ঢাকা : পদ্মা সেতু এখন স্বপ্ন পূরণের খুব কাছাকছি। করোনাভাইরাসের প্রভাব কিছুটা পদ্মা সেতুতে পড়লেও কাজের গতি থেমে নেই। বসছে একর পর এক স্প্যান। সেই সাথে এগিয়ে চলছে পিলার নির্মাণের কাজ। পদ্মা সেতুর আর মাত্র একটি পিলার সম্পন্ন হতে বাকী।
গতকাল সোমবার (১৬ মার্চ ) রাতে সম্পন্ন হয়েছে ২৭ নম্বর পিলার বা ৪১তম পিলারটি। এ নিয়ে পদ্মা সেতুর মূল ভিত বা খুঁটির ৪২টির মধ্যে ৪১টিই সম্পন্ন হলো। সর্বশেষ ২৬ নম্বর বা ৪২তম খুঁটিটি আগামী মাসের মাঝামাঝি পূর্ব নির্ধারিত সিডিউল অনুযায়ীই সম্পন্ন হতে চলেছে। মাত্র দুটি স্তরের ঢালাই শেষ করলেই সর্বশেষ পিলারটি পুরোপুরি সম্পন্ন হবে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের জানান, আগামী ৩১ মার্চ ২৭তম স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ‘৫সি’ নম্বর এই স্প্যান বসছে ২৭ ও ২৮ নম্বর খুঁটিতে। পাঁচ নম্বর মডিউলের ‘সি’ স্প্যানটি একেবারে তৈরি করে জেডির সামনে রাখার কারণেই এটি আগে স্থাপন করতে হচ্ছে। তাই ২৭ নম্বর খুঁটি সম্পন্ন হওয়ায় ৩১ মার্চ ২৭তম স্প্যানটি বসানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে।
তিনি আরো জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে তিনটি স্প্যান বসলেও মার্চে বসছে দুটি স্প্যান। গত ১০ মার্চ ২৮ ও ২৯ নম্বর পিলারে ‘৫ডি’ নম্বরের ২৬তম স্প্যানটি বসানো হয়। এতে সেতুর ৩৯০০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হতে এখন আর মাত্র ১৫টি স্প্যান বসানো বাকি।
নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পদ্মা সেতুতে মোট ৪১টি স্প্যান বসবে। যার ২৬টি ইতিমধ্যে বসানো হয়ে গেছে। ৪১টি স্প্যানের মধ্যে এরই মধ্যে মাওয়ায় পৌঁছে গেছে ৩৯ স্প্যান। বাকি রয়েছে মাত্র ‘২ই’ ও ‘২এফ’ নম্বরের দুটি মাত্র স্প্যান। আগামী ২০ এপ্রিল এ দুটি স্প্যান চীন থেকে জাহাজে করে মাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হবে। চীনে করোনাভাইরাসের কারণে এই দুটি স্প্যান বসাতে বিলম্ব হচ্ছিল। তৈরি হয়ে যাওয়া এই স্প্যানের বাকি ছিল শুধু পেন্টিংয়ের কাজ। তবে সুখবর হচ্ছে, চীনে করোনার প্রভাব হ্রাস পাওয়ার পর এখন আবার পেইন্টিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি আরো জানান, চৈনিক নববর্ষের ছুটিতে চীনে গিয়ে যেসব কর্মীরা আটকে গিয়েছিলেন তাদের অনেকে ফিরে এসে ‘সঙ্গনিরোধ’ সফলভাবে সম্পন্ন করার পর কাজে যোগ দিয়েছেন। এছাড়া দেশি কর্মী নিয়োগ করে কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।তারপরও ওয়েল্ডিংয়ের কাজে ছয়টি রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে। গত ৮ মার্চ থেকে এই ছয়টি রোবট সফলভাবে কাজ করছে। চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির (এমবিইসি) রোবটগুলো চীন থেকে নিয়ে এসেছে।
এদিকে সেতুতে বসানো স্প্যানে স্ল্যাব বসানোর কাজও এগিয়ে চলছে। সেতুর ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে ৩৫৭টি। তবে রোডওয়ে স্ল্যাব তৈরি হয়ে গেছে ২ হাজার ৪২২টি। বাকি ৪৯৫টি রোডওয়ে স্ল্যাব তৈরির কাজও চলছে পুরোদমে। স্থাপন হয়েছে ‘৭৮৬’ রেলওয়ে স্ল্যাব। তাই পদ্মা সেতু এখন বাস্তবের খুব কাছাকাছি। ইতিমধ্যে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেস খুলে দেয়ায় এর সুফল এখন ভোগ করছে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ। আর আগামী বছর পদ্মা সেতু খুলে দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের সাথে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা হবে আরো সহজ। দিনের মধ্যে কয়েকবার ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে তারা।
আগামীনিউজ/হাসি