নোয়াখালীঃ শিক্ষক নিয়োগে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) এর প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ফিসারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের(ফিমস) প্রভাষক পদে আবেদনে ফিসারিজের পাশাপাশি প্রাণিবিদ্যাকে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ আগস্ট এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে ফিমস বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগে ফিসারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স ও প্রাণিবিদ্যা থেকে আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে। এর আগে ২৬ জুন ২০২১ তারিখে একই পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শুধু মাত্র ফিসারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিষয়ের উপর ডিগ্রিধারীদের আবেদন সুযোগ দেওয়া হয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থাকা স্বত্বেও ফিসারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের প্রভাষক পদে আবেদনের যোগ্যতায় প্রাণিবিদ্যার সুযোগ রাখায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভাগের শিক্ষক -শিক্ষার্থীরা।
নিয়োগের বিষয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ এর ৪ নং ধারার ৬ ও ৯ নং উপধারা হতে জানা যায়,বিভাগের নীতি নির্ধারণ বিষয়াদি বিভাগীয় একাডেমিক কমিটি এবং বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির আওতাভূক্ত থাকিবে।প্ল্যানিং কমিটি গঠনের মাধ্যমে বিভাগের সম্প্রসারণ, শিক্ষক- কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে আইনে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্লানিং কমিটির কোনো বৈঠক ছাড়াই কমিটির কার্যাবলী সম্পাদন করা হয়েছে। প্লানিং কমিটির কাজ কিভাবে সম্পাদন হয়েছে জানেন না উক্ত কমিটির সদস্যরাও।
ফিমস বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রাণিবিদ্যা থেকে ফিসারিজের শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করার দাবি জানান।পাশাপাশি তারা ফিমস বিভাগের গ্র্যাজুয়েটদের থেকে ফিমস বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানান।
ফিমস বিভাগের ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকে ৪ টি ডিপার্টমেন্ট নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ফিশারিজ এন্ড মেরিন সাইয়েন্স বিভাগ তার একটি। এই বিভাগ থেকে নিয়মিত শিক্ষার্থীরা অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করে বের হচ্ছে। এই অবস্থায় যদি বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগ থেকে প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে। কেউ যদি কোন বিশেষ সুবিধার জন্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে নিজেদের শিক্ষার্থীদের প্রতি অবিচার করা হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনেকরি এই ধরণের আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিত।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু ফিসারিজ পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ সালেহ আহমেদ বলেন, প্রাণিবিদ্যাকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ফিসারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স এর সমমান দেওয়া কোনোভাবে উচিত নয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিসারিজ বিভাগ রয়েছে। ফিসারিজ বিভাগ থেকে ডিগ্রি নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। পাশাপাশি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা আলাদা বিভাগ থাকা সত্বেও ফিসারিজ বিভাগে প্রাণিবিদ্যাকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আহবান করা কাম্য নয়।
ফিমস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর সরকার দেশের বাহিরে থাকায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাওয়ায় তিনি প্লানিং কমিটির বৈঠক ডেকেছেন। প্লানিং কমিটির সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে পুনরায় রিপোর্ট তৈরী করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, কোভিড আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ ছিলাম। তাই এই মুহূর্তে এবিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিষয়টি সম্পর্কে বলতে পারবে।
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জসিম উদ্দিন বলেন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ এটি অপশন হিসেবে দেওয়া হয়েছে কেউ চাইলে আবদেন করতে পারবে। সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেই এটি তৈরী করা হয়েছে ।
নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর জানান, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়গুলো বিভাগের চাহিদার উপর ভিত্তি করেই প্রকাশিত করা হয়। নিয়োগ যোগ্যতায় প্রাণিবিদ্যা সংযুক্ত করা না করার বিষয়ে বিভাগীয় প্লানিং কমিটি থেকে যদি কোনো সংশোধন আসে তাহলে সেভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা আলাদা বিভাগ থাকা সত্ত্বেও ফিসারিজ বিভাগে কেনো প্রাণিবিদ্যার বিষয়টি সংযুক্ত করা হলো আমার জানা নেই। তবে বিভাগের চাহিদার ভিত্তিতেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বিভাগ যদি নিয়োগ যোগ্যতায় প্রাণিবিদ্যা সরিয়ে শুধু ফিসারিজ বিষয়টি রাখার জন্য প্লানিং কমিটির বৈঠক অনুযায়ী রিপোর্ট জমা দেয় তাহলে সেটিই বিবেচনা করা হবে ।