ঢাকাঃ বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ মাথায় নিয়ে বাংলাদেশ থেকে পালানো প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ভারতের ব্যাঙ্কশাল স্পেশাল সিবিআই কোর্ট। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
শনিবার (১৪ মে) দিনগত গভীর রাতে পি কে হালদারসহ ছয়জনকে ব্যাঙ্কশাল সিবিআই কোর্টে হাজির করা হয়। এরপর আদালত তাদের তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ অনুরোধে তড়িঘড়ি অনলাইনে পেপার সাবমিট করে স্পেশাল সিবিআই কোর্টে ওই ছয়জনকে হাজির করা হয়। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে এই খবর চেপে রাখা হয়েছিল।
রোববার (১৫ মে) সকালে অর্থ-সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি) জানায়, পি কে হালদারকে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে নিজেদের হেফাজতে রেখেছে ইডি। একইসঙ্গে প্রাণেশ হালদার ওরফে প্রীতিশের স্ত্রীকে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়েছে।
ভারতীয় বাংলা সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনের খবরে বলা হয়, শনিবার (১৪ মে) গ্রেফতারের পর পি কে হালদারসহ ছয়জনকে পশ্চিমবঙ্গের ব্যাঙ্কশালের আদালতে নেয় ইডির কর্মকর্তারা।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘বাংলাদেশের ওই ব্যাংকের ১০ হাজার কোটি টাকা প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। মূল অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার হালদার, তার ভাই গণেশ হালদারসহ বাংলাদেশের বাসিন্দা ইমাম হোসেন, স্বপন মৈত্র, উত্তম মৈত্র এবং আমানা সুলতানা ওরফে শর্মি হালদারকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
শুনানি শেষে বিচারক শর্মিকে ১৭ মে পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। অন্য পাঁচজনকে তিন দিন করে রিমান্ড আদেশ দেন।
শনিবার (১৪ মে) সকালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অভিযান চালিয়ে পি কে হালদারকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানায় দেশটির গণমাধ্যমগুলো। ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট (ইডি) বিভাগের ওই অভিযানে পি কে হালদার ছাড়াও তার ভাইসহ মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, শিব শংকর হালদার নামে ছদ্মবেশ ধরে ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আত্মগোপনে ছিলেন পি কে হালদার।
এর আগে শুক্রবার (১৩ মে) দেশটির উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের বেশ কয়েকটি বাসায় ওই অভিযান চালানো হয়। একই সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কয়েকটি এলাকাতেও পি কে হালদারকে গ্রেফতারে অভিযান চালানো হয় বলে খবর প্রকাশ করেছিল ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো।
পৃথক ওই অভিযানে পি কে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধা, পৃতিশ কুমার হালদার, প্রাণেশ কুমার হালদার ছাড়াও তাদের সহযোগীদের নামে থাকা বাড়ি ও সম্পত্তিতে হানা দিয়েছিল ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট (ইডি) বিভাগ।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ পর্যন্ত মোট ৩৪টি মামলা করেছে দুদক। এগুলোর মধ্যে একটির অভিযোগপত্র আদালতে দাখিলও করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আরও তিনটি অভিযোগপত্র কমিশনের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।
মামলায় আসামিদের মধ্যে ১৩ জনকে ইতোমধ্যেই গ্রেফতার ও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১১ জন আসামি আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি ৬৪ জনের বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আদালতে।
এছাড়া এখন পর্যন্ত আলোচিত এই অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পি কে হালদারের ৮৩ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা মূল্যের জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে।
এমএম