ঢাকাঃ চীন থেকে রাশিয়া। করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়ে গুপ্তচরদের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছেন আরেকদল গুপ্তচর। প্রথমেই করোনা ভাইরাসের টিকার ডাটা চুরি করার তৎপরতা চালায় চীনের গোয়েন্দা হ্যাকাররা।
তারা মনে করেছিল, হ্যাকিং করে এসব তথ্য চুরি করা খুব সহজ ব্যাপার হবে। ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর পরিবর্তে তারা ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনা এবং এই টিকা নিয়ে গবেষণা করছে এমন সব প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল হামলা চালানোর চেষ্টা করে। কর্মক্ষেত্রে চীনারাই একমাত্র হ্যাকার- এমনটা নয়। রাশিয়ার প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা এসভিআর টার্গেট করে পশ্চিমা গবেষণা। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং বৃটেন।
এসব দেশে তারা গুপ্তচরবৃত্তির মাধ্যমে তথ্য বের করে নেয়ার চেষ্টা করে। আন্তর্জাতিক ফাইবার অপটিক ক্যাবলের ওপর নজরদারি করে বৃটিশ গোয়েন্দা সংস্থা। এমন একটি সংস্থা বিষয়টি প্রথমে আঁচ করতে সক্ষম হয়। তারা সঙ্গে সঙ্গে সতর্কতা দেয়। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে উদ্ধৃত করে এক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া। এতে বলা হয়, করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়ে গবেষণাতথ্য চুরি করার জন্য ভয়াবহভাবে চেষ্টা চালায় ইরানও। সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও এসব গুপ্তচরবৃত্তি শনাক্ত করতে উদ্যোগী হয়। একই সঙ্গে বাড়ানো হয় প্রতিরক্ষা। সংক্ষেপে বলতে গেলে বিশ্বের প্রতিটি গোয়েন্দা সংস্থা চেষ্টা করছে নিজেদেরকে নিজেদের মতো আপডেট রাখতে।
বর্তমান ও সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, বিশ্বের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সম্প্রতি শান্তিবিষয়ক মিশন থেকে দ্রুততার সঙ্গে এসব বিষয়ে মনোনিবেশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিরুপ মনোভাব পোষণ করে এমন প্রায় সবাই যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা চুরি করার চেষ্টা করেছে। পক্ষান্তরে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় এবং করপোরেশনগুলো নিজেদের সুরক্ষিত রাখার উদ্যোগ নিয়েছে। পশ্চিমা কর্মকর্তাদের মতে, এসব তথ্য চুরি বিষয়ে ক্রেমলিনের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করেছে ন্যাটোর গোয়েন্দারা।
চীনের বিষয়টি আরো জটিল। তাদের গুপ্তচররা ছদ্মবেশ ধারণ করে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে নানা রকম তথ্য পাচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের গবেষণার প্রতি চীনের শ্যেণ দৃষ্টি রয়েছে বলে মনে করেন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় কিভাবে চীন তার প্রভাব খাটাচ্ছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় নি। চীনের এমন অপতৎপরতার খবর এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জানতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। ফলে চীনাদের চলাচলের ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে সিআইএ এবং অন্যান্য এজেন্সি।
ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনা ছাড়াও চীনা হ্যাকাররা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দৃষ্টি ফেলেছে। তাদের কেউ কেউ নেটওয়ার্ক লঙ্ঘন করতে সক্ষম হয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ২২ শে জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের হিউজটনে চীনের কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
ওদিকে রাশিয়ার গুপ্তচরবৃত্তির বিষয়ে জানতে পারে বৃটেনের ইলেকট্রনিক নজরদারি এজেন্সি জিসিএইচকিউ। গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জুলাই মাসে এমন ঘোষণা দেয়া হয় বৃটেন থেকে। এসব তথ্য পাওয়া গেছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, তার সঙ্গে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এস্ট্রাজেনেকার পক্ষ থেকে। এতে বলা হয়, কোজি বিয়ার নামে একটি রাশিয়ান গ্রুপ টিকার তথ্য চুরি করার চেষ্টা করছে। এই গ্রুপটিই ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের কমপিউটার সার্ভার হ্যাক করেছিল। তবে এখন পর্যন্ত হ্যাকাররা করোনা ভাইরাসের টিকা বিষয়ক তথ্য চুরি করতে সক্ষম হয় নি।
আগামীনিউজ/এএইচ