দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় ৭টি জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া জানান, লালমনিরহাট ও নীলফামারীর বন্যা পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোতে পানি বাড়া অব্যাহত থাকতে পারে আরো তিন দিন।
শনিবার (২৭ জুন) সকাল পর্যন্ত দেশের নদ-নদীগুলোর ১০১টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৭৮টি পয়েন্টে পানি বাড়ছিল। এর মধ্যে ৯টি স্টেশনে পানি বইছিল বিপদসীমার উপর দিয়ে।
ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার নদ-নদীগুলোর মধ্যে ধরলা কুড়িগ্রাম পয়েন্টে বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার, তিস্তা নদী নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার, বহ্মপুত্র নদ কুড়িগ্রামের নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার এবং চিলমারী পয়েন্টে ৩৫ সেন্টিমিটার, যমুনা নদী গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার এবং জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল।আর মেঘনা অববাহিকার নদ-নদীগুলোর মধ্যে সুরমা নদী সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদী সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার এবং যাদুকাটা নদী সুনামগঞ্জের লরেরগড় পয়েন্টে বিপদসীমার ১২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যমুনা নদী বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর পয়েন্টে এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমা পেরিয়ে যেতে পারে। এছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কুশিয়ারা, সোমেশ্বরী এবং ভুগাই-কংশ নদীর পানি কয়েকটি পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। তিস্তার পানির সমতল এই সময়ে স্থিতিশীল থাকলেও ধরলায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে, কোনো কোনো পয়েন্টে বিপদসীমাও পেরিয়ে যেতে পারে।
সুনামঞ্জে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শহরের নদী তীরবর্তী নবীনগর, ষোলঘর, কাজিরপয়েন্ট, উকিলপাড়া, উত্তর আরপিননগর, তেঘরিয়া, পশ্চিমবাজার এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে এসব এলাকার অনেক সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন হচ্ছে। অনেক দোকনপাট এবং ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে গেছে।
ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের পাঁচ উপজেলায় সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বন্যায় নতুন নতুন এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় চার লক্ষাধিক মানুষ।
কুড়িগ্রামে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে গত শুক্রবার থেকে। এই দুই নদীর অববাহিকার দুই শতাধিক চর প্লাবিত হয়ে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী জীবনযাপন করছে। পাট, ভুট্টা, সবজি ক্ষেত ও বীজতলা, এবং তিল, আউশ ধান ও কাউনের ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, করতোয়া ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সদর, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার পাট, কাউন, চিনাসহ বিভিন্ন ফসল ক্ষেত ডুবে গেছে। পানি উঠেছে চর এলাকায় নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট ঘরবাড়িতে।
নীলফামারীতে তিস্তার তীরবর্তী ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। মানুষকে উচুঁ জায়গায় সরে যেতে বলেছে স্থানীয় প্রশাসন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার (২৮ জুন) কুমিল্লা অঞ্চলসহ, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বৃষ্টিপাত হতে পারে।
জুন মাসের দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, মৌসুমি ভারী বর্ষণের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের কিছু স্থানে স্বল্প মেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
আগামীনিউজ/জেএফএস