
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের ৫০তম শাহাদাত-বার্ষিকী আজ। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে ১৪ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের রেহাইচর এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই করে তিনি শহীদ হন।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সাতজন বীরকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান 'বীর শ্রেষ্ঠ' উপাধিতে ভূষিত করা হয় তিনি তাদের অন্যতম। তার সম্মানে ঢাকা সেনানিবাসের প্রধান ফটকের নাম 'শহীদ জাহাঙ্গীর গেট' নামকরণ করা হয়েছে।
তার শেষ ইচ্ছানুযায়ী সোনামসজিদ প্রাঙ্গণে ৭নং সেক্টরের প্রথম সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হকের পাশে তাকে দাফন করা হয়। তার প্রতি সম্মান জানিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে দু’টি কলেজ ও মহানন্দা নদীর ওপর নির্মিত সেতুর নামকরণ করা হয়। এছাড়াও তার শাহাদাত বরণের স্থলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।
বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমগঞ্জ গ্রামে ১৯৪৯ সালের ৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মৌলভী আব্দুল মোতালেব হাওলাদার ও মাতা মোসাম্মত সাফিয়া বেগম।মহিউদ্দিনরা তিন বোন তিন ভাই।
পাতারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯৫৩ সালে তার শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়। মুলাদি মাহমুদ জান পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৪ সালে বিজ্ঞান বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৬৬ তে তিনি বরিশাল বিএম (ব্রজমোহন) কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৮’র ২ জুন তিনি ইঞ্জিনিয়ার্স কোরে কমিশন লাভ করেন।
ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সোনামসজিদ এলাকাসহ বিভিন্ন রণাঙ্গনে অসাধারণ সাফল্যের কারণে তাঁকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মুক্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
মহানন্দা নদীর তীরে কয়েক কিলোমটারি জুড়ে শত্রু সেনাদের প্রতিরক্ষা লাইন একের পর এক ভেঙে তিনি এগোতে থাকেন। জয় যখন সুনিশ্চিত, ঠিক তখনই শত্রুর বাংকারে চার্জ করার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর। ওই দিনই পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে গেলে মুক্ত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
পরের দিন ১৫ ডিসেম্বর শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের মৃতদেহ ঐতিহাসিক সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে আনা হয়। অসংখ্য স্বাধীনতা প্রেমিক জনগণ, ভক্ত মুক্তিযোদ্ধা, অগণিত মা-বোনের নয়ন জলের আশীর্বাদে সিক্ত করে তাকে এখানে সমাহিত করা হয়।
জেলা প্রশাসন কার্যলয় সূত্রে জানা গেছে, শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ রেহাইচরের সড়ক ভবন চত্বরে বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরের শাহাদাতবরণ স্থলে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে সকাল সাড়ে ৮ টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও পুস্পস্তবক অর্পণ, সকাল সাড়ে ১০টায় সোনামসজিদ প্রাঙ্গণে তার ও মেজর নাজমুল হকের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং গণকবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর দোয়া মাহফিল কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
এসব কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ, পুলিশ সুপার এএইচএম আবদুর রকিব ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
আগামীনিউজ/নাসির