ঢাকাঃ অনেক সময় সম্পর্ক যখন খারাপ চলতে থাকে তখন সঙ্গী সে সম্পর্ককে ভালো করার বদলে অন্য কোথাও সুখ খোঁজেন। অর্থাৎ সঙ্গী পরকীয়ায় লিপ্ত হন।
স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘প্রিভেনশন ডটকম’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ড. জন মায়ার দুজনের সম্পর্কে প্রতারণা কীভাবে হয় তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে সঙ্গীর সারাদিনের রুটিন জানতে চাওয়ার মতো বিষয়গুলো হতে পারে সম্পর্কে অশনিসংকেত। হয়তো সে আপনার সারাদিনের কর্মকাণ্ড বুঝে নিজের পরিকল্পনা সাজাতে চাইছে’।
সঙ্গী প্রতারণা করছে কিনা তার পূর্বাভাস পেতে যে বিষয়গুলো খেয়াল করবেন সেগুলো হলো-
>> যেকোনো ডিভাইসের গোপনীয়তা নিয়ে প্রতারক সঙ্গীর মাঝে আগের চেয়ে বেশি সতর্কতা লক্ষ্য করা যেতে পারে। মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ইত্যাদি লুকিয়ে ব্যবহার করতে পারে; আবার সেগুলোর ব্যবহার আগের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য ও সেক্স এডুকেটর ড. রবার্ট ওয়েইস ‘সাইকোলজি টুডে ডটকম’-এর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, ‘সঙ্গীর মোবাইলে হয়তো আগে পাসওয়ার্ড থাকত না কিংবা থাকলেও তা আপনার জানা ছিল। হঠাৎ যদি পাসওয়ার্ড যোগ হয় এবং সঙ্গীর ফোন হাতে নিলে তার মাঝে অস্থিরতা কাজ করে, তবে বুঝতে হবে কোথাও কোনো গোলমাল বাঁধছে’।
>> সঙ্গীর সারাদিন কোথায় কীভাবে কাটছে সেটি জানতে চাওয়া হচ্ছে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ। কিন্তু হঠাৎ করে যদি এমন ভালোবাসার উদয় হয়, তবে সেখানে আসতে পারে সন্দেহ।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘রিলেশনশিপ কোচ’ ড. ম্যারি মার্ফির মতে- ‘সন্দেহ তখনই তৈরি হতে পারে, যদি কারও সঙ্গী কখনো তার সারাদিনের রুটিন জানতে আগ্রহ দেখায় না; কিন্তু হঠাৎ করে প্রচণ্ড আগ্রহ তৈরি করে। এর পেছনে সঙ্গীর কোনো চমক দেয়ার ব্যাপার থাকতে পারে, আবার প্রতারণাও হতে পারে। তাই শুধু এই আচরণগত পরিবর্তনের ভিত্তিতে পুরোপুরি সন্দেহ করা ঠিক হবে না’।
>> যুক্তরাষ্ট্রের মনোবিজ্ঞানী পল কোলম্যান বলেন, ‘কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই সঙ্গীর বাসায় ফিরতে দেরি হলে এবং তার কথার সঙ্গে বাস্তবের মিল খুঁজে না পাওয়া গেলে, সঙ্গী প্রতারণা করছে- এমনটি সন্দেহ করা যেতেই পারে’।
তাই সঙ্গীর ব্যস্ততা যদি হঠাৎ করে বেড়ে যায়, এমনকি পরিবারকে দেয়ার মতো সময় যদি তার না থাকে, তবে সঙ্গী হিসেবে আপনাকেই প্রশ্ন করতে হবে তার কোথায় পরিবর্তন এসেছে।
>> সঙ্গী প্রতারণা করে থাকলে, সন্দেহ সৃষ্টি করবে- এমন বিষয় খুব সতর্কভাবে লুকিয়ে রাখে। তবে বন্ধুদের কাছে সেই সতর্কতার মাত্রা অনেকটাই কম থাকে। এমনকি বন্ধুরা প্রতারণা সম্পর্কে জানে এমন সম্ভাবনাও থাকে অনেক সময়।
এ বিষয়ে কোলম্যান বলেন, ‘প্রতারক সঙ্গীর বন্ধুরা যদি তার গোপন কথা জেনে থাকে, তবে অপর সঙ্গীর সঙ্গে সেই বন্ধুদের আচরণে কিছুটা ইতস্ততভাব চোখে পড়ে। ফলে প্রতারক সঙ্গীর যে বন্ধুদের সঙ্গে অপর সঙ্গীর একসময় ভালো সম্পর্ক ছিল, সেই সম্পর্কে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়’।
>> প্রতারক সঙ্গীর নিজের প্রতারণা ধরা পড়ে যাবে, এমন ভয় থেকে উল্টো তার সঙ্গীর ওপরে প্রতারণার অভিযোগ করতে পারে।
নিউইয়র্কয়ের ‘সেক্স এডুকেটর অ্যান্ড লাভ কোচ’ সুজানা ওয়াইজ এ বিষয়ে বলেন, ‘নিজের দোষ ঢাকতে এবং নিজেকে বিশ্বস্ত প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে অনেক সময় প্রতারক নিজের সঙ্গীর ওপর প্রতারণার অভিযোগ তোলেন, সন্দেহ করেন। আবার যেহেতু সে নিজেই প্রতারণা করছে, তাই তার মনে প্রকৃত অর্থেই অপর সঙ্গীর ওপর ভিত্তিহীন সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে’।
>> যেকোনো প্রতারণা লুকাতে অসংখ্য মিথ্যা বলতে হয় এবং নানারকম অজুহাত দেখাতে হতে পারে। কিন্তু সমস্যা তখনই তৈরি হয়, যখন প্রথমবার দেয়া মিথ্যা অজুহাত ভুলে গিয়ে কিছু দিন পর তা পাল্টে যায় বা অন্য কোনো অজুহাত বলা হয়।
এছাড়া তারা নিজের সঙ্গীর সম্পর্কে জানা নানান বিষয় ভুলে যেতে শুরু করে। প্রতারক সঙ্গীর জীবনে আসা নতুন মানুষটির তথ্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে থাকে তখন।