লালমনিরহাটঃ দেশে সরকারি প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে বিপুল অঙ্কের অর্থ গচ্চা দেয়ার বিষয়টি নতুন নয়, এটি বহু পুরনো একটি প্রবণতা। মূলত রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় রোধের কথা বিবেচনায় না রাখায় প্রকল্প ব্যয় দিন দিন বাড়ছে। ব্যয় বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ, বাংলাদেশে এখনো প্রকল্পের খসড়া প্রণয়ন ব্যয় প্রাক্কলনে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় না। সবকিছু পরামর্শকের ওপর সব ছেড়ে দেয়া হয়। তারা ইচ্ছামতো ব্যয়ের প্রাক্কলন করে থাকেন। এতে করে শুরুতেই কয়েক গুণ বেশি খরচ ধরার সুযোগ তৈরি হয়।
টেন্ডারপ্রক্রিয়া নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। অভিযোগ রয়েছে, ই-টেন্ডারের আইনি মারপ্যাঁচে ঘুরেফিরে কাজ পাচ্ছে কিছু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ছোট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো দ্বিতীয় পক্ষ হয়ে কাজে অংশ নিচ্ছে। কয়েক হাত ঘুরে বাস্তবায়ন হওয়া উন্নয়ন প্রকল্প সময়মতো শেষ হচ্ছে না। ফলে একই প্রকল্পে বারবার ডিপিপি সংশোধিত হচ্ছে। বাড়ছে প্রকল্পের ব্যয়ও। আর একই প্রতিষ্ঠান বেশি কাজ পাওয়ায় সময়মতো শেষ হচ্ছে না প্রকল্পগুলো। প্রকল্প ব্যয় হ্রাসের উদ্ভাবনী কোনো কার্যকর ভাবনা না থাকায় প্রতি বছর সরকারি হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেই অর্থের বেশির ভাগ চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। এভাবে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থ লুট করা হচ্ছে।
৩০ শে জুন ( বুধবার) বিকেলে লালমনিরহাটে বিএডিসি কর্তৃক বরাদ্দকৃত প্রায় ১০ কিমি খাল খনন প্রকল্প ৭ টি লডে বিভক্ত করে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছেন বিএডিসি কর্তৃক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রকল্পের আওতায় কালীগঞ্জ উপজেলাধীন ৩নং তুষভান্ডার ইউনিয়ন এর ৪নং দক্ষিণ ঘনেশ্যাম এলাকায় বিএডিসি কর্তৃক বরাদ্দকৃত প্রকল্পের আওতায় খাল পুনঃখননের ১ টি লডে ১৯ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়ে কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বুলবুল ট্রেডার্স।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উক্ত ক্যানেলটি পূর্বে যে পরিমান প্রশস্ত ছিল তার চেয়ে সংকুচিত করে কাজ করা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ৮ মিটার প্রশস্ত করার কথা থাকলেও বাস্তবে ৩/৪ মিটার কাজ করা হচ্ছে। কোনরুপ গভীরতা না করেই শুধুমাত্র ২ ধারের মাটি টেনে পাড় বাধা হচ্ছে। কাজটিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও নেই কর্তৃপক্ষের কোন নজরদারী বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় লোকজন।
শুধু তাই নয় কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বুলবুল ট্রেডার্স ১৯ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ কাজটি পেয়ে মাত্র ৫ লক্ষ টাকায় সাব- ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে সাব - ঠিকাদার তুষভান্ডার ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ, ঠিকাদার কত টাকায় কাজ নিয়েছে সেটা আমার জানা নেই। কাজটি আমি পাঁচ লক্ষ টাকায় কন্ট্রাক নিয়েছি।
এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষঠান বুলবুল ট্রেডার্সকে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি বলেন পুরা কাজটি ৭টি লটে বিভক্ত করে ৭জন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে। আমি একটি লডের কাজ করছি মাত্র। কাজটিতে সাব - ঠিকাদার দেয়া হয়েছে কিনা জানতে তিনি বলেন, সাব ঠিকাদার দিয়েছি কিনা সেটা বড় কথা নয় , কাজ হচ্ছে কি না সেটা দেখেন।
লালমনিরহাট বিএডিসি উপসহকারী পরিচালক হুমায়ুন কবিরকে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি বলেন কাজটি আমাদের দপ্তরের নয়, এটি সেচ দপ্তরের বলে তিনি এক্সিসিয়েন্ট এর সহিদ যোগাযোগ করার জন্য বলেন।
এ বিষয়ে অ্যাক্সিয়েন আলতাফকে মুঠোফোনে কল করে তাকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে প্রতারণামূলক আচরণ করেছেন, এলাকাবাসী বলেন, ক্যানেলের পাশে, আমাদের জমি ছিল আমাদের জমির ক্ষেতের ফসল নষ্ট করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পুনঃ খননের কাজ শুরু করে। এতে আমরা বাধা প্রদান করলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস প্রদান করেন। বর্তমানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিজে কাজটি না করে স্থানীয় একজন যুবলীগ নেতাকে সাব - ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে কাজ সম্পন্ন করেছেন।