নিজেকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নেবেন বলে জানিয়েছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।
শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে জাহাঙ্গীর আলমের প্রাথমিক সদস্য পদ বাতিল করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে হয়তো ভুল বোঝানো হয়েছে বা ভুল মেসেজ দেওয়া হয়েছে। তিনি সঠিকটা জানলে হয়তো কোনো দিনই ব্যবস্থা নিতেন না।
মেয়র আরও বলেন, যেহেতু করোনাকাল তাই তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) একমুখো শুনেছেন, তাই হয়তো এমনটা হয়েছে। তারপরও তিনি রাষ্ট্রের, দেশের, দলের অভিভাবক। তিনি যা ভালো মনে করে করেন, আমি মাথা পেতে নেব।
এর আগে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ ওঠে। গত ২২ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
চার মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলকে কটূক্তি করেন। এমনকি রাষ্ট্রীয় দুটি সংস্থা নিয়েও নানা আপত্তিকর মন্তব্য করেন তিনি। জাহাঙ্গীর মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর দেশ স্বাধীন করার উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
এ ঘটনায় গাজীপুরে মেয়রের শাস্তির দাবিতে মশাল মিছিল বের হয়। রাজনীতির অঙ্গনে জাহাঙ্গীরের বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গাজীপুরের পরিস্থিতি শান্ত করতে আওয়ামী লীগ উদ্যোগ নেয়।
গত ৩ অক্টেবর দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমকে শোকজ করে আওয়ামী লীগ। এতে সই করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নোটিশে ১৫ দিনের মধ্যে জাহাঙ্গীরকে জবাব দিতে বলা হয়। শোকজের জবাব দিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান জাহাঙ্গীর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্ষমা পালেন না তিনি।
রাজনীতির বাইরে জাহাঙ্গীর আলম একজন ব্যবসায়ী। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। তিনি অনারেবল টেক্সটাইল অ্যান্ড কম্পোজিট লিমিটেড এবং জেড আলম অ্যাপারালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
১৯৭৯ সালে ৭ মে গাজীপুরে জন্মগ্রহণ করেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি চান্দনা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে উত্তীর্ণ হয়ে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গাজীপুর জেলা শাখার সহসভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সহসম্পাদক ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সহসভাপতি ছিলেন। তিনি গাজীপুর সদর ও টঙ্গী উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন।
আগামীনিউজ/নাসির