ঢাকাঃ উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে বিতর্কিত সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত মাসে ক্ষমতাচ্যুত হন প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লাহ হামদক। এ দিকে সামরিক কাউন্সিলের সঙ্গে এক চুক্তির মাধ্যমে রোববার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্বহাল হওয়া পর হামদকের মন্ত্রিসভার ১২ সদস্য পদত্যাগ করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। সামরিক কাউন্সিলের সঙ্গে রাজনৈতিক চুক্তির প্রতিবাদে তারা এক সঙ্গে পদত্যাগ করেন। তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে তথ্যটি জানানো হয়।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দুই পক্ষের মধ্যে হওয়া এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। যদিও সুদানের রাজনৈতিক শক্তিগুলো এই চুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা জানান, এটি সামরিক অভ্যুত্থানকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা। মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) তারা মন্ত্রিসভার বৈঠকেও অংশ নেননি। তবে কি কারণে তারা পদত্যাগ করেছেন সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দেননি।
পদত্যাগ করা মন্ত্রীদের মধ্যে পররাষ্ট্র, বিচার, কৃষি, সেচ, বিনিয়োগ ও জ্বালানিমন্ত্রী রয়েছেন। মন্ত্রণালয়গুলোর পাঠানো বিবৃতিতে তথ্য জানানো হয়। শিক্ষা, শ্রম, পরিবহন, স্বাস্থ্য, যুব ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রীরাও পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
গেল ২৫ অক্টোবর সেনা অভ্যুত্থানের আগে সুদানে হামদকের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছিল। বর্তমানে পদত্যাগ করা মন্ত্রীরা ওই সরকারেরই অংশ হিসেবে এসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত সুদানের প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লাহ হামদক গত রবিবার স্বপদে ফেরেন। দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক সরকারের চুক্তির পর তাকে স্বপদে পুনর্বহালের ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, সেনা অভ্যুত্থানের এক মাস পর রাজধানী খার্তুমে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ১৪ শর্তের ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে আব্দাল্লাহ হামদককে প্রধানমন্ত্রী পদে পুনর্বহালের কথা বলা হয়। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, চুক্তিতে সামরিক অভ্যুত্থানের সময় আটক রাজবন্দিদের মুক্তির নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। পাশাপাশি দেশটির রাজনৈতিক উত্তরণের ভিত্তি হিসেবে ২০১৯ সালের সাংবিধানিক ঘোষণার কথা উল্লেখ করা হয়। সুদানে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে সাধারণ নাগরিকসহ বিরোধীরা বিক্ষোভ শুরু করে। আন্দোলন থামাতে সামরিক সরকার নাগরিকদের ওপর গুলি চালায়। পক্ষ দুটির মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ৪০ জন।
গত ২৫ অক্টোবর দেশটির শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের বন্দি করে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। সে সময় প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লাহ হামদককে গৃহবন্দি ও বেশ কয়েকজন মন্ত্রীকে গ্রেফতারের পাশাপাশি দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন তিনি। অরাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিন্দার ঝড় ওঠে। সুদানে গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠায় সরব হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা।
উল্লেখ্য, সুদানে তিন দশক যাবত প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় ছিলেন ওমর আল-বশির। ২০১৯ সালে ওমর আল-বশির সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর ক্ষমতা ভাগাভাগি করে দেশ পরিচালনা করছিল সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক সরকার।
আগামীনিউজ/নাসির