আর ঢাকা মুখী হবেনা। বাড়িতে থেকে কম মূল্যেও কাজ করতেও আগ্রহী হবে।

আগামীনিউজ/ইমরান/নাঈম

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner