ঢাকাঃ প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দেড় হাজার কিডনি প্রতিস্থাপনের মাইলফলক স্পর্শ করলেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। এক হাজার কিডনি প্রতিস্থাপনে দীর্ঘ ১৪ বছর সময় লাগলেও শেষ ২৬ মাসে ৫০০ কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাত ১১টায় রাজধানীর শ্যামলী সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপনের মধ্য দিয়ে এই মাইলফলক অর্জন করেন তিনি।
তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা যে— আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে ১৫০০ কিডনি প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করতে পেরেছি। এই অর্জন আমার জন্য খুবই সম্মানের এবং গৌরবের। স্রষ্টার কাছে এর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কখনো শেষ হবে না। দোয়া করবেন যেন আমৃত্যু এই কাজটি করে যেতে পারি।
কামরুল ইসলাম বলেন, যখন আমরা কাজটা প্রথম শুরু করি, তখন আমাদের জন্য খুবই কঠিন ছিল। আমরা তখন নিশ্চিতও ছিলাম না আমাদের পরিকল্পনাগুলো আলোর মুখ দেখবে কি-না। তখন আমাদের একটা কিডনি প্রতিস্থাপন করতে খুবই ভয় হতো। আমরা দুশ্চিন্তায় ভুগতাম যে, আমাদের কাজটা সফল হয় কি-না, কোন ধরনের জটিলতা তৈরি হয় কি-না। যে কারণে প্রথম দিকে আমাদের প্রতিস্থাপনের সংখ্যা এত বেশি ছিল না।
তিনি আরও বলেন, প্রথম দিকে এক মাস-দুই মাসে একটা প্রতিস্থাপন করতাম, এমনকি সেই রোগীকে দীর্ঘদিন হাসপাতালে আমার ফলোআপে রাখতাম, যাতে সে পূর্ণ সুস্থ হয়। পরবর্তীতে যখন দেখলাম ভালোই হচ্ছে এবং কমপ্লিকেশনগুলো ওভারকাম করতে পারছি, তখন আমাদের প্রতিস্থাপনের সংখ্যা বাড়তে থাকলো। পরবর্তীতে প্রতি মাসে দুইটা, এরপর প্রতি সপ্তাহে একটা, এবং এক পর্যায়ে সপ্তাহে একাধিক কিডনি প্রতিস্থাপন করতে থাকলাম।
জানা গেছে, কিডনি প্রতিস্থাপনে অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হলেও গত এক যুগ ধরে দুই লাখের আশপাশেই ছিল অধ্যাপক কামরুল ইসলামের প্রতিষ্ঠিত সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের কিডনি প্রতিস্থাপন ব্যয়। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে ১৫শ প্রতিস্থাপনের একটিতেও তিনি ব্যক্তিগত কোনো পারিশ্রমিক নেননি। এমনকি প্রতিস্থাপন পরবর্তী ফলোআপ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায়ও আমৃত্যু রোগীর কাছে নেন না কোনো ফি।
এর আগে, নিজের পারিশ্রমিক ছাড়া এক হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন করে দেশে-বিদেশে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। মানবিক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার এ সন্তান। এরপর দায়িত্ববোধ যেন আরও বেড়ে যায়। মাত্র ২৬ মাসে আরও ৫শ' কিডনি প্রতিস্থাপন করে নিজেই নিজের রেকর্ড ভাঙেন। কোভিডকালে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে প্রতিস্থাপন প্রায় বন্ধ হলেও তিনি ২৫০টি কিডনি প্রতিস্থাপন করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের রেকর্ড বলছে, প্রতিস্থাপনের পর এক বছর কিডনি সচল থাকার হার ৯৪ শতাংশ। তিন বছর পর্যন্ত ৮৪ শতাংশ, পাঁচ বছর পর্যন্ত ৭২ শতাংশ এবং ১০ বছর পর্যন্ত কিডনি সচল বা সুস্থ থাকার হার ৫০ শতাংশ। তরুণদের কিডনি দানের হার বেশি হলে গ্রহীতারা আরও দীর্ঘ সময় সুস্থ থাকতে পারতো।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এক হাতে দেশের এক তৃতীয়াংশ কিডনি প্রতিস্থাপনের পর এখন হাসপাতালের পরিসর বাড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন তিনি। প্রতিস্থাপনের সংখ্যা বাড়াতে আগামীতে ক্যাডাভারিক বা ব্রেইন ডেথ রোগীর শরীর থেকে কিডনি নিয়ে তা প্রতিস্থাপনের দিকে বেশি নজর দিচ্ছেন এই মানবিক চিকিৎসক।
এমআইসি