
দিনাজপুরঃ অতিমারি করোনার কারণে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অটোপাস দিয়ে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে শিক্ষাবোর্ডগুলো। সেই আলোকে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের অধিনে থাকা এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীরা অটোপাস করে। এই অটোপাসের ফল ঘোষণা করা হয় এ বছরের ৩০ জানুয়ারি। বোর্ড কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের টাকা ফেরতের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানকে পত্র দেয় ১৯ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু প্রতিষ্ঠান প্রধানরা দীর্ঘ ৮ মাসেও সেই নির্দেশনা কার্যকর করেনি। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে চাপা ক্ষোপ বিরাজ করছে।
ফল ঘোষণার পর শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায় কোচিং ও ভর্তি কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর এই সুযোগটি কাজে লাগাতে চাইছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। সরকারের নির্দেশনা মতে জেএসসি-জেডিসি ও এসএসসি-দাখিল ফলাফল মূল্যায়ন করে বোর্ড কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার্থীদের জিপিএ নির্ধারণ করে।
দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের অধিনে ৬ হাজার ৭৮৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক লাখ ১৮ হাজার ৭৩৫ জন শিক্ষার্থী অটোপাসের আওতায় আসে। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পায় ১৪ হাজার ৮৭১ জন। বিগত ২০২০ সালের চেয়ে অটোপাসে জিপিএ-৫ বেশি পায় ১০ হাজার ৮২২ জন। দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য মতে প্রতি পত্রের পরীক্ষার জন্য ১০০ টাকা, ব্যবহারিক পরীক্ষার প্রতি পত্রের জন্য ২৫ টাকা, একাডেমি ট্রান্সক্রিপ্ট ফি ৫০ টাকা, সনদ ফি পরীক্ষার্থী প্রতি ১০০ টাকা, রোভার স্কাউট ও গার্লস গাইড ফি ১৫ টাকা ও জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি ৫ টাকা এবং কেন্দ্র ফি ৪০০ টাকা ও ব্যবহারিক প্রতি পত্রের উত্তরপত্র মূল্যায়ন ফি ২০ টাকা করে নেয়া হয়। সেই হিসেবে বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেয়া হয় দুই হাজার ৩৮০ টাকা, এবং মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বাবদ দিতে হয় এক হাজার ৮৪০ টাকা। কিন্তু অটোপাস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা না নেয়ায় কর্তৃপক্ষের ব্যয়ের অংক নেই বললেই চলে। শুধুমাত্র একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ফি ৫০ টাকা, সনদ ফি ১০০ টাকা, রোভার স্কাউট ও গার্লস গাইড ফি ১৫ টাকা এবং শিক্ষা সপ্তাহ ফি ৫ টাকা বাদে অন্যকোন অর্থ ব্যয়ের খাতায় যোগ হয়নি। সেই মতে বিজ্ঞান বিভাগের প্রতি শিক্ষার্থী ফেরত পেতে পারে দুই হাজর ২১০ টাকা এবং মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে ফেরত এক হাজার ৬৭০ টাকা। করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অটোপাস পরীক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানমুখী যেমন হয়নি তেমনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা লাভে ভর্তি কার্যক্রমে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতে শিক্ষার্থীদের পাওনা টাকা হাতছাড়া হতে চলেছে।
অটোপাস পরীক্ষার্থীদের অর্থ ফেরত প্রসঙ্গে কথা হয় উত্তরাঞ্চলের বনেদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. শফিয়ার রহমান সরকারের সঙ্গে। তিনি আগামী নিউজকে বলেন, বোর্ডের নির্দেশনা পেলেই টাকা ফেরত দেয়া হবে।
একই প্রসঙ্গে কথা হয় সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুকের সঙ্গে। তিনি আগামী নিউজকে বলেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফেরত দেয়া হবে ফরম পূরণের অর্থ।
কামারপুকুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) বাবু বাপ্পি রায় আগামী নিউজকে বলেন প্রতিষ্ঠান এখন খুলেছে, দিনক্ষণ ঠিক করে শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত দেয়া হবে ঘটা করেই।
জানতে চেয়ে মুঠোফোনে কথা হয় দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের ভারপ্রাপ্ত সচিব প্রফেসর মো. তোফাজ্জুর রহমানের সঙ্গে। তিনি আগামী নিউজকে বলেন বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শিক্ষা দপ্তরের একটি সূত্রমতে অনুরুপ ঘটনা দেশের রাজশাহী, ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, যশোর, বরিশাল, সিলেট, ময়মনিসংহ ও বাংলাদেশ মাদ্রাসা বোর্ডে ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশের সব বোর্ড মিলে এবারে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অটোপাস করেছে ৬৪ হাজার ১৮২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে অনিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো দুই লাখ ৮৬ হাজার।