ঢাকাঃ নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হওয়া শ্রীলঙ্কার হাজার হাজার বিক্ষোভকারী পুলিশি প্রতিবন্ধকতা গুঁড়িয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়েছেন। বিক্ষোভকারীদের আগ্রাসী এই পদক্ষেপের মুখে বাসভবন ছেড়ে পালিয়েছেন গোতাবায়া রাজাপাকসে।
সামরিক বাহিনীর সহায়তায় শুক্রবারই গোতাবায়া সরকারি বাসভবন ত্যাগ করেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স। শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দু’টি সূত্র জানায়, গোয়েন্দাদের কাছ থেকে শনিবারের বিক্ষোভের খবর পেয়ে শুক্রবার সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিজের বাসভবন ত্যাগ করেন গোতাবায়া।
বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন, তা উল্লেখ করেনি মন্ত্রণালয়ের সূত্র। তবে জানিয়েছে— তিনি নিরাপদে আছেন।
দেশটির শীর্ষ এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে আন্দোলনের মুখে কার্যালয় ছেড়ে পালিয়েছেন। তবে তিনি ভালো আছেন বলে জানা গেছে।
দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে থাকা শ্রীলঙ্কার জনগণ আবারও ফুঁসে উঠেছে। অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলার ঢেউ আছড়ে পড়েছে রাজনীতিতেও। এর আগে জনগণের ক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ও প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার ভাই। তাতেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি।
এবার দেশটির প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চাইছেন তারা।
শ্রীলঙ্কার একটি বেসরকারি সম্প্রচারমাধ্যম সিরাসা টিভিতে প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায় যে, এক সময়ে কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত প্রেসিডেন্ট প্যালেসে ঢুকে পড়ছে ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার সকালে গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের উদ্দেশে রাজধানী কলম্বোতে যে মিছিলটি বের হয়, সেটি চলতি বছরের সবচেয়ে দীর্ঘ মিছিল ছিল।
শনিবার রাজধানী কলম্বোতে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। এর এক পর্যায়ে বিক্ষোভ থেকে প্রেসিডেন্টের বাসভবন অভিমুখে যাত্রা করেন তারা। এ সময় পুলিশি প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বাসভবনে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা।
পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ এগিয়ে এলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘাত হয় তাদের। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সংঘাতে আহত হয়ে অন্তত ২১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ২ জন পুলিশ সদস্য।
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গোলযোগের মধ্যে পড়ে নাভিশ্বাস উঠে গেছে শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষের। খাদ্যপণ্যের আকাশচুম্বী দাম, লোডশেডিং, জ্বালানি তেলের সংকট, পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে দেশটিতে। দৈনন্দিন জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের।
২৬ বছর ধরে সামরিক অভিযান পরিচালনার পর শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনী ২০০৯ সালের তামিল টাইগারদের পরাজিত করার মাধ্যমে গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে সক্ষম হয়। আর সেই গৃহযুদ্ধে বিজয় আসে প্রধানমন্ত্রী এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের শাসনকালে। পরবর্তীতে আবারও নির্বাচনে জয়ী হয় এই পরিবার। ফলে দীর্ঘমেয়াদে শাসনভার পরিচালনার কারণে দুর্নীতিসহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
এমবুইউ