ময়মনসিংহ: নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে “বিশ্ব ডিম দিবস ২০২১” পালন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপালন অনুষদের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগ।
এ দিবস পালন উপলক্ষে ৭ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) থেকে নানা কর্মসূচি পালন করেছে ওই বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
আজ রবিবার (১০ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সার্বজনীন ডিম খাওয়ানো কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। পরে সাড়ে ১০ টার দিকে “ দ্যা এ্যাগ: মিরাকেল অব এ ন্যাচার ” শীর্ষক একটি সমিনারের আয়োজন করা হয়। "প্রতিদিন ডিম খাই, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই" এ স্লোগানকে সামনে রেখে অনুষ্ঠানগুলো পরিচালিত হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সকালে পশুপালন অনুষদের গেইটের সামনে সার্বজনীন ডিম খাওয়ানো কর্মসূচিটি উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান। এ সময় সার্বজনীনভাবে উপস্থিত সবাইকেই বিনামূল্যে ডিম বিতরণ করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) শেষ মোড়, পোল্ট্রির মোড়, ব্রীজ মোড় ও ফসিলসহ বিভিন্ন জায়গায় এতিমখানা,স্কুল ও মাদ্রাসায় প্রায় ২ হাজার ডিম বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্যায়ে পশুপালন অনুষদের ডিন অফিসের সম্মেলন কক্ষে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. শহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারের প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিন কাউন্সিলের আহবায়ক ড. এ. কে ফজলুল হক ভূঁইয়া, ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মকবুল হোসাইন এবং ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এ. কে. এম জাকির হোসেন। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিশ্ব পোল্ট্রি বিজ্ঞান সংস্থার সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান মোল্যা। এছাড়াও পশুপালন অনুষদের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বলেন, প্রতিদিন ছাত্র-শিক্ষক এবং শ্রমজীবী প্রত্যেকের ১ টি করে ডিম খাওয়া উচিত। যে যতো পরিশ্রম করে তার ততো পুষ্টির প্রয়োজন হয়। আর ডিমের মধ্যে প্রায় সকল পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। দাম তুলনামূলক কম হলেও নি¤œ আয়ের মানুষও প্রতিদিন ডিমের পুষ্টি গ্রহণ করতে পারবে। ডিমের পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা এবং প্রাপ্যতা বৃদ্ধিও লক্ষে কাজ কওে যাচ্ছে বাকৃবির পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগ। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। কিন্তু নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাবার নিয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে।
মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে বজলুর রহমান বলেন, ডিমে রয়েছে মানব শরীরের জন্যে প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান। ১ ডিমে প্রায় ৭.৫৫ গ্রাম প্রোটিন, ০.৪৬ গ্রাম কার্বহাইড্রেড, ৫.৯৬ গ্রাম ফ্যাট, ওমেগা ৩ এবং ৬ ফ্যাটি এ্যাসিড। ডিমের কুসুমে আছে ভিটামিন এ, ডি, ই , কে এবং জিংক। বায়োলজিক্যাল ভ্যালুর দিক থেকেও ডিম সবার উপরে। ডিমের বায়োলজিক্যাল ভ্যালু ৯৩.৭। যেখানে দুধের ভ্যালু ৮৪.৫ এবং গরুর মাংসের ৭৪.৩।
তিনি বলেন, ডিমের কোলেস্টেরল শরীরের জন্যে ক্ষতিকর নয়। এটি ভালো কোলেস্টেরল তৈরিতে সাহায্য করে। আমাদের লিভার এমনিতেই দৈনিক ২০০০ মি.লি. কোলেস্টেরল তৈরি করে। একটি ডিম খেলে ১৮৫ মি.লি কোলেস্টেরল তৈরি হয়। এতে কোলেস্টেরল তৈরিতে লিভারের উপওে চাপ কমে। গবেষণায় দেখা যায়. ডিম খেলে প্রায় ৪৪% ব্রেস্ট ক্যান্সার কমে যায়। একজন দিনে সর্বোচ্চ ৩ টি এবং কমপক্ষে ১ ডিম খেলে বায়োলজিক্যাল কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় না। এছাড়াও ডিম খেলে কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি এবং চাপ কমে। ডিম সেরোটিন লেভেল বাড়ায়, থাইরোয়েড ফাংশনের উন্নয়ন ঘটায় এবং ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণ করে। ডিমের প্রোটিনে কার্বনের পরিমাণ কম যা শরীরের জন্যে ভালো। এসডিজির ১৭ টি লক্ষের মধ্যে ৯ টি লক্ষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ডিমের মাধ্যমে পূরণ হয়।
আগামীনিউজ/ হাসান