পরিচিতিঃ Botanical Name: Terminalia arjuna (Roxb.) W. & A Common Name: Arjun English Name: Arjuna Myrobalan Family: Combretaceae.
অর্জুন বৃহদাকৃতির পত্রঝরা বৃক্ষ। কান্ড দীর্ঘ, সরল, উন্নত, মসৃণ ও আকর্ষণীয়। এটি সাধারনত ৪০-৮০ ফিট পর্যন্ত লম্বা হয়। বাকল ম্লান-ধূসর ও পুরু। পাতা ৪ থেকে ৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। ফুল অত্যন্ত হোউ, ম্লান হলুদ ও উগ্র গন্ধযুক্ত। গাছে অজস্র শক্ত ফল হয়। ফল দেখতে অনেটা কামরাঙার মত কিন্তু আকৃতিতে অপেক্ষাকৃত ছোট। এপ্রিল- মে মাসে ফুল ফুটে এবং জানুয়ারী মার্চ মাসে ফল পাকে। ভারত, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশ অর্জুনের আদি নিবাস।
প্রাপ্তিস্থানঃ বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে প্রায় সর্বত্র বিশেষতঃ রাস্তার দু'পাশে এবং চট্টগ্রাম ও সিলেটের বনাঞ্চলে প্রচুর অর্জুন গাছ জন্যে থাকে।
চাষাবাদঃ অর্জুনের বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা যায়। বাংলাদেশের সর্বত্র রাস্তার দু'পাশে ও বনাঞ্চলে লাগানো হয়। এপ্রিল-মে মাসে ফুল ফুটে এবং জানুয়ারী-মার্চ মাসে ফল পাকে। তখন বীজ সংগ্রহ করে ব্যাগে চারা উত্তোলন করা যায়। পরিপক্ক ফল থেকে বীজ সংগ্রহের পর তা ভালভাবে রৌদ্রে শুকিয়ে ৬-১২ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। বীজ বপনের পূর্বে কমপক্ষে ৪৮ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে বীজতলায় বপন করতে হয়। বীজতলার মাটি ও গোবরের অনুপাত হবে ৩ঃ১। তাছাড়া ব্যাগে একই মিশ্রণে পুতে চারা উৎপাদন করা যায়। অঙ্কুরিত চারার বয়স ৮-৯ মাস হলে তা রোপণ করা উত্তম। বর্ষার শুরুতেই নির্দিষ্ট স্থানে চারা রোপণ করতে হয়। স্ট্যাম্প কাটিংয়ের মাধ্যমেও এর বংশ বিস্তার করা যায়। ১৫ মাস বয়সী চারা থেকে ২০ সে.মি. লম্বা মূল এবং ৫ সে.মি. লম্বা বিটপ কেটে নিয়ে ব্যাগে/পটে চারা তৈরি করা হয়।
লাগানোর দূরত্ব : ২০ থেকে ৩০ ফুট।
উপযোগী মাটি : আর্দ্র ও নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া অর্জুন গাছের জন্য উপযোগী। সাধারণত দো-আঁশ মাটিতে এ মুছটি ভালো হয়ে থাকে।
বদ আহরণ ও সংরক্ষণ : সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসে পরিপত্ত ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করা হয়। পরিপক্ক ফল থেকে বীজ সংগ্রহের পর তা ভালভাবে রৌদ্রে শুকিয়ে ৬-১২ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
প্রতি কেজিতে বীজের পরিমাণ : ১০০ থেকে ১৫০ টি।
ছাল সংগ্রহের সময় : অর্জুন ছাল শরৎকাল অর্থাৎ ভাদ্র আশ্বিনে সংগ্রহ করতে হয়।
প্রক্রিয়াজাতকরণ / সংরক্ষণ : পরিপক্ক গাছ থেকে ছাল উঠিয়ে (সংগ্রহ করে) ছোট ছোট টুকরা করে নিতে হবে। অতঃপর ৪-৫ দিন রৌদ্রে শুকিয়ে চটের বস্তায় ভরে শুষ্ক স্থানে রেখে দিলে ১ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায় এবং এর কার্যকারিতা অটুট থাকে। তাছাড়া বীজ পুরোপুরিভাবে পরিপড় গাছ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। অতঃপর সংগৃহীত বীজ ভালোভাবে রৌদ্রে শুকিয়ে বায়ুরোধী পাত্রে রেখে ১ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
