ঢাকা : বিএনপি নেতারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয় মনে করলেও এ দাবিতে এখন পর্যন্ত রাজপথে জোরালো কোনো কর্মসূচি তারা দেননি। দলটির অভ্যন্তরে এটা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। কিন্তু নীতিনির্ধারকরা কোনো ‘হঠকারী’ পথে যেতে চান না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনই তাদের ভরসা। সেই ভরসা থেকে বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে থেমে থেমে নানা ‘নিরীহ’ কর্মসূচি চলছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী এক বছর বলতে গেলে এই ইস্যুতে শক্ত কোনো কর্মসূচি ছাড়াই কাটিয়েছে বিএনপি। দলটির নেতৃত্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে দৌড়-ঝাঁপ করেছেন। আদালতে গেছেন বারবার, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
আপাত দৃষ্টিতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কোনো প্রতিপক্ষ নেই। রাজপথও কণ্টকাকীর্ণ নয়। ‘অর্থনৈতিক সঙ্কট’ চলছে, এমন কথাও সরকার মানতে নারাজ। সেক্ষেত্রে তাদের সুসময়ের কোনো হেরফের হয়নি- বলাই যায়।
বিএনপি দেশের প্রধান বিরোধী দল হয়েও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে না মাঠে, না কৌশলে, কোনোভাবেই সফলতা পাচ্ছে না। অনেকেই বলছেন, নেতৃত্বের অদক্ষতার কারণেই বিএনপি বারবার প্রতিপক্ষের বিপক্ষে কিছুই করতে পারছে না। গত দুই বছরের অধিক সময় ধরে কারাবন্দি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তেমন আন্দোলনও গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। ঘরোয়াভাবে কিছু সভা সমাবেশের মধ্যেই দলটির কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রয়েছে। বিপুল জনসমর্থন থাকার পরও বিএনপি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় কারাবন্দি চেয়ারপারসনের মুক্তির বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি। এই বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই দলের নেতাকর্মীদের হতাশ করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেবল ঘরোয়া বৈঠক ও বিবৃতির জোরে বিএনপি এ অবস্থায় কী করতে পারবে? তবে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এই অবস্থার মধ্যেও এখান থেকে নতুন দিনের দিশা খুঁজে পাচ্ছেন। তাদের মত হচ্ছে, সরকারের ওপর জনসাধারণ সন্তুষ্ট নয়। সরকারের দমন-পীড়নের কারণেই কোনো আন্দোলন গড়ে উঠছেনা। অতীত ইতিহাস বলে, যেকোনো সময় এই সরকারের পতন ঘটবে।
কারাগারে অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বিএনপি এখন তাদের নেত্রীর মুক্তি নিয়ে আর কোনো রাজনীতির সুযোগ দেয়ার পক্ষপাতি নয়। দলটির নীতি-নির্ধারকদের একমাত্র অগ্রাধিকার তাঁর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে সবার আগে জরুরি তার মুক্তি, সেটি জামিনে হোক কিংবা সরকারের নির্বাহী আদেশেই হোক। দলটির নেতাদের অভিমত, সুচিকিৎসার অভাবে যেখানে বেগম জিয়ার জীবন বিপন্ন হওয়ার পথে, সেখানে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই।
সরকার তাঁর মুক্তি ইস্যুতে ‘প্যারোল’ বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে চিত্রায়িত করতে চাইলেও চিকিৎসা প্রশ্নে বিএনপি সেটি আমলে নিচ্ছে না। আইনি প্রক্রিয়ায় জামিনের চেষ্টা চলছে। আদালত আবারো জামিন নাকচ করে দিয়েছে। এখন বেগম জিয়া কিংবা তাঁর পরিবার যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটিই দল মেনে নেবে।
প্যারোল নিয়ে অতীতে বর্তমান সরকার প্রধানসহ অনেকেই দেশের বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন। সে বিষয়টিকেও অনেকে সামনে এনে নতুনভাবে পর্যালোচনা করছেন। এ নিয়ে বিএনপি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে পর্দার অন্তরালে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু বেগম জিয়া চান জামিনে মুক্তি, প্যারোলে মুক্তি নিতে তিনি আগ্রহী নন।
কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসনকে মুক্ত করতে না পারাটা দিনে দিনে দলের সবার কাছে বেদনার বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ অবস্থায় চেয়ারপারসনের মুক্তির লক্ষে আন্দোলন গড়ে তুলতে হতাশাগ্রস্ত নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইবরাহিম আগামীনিউজ ডটকমকে বলেন, ‘সংসদে যাওয়া না যাওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে দলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করছেন, তাঁদের চেয়ারপারসনকে জেলে রাখায় দলীয় নেতাকর্মীরা আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ। কারাগারেও তাকে বেশিদিন রাখতে পারবে না। দল অটুট আছে অটুট থাকবে। মামলাকে একটা বড় হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস আমাদের কর্মীবাহিনী ও জনগণ এগুলো উপেক্ষা করে, মোকাবেলা করে আমাদের যে রাজনৈতিক লক্ষ্য- সে লক্ষ্যে তারা পৌঁছুতে পারবে।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বিএনপির নেতৃত্ব বেশ সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাবন্দি, অন্যদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাধ্য হচ্ছেন দেশের বাইরে থাকতে। এর পাশাপাশি ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকায় মামলা-হামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের সামনে এখন কোনো আলোর রেখা নেই। অনেক ক্ষেত্রে তারা হতাশ কিংবা নিষ্ক্রিয়।
আগামীনিউজ/ডলি/সবুজ