ঢাকাঃ রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে আন্দামান সাগরে একটি ট্রলারে পাড়ি দেওয়া ৮১ জন রোহিঙ্গার কপালে কী ঘটতে চলেছে তা এখনো নির্ধারিত হয়নি।
জানা গেছে, তিন সপ্তাহ ধরে এখনো তারা আন্দামান সাগরেই ভাসছে। তাদের উদ্ধার করতে সমুদ্র উপকূলবর্তী রাষ্ট্র ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার কাছে আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। কিন্তু তারা ভারতীয় জলসীমায় অবস্থান করায় ট্রলারে তাদের খাবার, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় মানবিক সহযোগিতা দিচ্ছে ভারতীয় কোস্টগার্ড় ও নৌবাহিনী। কিন্তু ভারতও এসব রোহিঙ্গাদের স্থলসীমায় নিতে সম্মত হয়নি। শুধু তাই নয়, কোনো দেশই এসব রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। তাহলে এসব রোহিঙ্গাদের ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রোহিঙ্গাদের নিয়ে ট্রলারটি বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে ছেড়ে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। ট্রলারটিতে ৫৬ জন নারী, ৮ জন কিশোরী, ৫ জন কিশোর ও ২১ জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ছিলেন। সাগরে যাত্রা শুরুর চার দিন পর নৌকাটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এরপর সাহায্যের অনুরোধ পেয়ে ভারতীয় কোস্ট গার্ডের জাহাজ তাদের কাছে গেলেও এখনো তাদের স্থলসীমায় নেওয়া হয়নি।
কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, আন্দামান সাগরে ভাসমান রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিয়েছে ভারত। বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকেও অবহিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ভারতীয় কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সূত্র জানায়, এসব রোহিঙ্গাদের ভারতের মাটিতে আশ্রয় না দিয়ে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নাকি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে তা নিয়ে বিপাকে পড়েছে ভারত। বিষয়টি ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে জানিয়েছে ভারত। শরণার্থীদের রক্ষা ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিশ্চিতে আয়োজিত ১৯৫১ সালের জেনেভা কনভেনশনে ভারত স্বাক্ষর করেনি। দেশটিতে শরণার্থীদের রক্ষায় নিজস্ব কোনো আইনও নেই। বর্তমানে ভারতে দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে।
এ ব্যাপারে ওয়াশিংটন সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ বাধ্য নয়। বাংলাদেশ আশা করে, উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভারত অথবা মিয়ানমার গ্রহণ করবে। আন্দামান সাগরে উদ্ধার রোহিঙ্গাদের নিতে বাংলাদেশ কোনোভাবেই বাধ্য নয়। তিনি বলেন, উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি নাগরিক নয়। তারা মিয়ানমারের নাগরিক। বাংলাদেশের সামুদ্রিক সীমানার ১ হাজার ৭শ কিলোমিটার দূরে তাদের পাওয়া গেছে। সে কারণেই, তাদেরকে নেওয়ার জন্য আমাদের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, বিশ্বের সব রোহিঙ্গা বা নৌকায় ভেসে থাকা লোকজনদের গ্রহণ ও পুনর্বাসন করতে কি বাংলাদেশকে বৈশ্বিক চুক্তি করানো হয়েছে ও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে? না, একেবারেই না। তিনি বলেন, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) উচিত উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নেওয়া, কারণ ওই নৌকার ৪৭ জনের কাছে বাংলাদেশে অবস্থিত ইউএনএইচসিআর কার্যালয়ের পরিচয়পত্র ছিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যদি শরণার্থীরা ইউএনএইচসিআরের পরিচয়পত্রধারী হয়, তাহলে কেন তারা (ইউএনএইচসিআর) পাচারকারীদের দ্বারা নিজেদের পরিচয়পত্রধারীদের সাগরে ভাসার অনুমতি দিয়েছে যা তাদের মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছে?
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) সূত্রে জানা গেছে, কোনো দেশ ভাসমান রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করে আশ্রয় দিলে তাদের সব ধরনের দায়িত্ব নেওয়া হবে। ইউএনএইচসিআর-এর নিজস্ব কোনো ভূখণ্ড না থাকায় এই মুহূর্তে ভাসমান রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করা সম্ভব নয়। এখন দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের কোনো রাষ্ট্র নাই। তাদের কোনো দেশ জায়গা না দিলে আমরা কীভাবে সাহায্য করবো?
আগামীনিউজ/এএইচ