ব্যবহার্য অংশঃ প্রধানতঃ ছাল, তবে ক্ষেত্র বিশেষে পাতা ও ফলও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
উপকারিতা/লোকজ ব্যবহার : অর্জুন গাছের ছাল হৃদরোগের মহৌষধ। এছাড়াও ছাল রতি শক্তিবর্ধক এবং শুক্রমেহ রোগে বিশেষ উপকারী। আঘাত জনিত ব্যথায় অর্জুন ছাল প্রলেপ এবং ক্বাথ সেবনে উপকারী। অর্জুন ছালের ক্বাথ দ্বারা কুলি করলে দাঁতের গোড়া শক্ত থাকে। অর্জুন পাতা, ফল ও ছাল সেবনে বিষক্রিয়া নষ্ট হয়। বর্তমান বাজারে এর অনেক পেটেন্ট ঔষধ পাওয়া যায়। অর্জুন ছাল ভালভাবে বেটে চিনি ও গরুর দুধের সাথে প্রতিদিন সকাল বিকাল খেলে হৃদরোগ এবং বুক ধড়ফড় কমে যায়।
কোন অংশ কিভাবে ব্যবহৃত হয় :
● যাদের বুক ধড়ফড় করে অথচ উচ্চ রক্তচাপ নেই, তাদের পক্ষে অর্জুন ছাল কাঁচা হলে ১০-১২ গ্রাম ত্বকনা হলে ৫-৬ গ্রাম একটু ছেঁচে ২৫০ মি.লি. দুধ ও ৫০০ মি.লি. পানির সাথে মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে আনুমানিক ১২৫ মি.লি. থাকতে হেঁকে বিকাল বেলা খেলে বুক ধড়ফড়ানি কমে যায়। তবে পেটে যেন বায়ু না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। লো ব্লাড প্রেসারে একই নিয়মে তৈরী করে খেলে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়।
● অর্জুনের ছাল বেটে খেলে হৃদপিন্ডের পেশী শক্তিশালী হয় এবং হৃদযন্ত্রের ক্ষমতা বাড়ে।
● অর্জুনের ফলের গুড়া রক্তচাপ কমায়, মূত্র বর্ধক হিসেবে কাজ করে এবং লিভার সিরোসিসে টনিক হিসেবে
কাজ করে।
● এই ছাল মুখ, জিহ্বা ও মাড়ির ঘায়ের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি মাড়ির রক্তপাত বন্ধ করে।
● অর্জুনের ছাল হাঁপানি, আমাশয়, ঋতুস্রাবজনিত সমস্যা, ব্যথা ইত্যাদির চিকিৎসায়ও উপকারি।
● অর্জুনের ছাল জ্বর নিবারক হিসেবে কাজ করে।
● এছাড়া চর্ম ও যৌন রোগে অর্জুন ব্যবহৃত হয়। যৌন উদ্দীপনা বাড়াতেও অর্জুন ছালের রস সাহায্য করে।
● শরীরে ক্ষত, খোস-পাঁচড়া দেখা দিলে অর্জুনের ছাল বেটে লাগালে ভাল ফল পাওয়া যায়।
● অর্জুন খাদ্য হজম ক্ষমতা বাড়ায়। খাদ্যতন্ত্রের ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
● অর্জুন ছাল রক্ত পরিষ্কারক।
পরিপক্ক হওয়ার সময়কালঃ সাধারণত ৪-৫ বছরে পরিপক্ক হয় তবে পূর্ণাঙ্গ পরিপক্ক হতে ১০ বছর সময় প্রয়োজন।
অন্যান্য ব্যবহারঃ অর্জুন কাঠ খুব শক্ত। গরুর গাড়ীর চাকা, নৌকা, নৌকার দাঁড় ইত্যাদি বানানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। গৃহ নির্মাণ ও আসবাবপত্র তৈরীতেও অর্জুন কাঠ ব্যবহার হয়। ছালে ২০-২৫ ভাগ ট্যানিন থাকে। ছালের সাহায্যে ভালো চামড়া ট্যান করা চলে। অর্জুনের পাতা তসর জাতীয় রেশম পোকার খাদ্য।
আয়ঃ একটি প্রাপ্ত বয়স্ক অর্জুন গাছে ৫০-৭০ কেজি ফল পাওয়া যায় যার বাজার মূল্য প্রায় ১০০০ টাকা। একটি পূর্ন বয়স্ক গাছ থেকে ৬০-৮০ কেজি শুকনো ছাল সংগ্রহ করা যায় যার বাজার মূল্য কমপক্ষে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। এছাড়াও একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছ এককালীন ৩,০০০ - ২০,০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করা সম্ভব।
এসএস