ঢাকাঃ মা জীবনের পাশাপাশি মরণেও আমার বাবার সাথী হয়ে চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন’ ও ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক এবং আর্থিক অনুদান ও সেলাই মেশিন বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট তারা আমাদের বাড়িতে আক্রমণ করলো, বাবাকে মেরে ফেললো। মা বের হয়ে আসলেন। তারা বললেন, আপনি আমাদের সঙ্গে চলেন। মা বললেন, তোমরা যেহেতু তাকে মেরে ফেলেছো। আমাকেও গুলি করে মেরে ফেলো। আমি কোথাও যাবো না। জীবনের পাশাপাশি মরণেও আমার বাবার সাথী হয়ে চলে গেছেন মা।
নিজের মায়ের জীবন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ছোটবেলা থেকে তিনি একটা মানবিক চরিত্র নিয়ে গড়ে উঠেছেন। বাবার রাজনৈতিক কারণে জীবনের যে চড়াই-উতরাই, মাকে কখনো ভেঙে পড়তে দেখিনি। বাবার পাশে থেকে সবসময় সহযোগিতা করেছেন। এমনকি তাকে অর্থনৈতিক সহযোগিতাও করেছেন। মা পাশে থাকাতে বাবা কিন্তু সফল হয়েছেন।
তিনি বলেন, মা বাবাকে বলতেন, ‘রাজনীতি করো আপত্তি নেই, কিন্তু পড়াশোনা করো। জেলজীবনেও তিনি বলতেন, জেলে থাকো আপত্তি নেই, কিন্তু স্বাস্থ্যের খেয়াল রেখো।’
তিনি বলেন, এ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ দরিদ্র ছিল। প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করত। তাদের ক্ষুধার অন্য যোগাতে পারত না। চিকিৎসা পেত না। তাদের থাকার কোনো ঘর ছিল না। এই বঞ্চিত মানুষগুলোর ভাগ্য গড়ে তোলা, এটাই ছিল জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য ও সাধনা।
সরকার প্রধান বলেন, আমার মায়ের মুখে কোনো দিন অভাব-অনটনের কথা শুনিনি। তিনি একটা সাহস নিয়ে চলতেন।
‘দলের ভেতরে সমস্যা দেখা দেয়। মওলানা ভাসানী দল ছেড়ে চলে যান। তখন দলের দায়িত্ব নেওয়া জন্য আমার বাবা মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। আম্মা এ ব্যাপারে কোনো দিন অভিযোগ-অনুযোগ করেননি। তিনি হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন। সব সময় স্বামীর পাশে থাকতেন। চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে জীবনে মাকে কখনো ভেঙে পড়তে দেখিনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ’৬০ সালে বের হলেন, আবার ’৬২ সালে গ্রেপ্তার হন, ’৬৪ সালে আবার গ্রেপ্তার হন, আবার ’৬৬ সালে। জেলাখানায় মা যখন আব্বার সঙ্গে দেখা করতে যেতেন, তখন বলতেন– তোমার ঘর-সংসার নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না, সেটা আমি দেখব। আব্বা কারাগারে থাকলে দলের কাজও তিনি করতেন।
তিনি বলেন, বাবার সংগ্রামের ভেতরে ছিল দেশের স্বাধীনতা। এটা পৃথিবীর কেউ না জানুক, মা কিন্তু জানতেন। কারণ, আব্বা মার সঙ্গে সব সময় কথাগুলো বলতেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মাকেও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। মামলায় মাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। একটা পর্যায়ে পাকিস্তানের কিছু নেতা ও আওয়ামী লীগের কিছু নেতা আসেন ৬ দফার পরিবর্তে ৮ দফার প্রস্তাব নিয়ে। আমার মায়ের অদ্ভুত স্মরণশক্তি ছিল। তিনি শুনতে এবং জেলখানায় গিয়ে আব্বার কাছে সেই কথাগুলো বলতেন। আব্বা যে নিদের্শনা দিতেন সেটা নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে দিতেন।
সরকার প্রধান বলেন, আইয়ুব খান আব্বাকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে আলোচনা করার কথা বলে। আমার মা সেখানেও বলেন, প্যারোলে না। আইয়ুব খান মামলা প্রত্যাহার করবে। সবাইকে ছেড়ে দেবে। মুক্ত মানুষ হিসেবে যাবে। যখন আব্বা প্যারোলে গেলেন না, আমাদের নেতারা বাড়িতে এসে বললেন, আপনি জানেন? তারা (পাকিস্তানিরা) তো মেরে ফেলবে, আপনি তো বিধবা হবেন। তখন মা বলেছিলেন, আরও তো নেতা আছে, তাদের স্ত্রীরাও বিধবা হবে। আমি একা সধবা থাকার চেষ্টা করব তাদের বাদ দিয়ে? আপনারা একটু চিন্তা করেন, কত দৃঢ় মনোবল ছিল আমার মায়ের।
এবার বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক পেয়েছেন- রাজনীতিতে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন (মরণোত্তর), শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে অণিমা মুক্তি গমেজ ও মোছা. নাছিমা জামান ববি, গবেষণায় ড. সেঁজুতি সাহা এবং ক্রীড়ায় বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল।
তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।
বুইউ