ঢাকাঃ মানহানিকর বক্তব্যের মাধ্যমে হাসপাতালের সুনাম ক্ষুণ্ণের অভিযোগ ডা. সংযুক্তা সাহার বিরুদ্ধে ৫০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছেন সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মাসুদুল হকের আদালতে সেন্ট্রাল হাসপাতালের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক এ মামলা দায়ের করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম সোহেল জানান, মামলাটির জন্য কোর্ট ফি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জবাব দাখিলের জন্য ডা. সংযুক্তার বিরুদ্ধে সমন জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে মামলার বাদী শাহ মঞ্জুরুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা ডা. সংযুক্ত সাহার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছি। আপনারা অবগত আছেন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে মাহবুবা রহমান আঁখি নামে একজন রোগী ও তার নবজাতক ডেলিভারির সময় মারা গেছে। নবজাতক প্রথমে এবং মাহবুবুর রহমান আঁখি এক সপ্তাহ পর মারা যান। এ ঘটনায় হাসপাতালে পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। এ রোগীর একটা সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি হয়েছিল এবং তিনি তার পুরাতন রোগী ছিলেন।
মামলার বাদী বলেন, ওই রোগী কুমিল্লা থেকে এসেছিল ৯ তারিখ সকাল বেলায় তার লেবার পেইন শুরু হয়। সেদিন তিনি কুমিল্লার একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। সেখান থেকে লেবার পেইন নিয়ে রোগী ডা. সংযুক্তার সহকারী জমিরের মাধ্যমে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হয়। হাসপাতালে ভর্তির পর তার নরমাল ডেলিভারি চেষ্টা করা হয়। এতে ব্যর্থ হয়ে একদম শেষ মুহূর্তে সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব করানো হয়। কিন্তু এতে রোগী বা তার নবজাতককে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
মামলার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ঘটনা তদন্তে দুইটি তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে। একটি সেন্ট্রাল হাসপাতালের পক্ষ থেকে এবং অপরটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। তদন্তের পর বুঝা যাবে এই ঘটনার জন্য কে দায়ী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এর সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার চায়। কিন্তু তদন্তের জন্য অপেক্ষা না করেই ডা. সংযুক্ত সাহা সেন্ট্রাল হাসপাতাল কে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে কোন ম্যানেজমেন্ট নেই এবং এই মৃত্যুর জন্য সেন্ট্রাল হাসপাতাল দায়ী। এমনকি হাসপাতালের কাছ থেকে তিনি পর্যাপ্ত ফি পান না বলেও জানিয়েছেন। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
মঞ্জুরুল হক বলেন, ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সেন্ট্রাল হাসপাতাল সুনামের সাথে সেবা দিয়ে আসছে। ড. সংযুক্তা সাহাও গত ১৭ বছর যাবত হাসপাতালটিতে সেবা দিয়ে আসছেন। এতদিনে কখনোই তিনি সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। কিন্তু এই প্রথম একটি মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই যেসব অভিযোগ করেছেন তা হাসপাতালের সুনামের সাথে যায় না। একটি হাসপাতালের জন্য তার সুনাম সবথেকে দামি। এই অবস্থায় হাসপাতালের পক্ষ থেকে আমরা ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছি।
উল্লেখ্য, গত ৯ জুন রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তা সাহার মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রসব করাতে কুমিল্লা থেকে এসে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সন্তানসম্ভবা আঁখি। সে সময় ড. সংযুক্তা বিদেশে ছিলেন। সেদিন ড. সংযুক্তা সাহার সহকারী চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব করানোর পর মারা যায় আঁখির সদ্যোজাত সন্তানটি। আঁখির অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হলে তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ জুন তিনি মারা যান। এ ঘটনায় আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী ধানমণ্ডি থানায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে যে মামলা করেন। এতে চিকিৎসক শাহজাদী, মুনা ও মিলির পাশাপাশি চিকিৎসা সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ব্যবস্থাপক পারভেজকে আসামি করা হয়।
গত ২০ জুন সেন্ট্রাল হাসপাতালের ভুল চিকিৎসায় মাহবুবা রহমান আঁখি ও তার নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালটির বিরুদ্ধে তাকে ফাঁসানোর অভিযোগ তুলেন ডা. সংযুক্তা সাহা। সেই সঙ্গে এই গাইনি রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে তার নাম ও খ্যাতি ব্যবহার করে প্রতারণার অভিযোগ আনেন সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে। পরে সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহার করতে ডা. সংযুক্তা সাহাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বুইউ