ঢাকাঃ বাংলার অন্তর্জাত স্নেহকে যিনি লালন করেছেন পরম যত্নে, তিনি সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। তাঁর সৃষ্টি তাঁকে দিয়েছে অমরত্ব, করেছে অবিনশ্বর। তিনি স্থান করে নিয়েছেন বাংলাভাষা-সাহিত্যের অঙ্গণজুড়ে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার হিরন্ময় এই সাহিত্যিকের ৮৭তম জন্মদিন আজ সোমবার।
সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ছিলেন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। মা হালিমা খাতুন ছিলেন গৃহিণী।
বাংলা সাহিত্যকে যে ক’জন আভিজাত্যের শিখরে তুলে ধরেছেন, তাঁদের মধ্যে সৈয়দ শামসুল হক অন্যতম। স্বকীয় সুর, স্বর, সৃষ্টি আর লেখনিতে এমন সহজিয়া ধরন কেবল তিনিই খুঁজে দিয়েছেন বাঙালিকে।
কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প আর অনুবাদ ছাড়াও বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি আর মুক্তিযুদ্ধ তাঁর রচনার প্রধান অনুসঙ্গ। ‘দেয়ালের দেশ’ দিয়ে লেখা শুরু, মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান সৈয়দ হক। তারপর একের পর এক কালজয়ী সৃষ্টি।
মঞ্চ নাটকে প্রাণসঞ্চারী ভূমিকায় সৈয়দ হকের একেকটা বিরল চিত্রনাট্য। গ্রামীণ জীবনজাত গন্ধ-কলায় তাঁর ডাক পরাণের গহীন থেকে। নিষিদ্ধ লোবান, গণনায়ক তাঁর জীবনঘনিষ্ঠ সাহিত্যকর্ম। কৃষক বিদ্রোহ নিয়ে লেখেন নূরলদীনের সারাজীবন। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ অনবদ্য, বিস্ময়কর।
জীবন এবং শিল্প আবর্তিত হয় তার সৃজিত ‘খেলারাম খেলে যা’-সহ সকল রচনায়; পদ্যে-কবিতায়। সংস্কৃতির যুদ্ধেও অবতীর্ণ হন- গলা ছাড়েন, জাগো বাহে, কোনঠে সবায়।
সেক্সপিয়ারের দ্য টেম্পেস্ট, ম্যাকবেথ ছাড়াও বিশ্বসাহিত্যের নানা রচনা অনুবাদ করেছেন তিনি। সব্যসাচী লিখেছেন গান, সিনেমার চিত্রনাট্য। সমসাময়িক বাংলাদেশ এবং মধ্যবিত্ত সমাজের আবেগ-অনুভূতিতে ছুঁয়ে দিয়েছেন অলৌকিক পরশ।
৬২ বছরের লেখক জীবনে অসংখ্য জাতীয় আর্ন্তজাতিক সম্মাননা ছাড়াও একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন তিনি। এছাড়াও ভূষিত হয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আদমজী সাহিত্য পুরস্কারে।
২০১৬ সালে অনন্তে পাড়ি জমান এই কিংবদন্তী। সাহিত্যের সব ক্ষেত্রে সদর্প বিচরণকারী সৈয়দ হক বেঁচেছিলেন ৮১ বছর।
আগামীনিউজ/নাসির