ঢাকাঃ বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি, সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে ব্যাংকিংখাতে আইনের লঙ্ঘন ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাত্রা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
আজ মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) ‘খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা এবং সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়।
টিআইবির পরিচালক (গবেষণা ও পলিসি) মোহাম্মদ রফিকুল হাসান প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
টিআইবি বলছে, বিভিন্ন সময়ে খেলাপি ঋণ হ্রাস এবং ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও, তা কার্যকর না করে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বার বার ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ ও পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালের মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নির্দেশনায় খেলাপি ঋণের মাত্র ২ শতাংশ ফেরত দিয়ে পুনঃতফসিলি করার মাধ্যমে ১০ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়। এভাবে পুনঃতফসিলের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায় না করেই গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমিয়ে গত মার্চ পর্যন্ত ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ হিসেবে দেখানো হয়, যা জুন ২০২০-এ ফের বেড়ে দাঁড়ায় ৯৬ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী জুন ২০১৯ পর্যন্ত প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি নীতি ও কৌশলগুলোতে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকিংখাত সংস্কার ও নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের অধিকতর সুশাসনের কথা বলা হলেও এগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি, সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি এবং রাজনৈতিক প্রভাব ও হস্তক্ষেপের কারণে ব্যাংকিংখাতে আইনের লঙ্ঘন ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাত্রা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার মাধ্যমে কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপের মাধ্যমে ব্যাংকিংখাতে পরিবারতন্ত্র বা গোষ্ঠীতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি উভয় ধরনের ব্যাংক থেকে আমানতকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ হিসেবে নিজেদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের দখলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
উদাহরণ হিসাবে বলা হয়- একটি ব্যবসায়ী গ্রুপ ১৪টি প্রতিষ্ঠানের নামে একটি ব্যাংকের ২৮ শতাংশ এবং ৭টি প্রতিষ্ঠানের নামে অপর একটি ব্যাংকের ১৪ শতাংশ শেয়ার ক্রয় করে।
এভাবে একই ব্যবসায়ীর হাতে ৯টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ দেখা গেছে।
এ বিষয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে যথাযথ পদক্ষেপ না নিয়ে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ খেলাপিদের অনুকূলে বার বার আইন সংশোধন ও নীতি প্রণয়ন ব্যাংকিংখাতকে ঋণ খেলাপিবান্ধব করেছে এবং খেলাপি ঋণকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করেছে। যা নিয়মিত ঋণ গ্রহীতাকে খেলাপি হতে উৎসাহিত করছে। এসব কারণে সৃষ্ট বিপুল পরিমাণে খেলাপি ঋণ ব্যাংকিংখাতে বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে চরম মূলধন সংকট তৈরি করেছে।
আগামীনিউজ/আশা