ঢাকাঃ স্বপ্নের আরেক প্রকল্প মেট্রোরেল। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর চলতি বছরেই ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে কাজ। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৫৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। ইতোমধ্যেই মেট্রোরেলের প্রথম সেট জাপানের কোবে বন্দর থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে গত ৪ মার্চ যা ঢাকায় পৌঁছার সম্ভাব্য তারিখ আগামী ২৩ এপ্রিল।
মঙ্গলবার মেট্রোরেল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এর সবশেষ অগ্রগতি প্রকাশ করে এসব তথ্য জানান।
ভার্চ্যুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও ডিএমটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক জানান, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের কাজের মোট অগ্রগতি ৫৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। এর মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি ৮১ দশমিক ৪২ শতাংশ। এই অংশের ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারের পুরোটাতেই উড়ালপথের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন রেললাইন বসানোসহ অন্যান্য কাজ চলছে। করোনায় প্রকল্পে কর্মরতদের নিয়ে কোম্পানির এমডি আরও জানান, প্রকল্পের অধীনে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৩৪৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে দেশী-বিদেশী প্রকৌশলীরাও আছেন। সম্প্রতি ছয়জন বিদেশী প্রকৌশলী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মেট্রোরেল প্রকল্পে কর্মরত সব বিদেশী প্রকৌশলীকে ১৭ মার্চ থেকে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া শুরু হবে।
ডিএমটিসিএলের সর্বশেষ প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ বা বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের সার্বিক গড় অগ্রগতি ৫৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৮১ দশমিক ৪২ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৫৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক (রেলকোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৪৯ শতাংশ। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসরণে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬ বর্ধিত করার জন্য সোশ্যাল স্টাডি, অংশীজনসভা ও হাউজহোল্ড সার্ভে সম্পূর্ণ হয়েছে। বর্তমানে বেসিক ডিজাইন ও ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান। এ অংশের দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, করোনার সংক্রমণ শুরুর পর গত বছর এপ্রিল ও মে মাসে মেট্রোরেলের কাজ বন্ধ থাকে। পরে চালু হলেও বিদেশী কর্মীদের অনেকেই নিজ নিজ দেশে চলে যাওয়ায় কাজে গতি হারায়। একপর্যায়ে গাবতলী ও উত্তরায় দুটি ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ করে কর্তৃপক্ষ। করোনার আগে মেট্রোরেল প্রকল্পে প্রায় ১০ হাজার লোক কাজ করছিলেন। তাঁদের তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। এগুলো হচ্ছে পরামর্শক, ঠিকাদার, ঠিকাদারের সহযোগী (সাবকন্ট্রাক্টর)। এর মধ্যে পরামর্শকদের প্রায় সবাই বিদেশী। অল্প কিছু দেশীয় পরামর্শক আছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে বিদেশী ও দেশী সব মানুষই আছেন।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের ছাদ নির্মাণের কাজ চলছে। উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ কাজ সমাপ্ত। উত্তরা উত্তর স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। উত্তরা উত্তর ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনে স্টিল স্ট্রাকচার ইরেকশন কাজ চলমান। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনে বৈদ্যুতিক সাব- স্টেশন, সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন এবং স্টেশন কন্ট্রোলার কক্ষ নির্মাণ কাজ চলমান। মেট্রোরেল নির্মাণে স্বাভাবিক পানির প্রবাহ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় তা বিবেচনায় পাঁচটি লং স্প্যান ব্যালান্স ক্যান্টিলিভারের মধ্যে তিনটি সমাপ্ত হয়েছে।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন বর্ষ ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মেট্রোরেল প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে। ঢাকার যানজট নিরসন ও নগরবাসীর যাতায়াত আরামদায়ক, দ্রুততর ও নির্বিঘ্ন করতে ২০১২ সালে গৃহীত হয় মেট্রোরেল প্রকল্প। ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রত্যেকটি ট্রেনে থাকবে ৬টি করে কার। যাত্রী নিয়ে ঘণ্টায় ১শ’ কিলোমিটার বেগে ছুটবে এ ট্রেন। উভয়দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহনে সক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের।
আগামীনিউজ/এএইচ