ঢাকাঃ শায়েস্তা করতে জামালপুরের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর পরিকল্পনায় সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে র্যাব।
শনিবার (১৮ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এর আগে সাংবাদিক নাদিমকে হত্যার ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী স্থানীয় ইউপি বাবুসহ জড়িত চার আসামিকে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ ও বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থেকে গ্রেফতার করে র্যাব।
খন্দকার আল মঈন জানান, র্যাবের অভিযানে মাহমুদুল আলম ওরফে বাবু (৫০), মো. মনিরুজ্জামান মনির ওরফে মনিরুল (৩৫), জাকিরুল ইসলাম (৩১) ও মো. রেজাউল করিম (২৬) নামে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা সবাই জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যার আসামি।
র্যাব জানায়, গত ১৪ জুন রাতে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে সাংবাদিক নাদিম বাড়ি ফিরছিলেন। পথে বকশীগঞ্জের পাটহাটি এলাকায় পৌঁছালে সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন। একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে তাকে রাস্তার পাশে ফেলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় সাংবাদিক ও পথচারীরা তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে ওই রাতেই জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। ১৫ জুন বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ওই দিন বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাদিম মৃত্যুবরণ করেন। ওই ঘটনায় নাদিমের স্ত্রী বাদী হয়ে মাহমুদুল আলম বাবুকে প্রধান অভিযুক্ত করে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক জানান, শনিবার র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৪ এর একটি আভিযানিক দল পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ ও বগুড়ার দুপচাঁচিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মাহমুদুল আলম বাবু, মো. মনিরুজ্জামান মনির ওরফে মনিরুল ও জাকিরুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার সন্ধ্যায় বগুড়া থেকে মো. রেজাউল করিমকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর পরিকল্পনাতেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। সাংবাদিক নাদিম সাম্প্রতিক সময়ে বাবুর অপকর্ম নিয়ে অনলাইন পোর্টালে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপর বাবু ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক নাদিমকে বিভিন্নভাবে হুমকিসহ তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল মামলাটি খারিজ করে দেন।
তিনি জানান, মামলা খারিজ নিয়ে নাদিম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে বাবু আরও ক্ষিপ্ত হয়ে নাদিমকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৪ জুন রাত ১০টার দিকে ভিকটিম নাদিম বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি এলাকায় বাবু তার সন্ত্রাসীদের নিয়ে নির্জন স্থানে ওঁৎ পেতে থাকেন। ভিকটিম নাদিম ও তার সহকর্মী মোটরসাইকেল যোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সন্ত্রাসীরা তাকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে পেছন থেকে দৌড় দিয়ে আরও কয়েকজন লোক এসে তাকে মারতে মারতে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে নিয়ে যায়। সেখানে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। ওই সময় বাবু ঘটনাস্থল থেকে পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দেন। নাদিমের সহকর্মী তাকে বাঁচাতে গেলে বাবুর সন্ত্রাসীরা তাকেও মারধর করে। একপর্যায়ে ভিকটিম নাদিমের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে বাবু ও তার সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরদিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিক নাদিম মৃত্যুবরণ করেন।
গ্রেফতার মাহমুদুল আলম বাবু সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ও ভিকটিম নাদিমের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। ঘটনার পর থেকে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে তার আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে জামালপুরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, রেজাউল, মনির ও জাকির ছিলেন বাবুর সন্ত্রাসী গ্রুপের অন্যতম সহযোগী। ঘটনার দিন রেজাউল দৌড়ে গিয়ে নাদিমকে ধাক্কা দিয়ে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলেই বাবুর নির্দেশে তারা নাদিমকে বেদম প্রহার করতে থাকে।
এর আগে শনিবার (১৭ জুন) সকালে পঞ্চগড়ের সীমান্তবর্তী দেবীগঞ্জের চিলাহাটি ইউনিয়নের চর তিস্তাপাড়া এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে থাকা চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে গ্রেফতার করা হয়। সেখান থেকে সড়ক পথে ঢাকায় নিয়ে আসে র্যাব। পরে সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় নাদিম হত্যার বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার রাত ১০টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জের পাটহাটি মোড়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম। এ সময় তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়। একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা তাকে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়।
বুইউ