1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

শ্রীমঙ্গলে ফুলের সৌরভ ছড়াচ্ছে নাগ লিঙ্গম

সাখাওয়াত লিমন, শ্রীমঙ্গল(মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২১, ০৪:০৪ পিএম শ্রীমঙ্গলে ফুলের সৌরভ ছড়াচ্ছে নাগ লিঙ্গম
ছবি : আগামী নিউজ

মৌলভীবাজারঃ জেলার শ্রীমঙ্গলে ফুলের সৌরভ ছড়াচ্ছে নাগ লিঙ্গম বৃক্ষ। দুর্লভ প্রজাতির এই বৃক্ষ কাটে- ফুটছে উজ্জ্বল গোলাপী রঙের ফুল আর ধুসর গোলাকার ফল। এর শাখা প্রশাখায় কোন ফুল বা ফল ধরে না। কু-লী পাকানো পাপড়ি আর ফুটন্ত ফুলের পরাগ কেশর যেন সাপের ফনা। অনেকের ধারণা এ গাছের ফুল খোদ নাগ-নাগিনী পাহারা দেয়। হয়তো এ কারণেই গাছটির নাম হয়েছে ‘নাগ লিঙ্গম’। আমাজন অঞ্চলের এই বৃক্ষের ইংরেজী নাম ‘ক্যানন বল’। ‘ল্যাসাইথিডেসিয়া’ পরিবারের নাগ লিঙ্গমের বৈজ্ঞানিক নাম ‘করোপিতা গুইয়াসেসিস’।

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র (বিটিআরআই) এর চত্বরে একটি এমন একটি বৃক্ষের কান্ড ভরে উঠেছে ফল ও ফুলে। ফুলের সৌরভে চারপাশ যেন মৌ-মৌ করছে। 

সাধারণত শরৎ কালে ফুল আসে নাগ লিঙ্গমে। তবে আবহাওয়ার তারতম্যর কারণে এর হেরফের হয়। এই মাঝ কার্তিকে বৃক্ষের কান্ডে স্বর্ণালী ফুল ও ধুসর ফল দেখা যায়। শীতের রাতে নাগ লিঙ্গম ফুলের সুবাস অনেকদূর থেকে পাওয়া যায়।  অনেকটা কামানের গোলার মতো এর ফলের ওজন হয় প্রায় ২ কেজি সমান। দেখতে সুন্দর হলেও এ ফলের স্বাদ খুবই তিক্ত। তিক্ততার কারনে পশু-পাখিও এই ফল খায় না।

বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী জানান, বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হোসেন ১৯৯৩ সালে এখানে বৃক্ষটি রোপন করেন। তিনি বলেন, ভিনদেশী বৃক্ষ বলে অনেক চেষ্টা আত্মি সত্বেও নাগ লিঙ্গমের বংশ বিস্তার করে আশানরূপ ফল পাওয়া যায়নি। বীজ সংগ্রহ করে চারা উৎপাদনের চেষ্টা করেও সফল হয়নি কেউ। মূলতঃ প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এ দেশে নাগ লিঙ্গম গাছের বিস্তার করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রচ-উঞ্চ অঞ্চলের বৃক্ষ বলে দেশে এ গাছের বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম হয় না। তবে গুটি কলম করে গাছের বংশ বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা। নাগলিঙ্গমের আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন বনাঞ্চলে। এসব অঞ্চলে এই ফলগুলো হাতির প্রিয় খাবার বলে নাগ লিঙ্গমের আরেক নাম হাতির জোলাপ গাছ।

নাগলিঙ্গম বৃক্ষ ৩৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। গুচ্ছ পাতাগুলো ৮ থেকে ৩১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। বছরের প্রায় সব ঋতুতেই এই গাছের পাতা ঝরে। আবার দিন কয়েকের মধ্যে নতুন পাতা গজায়। সঠিক পরিচর্যায় একটি নাগলিঙ্গম এর চারা রোপণের ১০ থেকে ১৪ বছর মধ্যে ফুল ধরে।

নাগ লিঙ্গম বৃক্ষ নিয়ে অনেক প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে। ‘নাগলিঙ্গম গাছে যখন ফুল ফোটে তখন এর থেকে মাদকতাময় গন্ধ বের হয়। সেই গন্ধে নাগিনীর গায়ের মতো কামগন্ধ খুঁজে পায় নাগ। কামের নেশায় মত্ত হয়ে তখন নাগ ফনা তোলা নাগিনীর মতো দেখতে ফুলের কাছে ছুটে যায়। সাঁপুড়েরা তাই এই গাছের নাম দিয়েছেন নাগলিঙ্গম’। কালক্রমে এশিয়া অঞ্চলে এই নামটিই পরিচিতি লাভ করে। 

জানা যায়, প্রায় তিন হাজার বছর আগে থেকেই বৃক্ষটি ভারত উপমহাদেশে একটি পবিত্র উদ্ভিদ বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শিব ও সর্প পূজায় নাগলিঙ্গম ফুল ব্যবহার করেন। ভারতে নাগলিঙ্গমকে ‘শিব কামান’ নামে ডাকা হয়।এর পাশাপািশ বৌদ্ধদের মন্দিরের এই ফুলের আর্চনা করা হয়। থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমারের বৌদ্ধ মন্দির প্রাঙ্গণে নাগলিঙ্গম গাছ বেশি দেখা যায়।

ভেষজ গুণসম্পন্ন নাগলিঙ্গম গাছের ফুল, পাতা ও বাকলের নির্যাস থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ হয়। বাংলাদেশে নাগলিঙ্গম খুব একটা দেখা যায় না। ঢাকা রমনা উদ্যানে ও মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে রয়েছে কয়েকটি গাছ। এছাড়া শ্রীমঙ্গলের বিটিআরআই, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ময়মনসিংহ গৌরীপুর, মুক্তাগাছায়, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, কক্সবাজার, বান্দরবান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, নটর ডেম কলেজ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চন্দ্রিমা উদ্যানে বিভিন্ন বয়সী নাগলিঙ্গম গাছ রয়েছে বলে জানা যায়।

প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার পর্যটকরা চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গলে নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) ক্যাম্পাসে অবস্থিত এই নাগলিঙ্গম ফুলের সৌরভে বিমোহিত হন।

আগামীনিউজ/নাসির   

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner