ঢাকাঃ যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রাথমিক যুদ্ধে জিতে, চূড়ান্ত পর্বের লড়াইয়ে ঢুকে পড়লেন ঋষি সুনাক। প্রথম চার রাউন্ডেই মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, চূড়ান্ত রাউন্ডে তিনি পৌঁছাবেনই। প্রশ্ন ছিল, কে হবেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী। শেষ পর্যন্ত ঋষির সঙ্গে লড়াই হতে যাচ্ছে লিজ ট্রাসের।
তবে পঞ্চম রাউন্ডের ভোটাভুটিতে ছিটকে গেলেন আর এক নারী প্রতিদ্বন্দ্বী পেনি মডান্ট। এই রাউন্ডে কনজারভেটিভ বা টোরি এমপিদের মধ্যে ১৩৭ জন ভোট দিয়েছেন ঋষিকে। লিজ পেয়েছেন ১১৩ ভোট। পেনি ১০৫টি ভোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড় থেকে।
প্রথম থেকে পঞ্চম রাউন্ড পর্যন্ত লড়াইয়ে ভোট দিয়েছেন কনজারভেটিভ পার্টির এমপিরাই। আসল লড়াইটা হতে যাচ্ছে এ বার। শুধু ব্রিটেনের হাউস অব কমন্সে নির্বাচিত দলীয় এমপিরাই নন, এ বার চূড়ান্ত পর্বে ভোট দেবেন কনজারভেটিভ পার্টির দেড় লক্ষাধিক সদস্য। এই সংখ্যা কত তা নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। ২০১৯ সালে বরিস জনসনকে নির্বাচিত করার সময় দলের সদস্য সংখ্যা ছিল এক লাখ ৬০ হাজার। বিবিসির ধারণা, এই সংখ্যা এ বার বেড়েছে।
করোনা লকডাউনের নিয়ম ভঙ্গসহ নানা কেলেংকারিতে বিপর্যস্ত জনসন আইনপ্রণেতাদের সমর্থন হারানোর পর গত ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরেই দলের অন্দরে পরবর্তী নেতার খোঁজ শুরু হয়। বুধবার ঋষি সুনাক এক টুইটার পোস্টে লেখেন, ‘সহকর্মীরা আস্থা রাখায় আজ আমি কৃতজ্ঞ। সারাদেশে আমাদের বার্তা ছড়িয়ে দিতে আমি রাত দিন কাজ করবো’।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লড়াইয়ে নামেন ১১ প্রার্থী। কয়েক ধাপের ভোট পেরিয়ে টিকে থাকারা বুধবার চূড়ান্ত পর্বের জন্য ভোটে নামেন। এই ভোটে জুনিয়র বাণিজ্যমন্ত্রী পেন্নি মরডাউন্ট বাদ পড়েন। ঋষি সুনাক ১৩৭ ভোট, ট্রাস ১১৩ এবং মরডাউন্ট ১০৫ ভোট পান।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা হবে ৫ সেপ্টেম্বর। যেই নির্বাচিত হোক না কেন তাকে গত কয়েক দশকের মধ্যে ব্রিটেনের সবচেয়ে বাজে অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে হবে। প্রবৃদ্ধি থমকে গেছে, মুদ্রাস্ফীতি ১১ শতাংশে পৌঁছানোর অপেক্ষায়, শিল্প কার্যক্রমে গতি নেই, ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের দর ঐতিহাসিক পর্যায়ে নেমে গেছে।
জনসনের নেতৃত্বে এবং ট্রাসের সহায়তায় ব্রেক্সিট পরবর্তী আলোচনায় উত্তর আয়ারল্যান্ড ঘিরে ব্রাসেলসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় যুক্তরাজ্য। এতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে আর ভবিষ্যতের বাণিজ্য চুক্তি হুমকির মুখে পড়েছে।
জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে দলের সদস্যদের ভোটে ঋষি সুনাককে হারিয়ে জয়ী হবেন ট্রাস। এতে ওয়েস্টমিনিস্টারে আইনপ্রণেতাদের মধ্যে কম জনপ্রিয় প্রার্থী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত হবে।
তবে যেই নির্বাচিত হোক যুক্তরাজ্য এবার হয় প্রথম ভিন্ন বর্ণের প্রধানমন্ত্রী কিংবা তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী পেতে যাচ্ছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ঋষি ২০১৫ সালে প্রথম ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ড থেকে ব্রিটেনের পার্লামেন্টের সদস্য হয়েছিলেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী (চ্যান্সেলর অব দ্য এক্সচেকার) পদে তাঁকে নিযুক্ত করেছিলেন। গত ৫ জুলাই সেই পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। তার পরপরই ইস্তফা দেন বরিস।
প্রাথমিক রাউন্ডগুলিতে অনেকটা এগিয়ে থাকলেও, চূড়ান্ত রাউন্ডে ইনফোসিস প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির জামাই ঋষির লড়াই বেশ কঠিন। বুকিদের বাজিতে তাঁর পক্ষে দর এখনও পর্যন্ত খারাপ। কারণ হিসাবে ঋষির বর্ণ-পরিচয়ের কথা উঠে আসছে। এখনও পর্যন্ত কোনও অশ্বেতাঙ্গ ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী হননি। যে দেড় লক্ষাধিক কনজারভেটিভ সদস্যের ভোট এ বার দুই প্রার্থীর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে, তাতে অশ্বেতাঙ্গ ভোটার নগণ্য। ২০১৯ সালে ছিল তিন শতাংশের মতো।
ব্রিটেনের সমাজে বর্ণগরিমা বা বর্ণবিদ্বেষের মনোভাব কমছে বলে অনেকে মনে করেন। রাজপরিবারে কৃষ্ণাঙ্গ বধূকে বরণ করে নেওয়া, বা ঋষি সুনকের এত দূর উঠে আসার মধ্যে সেই ইঙ্গিত মিলেছেও। সত্যিই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি প্রধানমন্ত্রী হলে, তা ইতিহাস তৈরি করবে সন্দেহ নেই। ব্রিটেনের প্রথম অশ্বেতাঙ্গ রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে আমেরিকার বারাক ওবামার সঙ্গে তাঁর নাম উচ্চারিত হবে। আর তিনি হারলে, ব্রিটেন তার ইতিহাসে পাবে তৃতীয় মহিলা প্রধানমন্ত্রীকে।
এমবুইউ