ঢাকাঃ সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে চীনা সরকার ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছে, ফলে ধীরে ধীরে জেগে উঠছে বিশ্ব। সুইজারল্যান্ড এবং লিকটেনস্টাইনের তিব্বতী সম্প্রদায় এরইমধ্যে জাতিসংঘের কাছে পাঁচ দফা আবেদন জমা দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে তিব্বতে চীনের সাংস্কৃতিক গণহত্যা এবং ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্যে হস্তক্ষেপ বন্ধ করার দাবি।
কেন্দ্রীয় তিব্বতী প্রশাসন (সিটিএ) জানিয়েছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের সামনে এই সম্প্রদায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে, যেখানে তারা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে তিব্বতে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) কয়েক দশকের নিপীড়নের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। তারা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নয়, রাজনৈতিক কারণে তিব্বতীরা দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
তিব্বত ব্যুরোর একজন প্রতিনিধি বলেন, যতক্ষণ না শান্তিপূর্ণ স্থায়ী সমাধান পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ তিব্বতে শান্তি, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের আন্দোলন টিকে থাকা উচিত।
পরে কমিউনিটির প্রেসিডেন্ট কর্মা চোয়েকি তিব্বত ব্যুরো জেনেভা কর্মীদের সাথে মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের জাতিসংঘ কার্যালয়ের একজন প্রতিনিধির সাথে দেখা করেন এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটকে উদ্দেশ্য করে চার পৃষ্ঠার একটি আপিল জমা দেন। আপিলে জাতিসংঘকে নীরবতা বেঙে তিব্বত সম্পর্কে সরব হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি তিব্বত সরকারের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা পেপ্পা সেরিং আন্তার্জাতিক সম্প্রদায়কে চীনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। পেপ্পা সেরিং বলেন, 'তিব্বতে ‘সাংস্কৃতিক গণহত্যার’ একটি হুমকি রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই ২০২২ বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকের আগে চীনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। তারা চীনের সাথে শান্তিপূর্ণ সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, কিন্তু বেইজিংয়ের বর্তমান নীতি তিব্বতী সংস্কৃতির ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।'
ভারতের ধর্মশালা থেকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সেরিং আরও বলেন, 'সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। একবার এটি নির্মূল হয়ে গেলে, কোন কিছুর জন্য লড়াই করার কোন মানে হয় না। একটি একক সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা একটি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে পুরোপুরি অপ্রতিরোধ্য করে তোলে, যা সাংস্কৃতিক গণহত্যার সমান, বিশেষ করে যখন এটি রাষ্ট্র দ্বারা প্রয়োগ করা হয়।'
তিব্বতের অধিকার গোষ্ঠী এবং তিব্বতীরা বলছে, সরকার ধর্ম, ভাষা শিক্ষা এবং শ্রমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ রেখেছে। তবে তিব্বতী জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবিযোগ অস্বীকার করে বেইজিং। তারা বলছে, চীন যা করছে তা দারিদ্র্য দূর করার জন্য এবং জনগণ তা সমর্থন করে।
উল্লেখ্য, চীনা সৈন্যরা ১৯৫০ সালে তিব্বত দখল করে। বেইজিং এটাকে ‘শান্তিপূর্ণ মুক্তি’ বলে অভিহিত করে। ১৯৫৯ সালে তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দলাই লামা চীনা শাসনের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের ডাক দেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে বর্তমানে ভারতে নির্বাসনে আছেন। এ পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ তিব্বতী নির্বাসনে বাস করছেন।