ঢাকাঃ আরও এক বছর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অ্যালায়েন্সের (ন্যাটো) মহাসচিব পদে থাকছেন জিনস স্টলটেনবার্গ। মঙ্গলবার ন্যাটোর ৩১টি সদস্যরাষ্ট্রের বৈঠকে নেওয়া হয়েছে এই সিদ্ধান্ত।
চলতি বছর সেপ্টেম্বরেই ন্যাটোর মহাসচিবের পদ থেকে বিদায় নেওয়ার কথা ছিল স্টলটেনবার্গের; কিন্তু মঙ্গলবারের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে, ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর পর্যন্ত এই পদে বহাল থাকবেন তিন।
ইউরোপের স্ক্যান্ডিনেভীয় অঞ্চলের দেশ নরওয়ের সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্টলটেনবার্গ প্রথমবার ন্যাটোর মহাসচিব হন ২০১৪ সালে। এর আগে এ পদে তিন বার মেয়াদ বেড়েছে তার, এই নিয়ে চতুর্থ বার বৃদ্ধি পেল।
জোটের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর এই সিদ্ধান্তে সম্মানিত বোধ করছে উল্লেখ করে এক বার্তায় স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘(এই সিদ্ধান্তে) আমি খুবই সম্মানিত বোধ করছি। ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার মধ্যকার এই ট্রান্সআটলান্টিক জোট গত ৭৫ বছর ধরে আমাদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যাচ্ছে।’
‘এবং বর্তমান সময়ে— বিশ্ব যখন দিন দিন আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে, তার সঙ্গে তাল রেখে এই জোটের গুরুত্বও বাড়ছে।’
জিনস স্টলটেনবার্গের জন্ম ১৯৫৯ সালে, নরওয়ের রাজধানী অসলোতে। তার বাবা থরভাল্ড স্টলটেনবার্গ ছিলেন দেশিটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল লেবার পার্টির একজন অগ্রসারির নেতা। নিজের ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময়ে নরওয়ের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
আর তার মা ক্যারিন স্টলটেনবার্গ ছিলেন জিনতত্ত্ববিদ। গত শতকের আশির দশকে বিভিন্ন সরকারের আমলে রাষ্ট্রের মুখ্য সচিবের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।
স্টলটেনবার্গের নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৯০ সালে। ওই বছর তিনি লেবার পার্টির যুব শাখা ওয়ার্কার্স ইউথ লীগের প্রেসিডেন্ট হন। তারপর ১৯৯৬ সালে নরওয়ের অর্থমন্ত্রী এবং ২০০০ সালে প্রথমারের মতো নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী হন। তবে প্রথম মেয়াদে মাত্র এক বছর প্রধামন্ত্রী ছিলেন তিনি।
পরে ২০০৫ সালে ফের নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী হন তিনি এবং ২০১৩ সাল পর্যন্ত এই পদে থাকেন। তারপর ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো ন্যাটোর মহাসচিব হন জিনস স্টলটেনবার্গ।
একজন অবিচল, ধৈর্যশীল এবং গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন নেতা হিসেবে ইতোমধ্যে সুনাম অর্জন করেছেন স্টলটেনবার্গ। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় ন্যাটোর অন্যান্য সদস্যরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের। সেই দ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, এক পর্যায়ে অনেক সদস্যরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রকে ন্যাটো থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাতে উদ্যত হয়েছিল। সে সময় জোটের সংহতি রক্ষায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্টলটেনবার্গ।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মনযোগ তিনি আকর্ষণ করেছেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময়। ইউক্রেন ও ন্যাটোর অনেক সদস্যরাষ্ট্রের একাধিকবার উসকানি সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাত থেকে ন্যাটোকে মুক্ত রাখতে পারার ব্যাপারটি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক বলয়ে তার গ্রহণযোগ্যতা আরও বৃদ্ধি করেছে।
সূত্র : রয়টার্স
এমআইসি