সিলেটঃ সিলেট মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে তরুণীকে গণধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমানের পর গ্রেফতার হয়েছেন চার নম্বর আসামি অর্জুন লস্কর।
আজ রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে হবিগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে প্রধান আসামি সাইফুর রহমানকে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সুনামগঞ্জের এসপি মিজানুর রহমান জানান, সকালবেলা ছাতক থেকে ঘটনার প্রধান আসামি সাইফুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনায় ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩ জনকে আসামি করে শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে শাহপরান থানায় মামলা করেছিলেন ওই গৃহবধূর স্বামী।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন— সাইফুর রহমান, মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক, অর্জুন লঙ্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান। এদের মধ্যে চার জন ওই কলেজের শিক্ষার্থী। এছাড়া আরও তিন জনকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে দেখানো হয়। তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।
ঘটনার পরই অভিযুক্তদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযানে নামে পুলিশ। শুক্রবার রাত ২টার দিকে পুলিশ অভিযুক্ত সাইফুরের কক্ষ থেকে একটি পাইপগান, চারটি রামদা, একটি ছুরি ও দুটি লোহার পাইপ উদ্ধার করে।
এদিকে এমসি কলেজে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা রবিউল ইসলাম ও তারেক আহমেদকে গ্রেফতার করতে অভিযান চালিয়েছে দিরাই ও জগন্নাথপুর থানা পুলিশ। তারেকের গ্রামের বাড়ি জগ্ননাথপুর উপজেলা ও রবিউলের গ্রামের বাড়ি দিরাই উপজেলায় অভিযান চালানো হয়।
শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়। তিনি জানান, রবিউলকে গ্রেফতার করতে পুলিশের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এজন্য শনিবার বিকেলে পুলিশ গ্রামের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে।
জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইখতিয়ারউদ্দিন চৌধুরী জানান, আলোচিত মামলার আসামি গ্রেফতার পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে সিলেটের টিলাগড় এলাকার এমসি কলেজের গেটের সামনে থেকে ঐ তরুণীকে তুলে নিয়ে যায় কয়েকজন। ঐ তরুণী তার স্বামীর সাথে একটি গাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন।
তরুণীর স্বামী এজাহারে উল্লেখ করেন, তার স্ত্রীকে যখন জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তখন দুই ব্যক্তি তাকে গাড়িতে আটক করে রাখে।
এর ঘণ্টাখানেক পর এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের একটি কক্ষের সামনে থেকে নিজের স্ত্রীকে বিধ্বস্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন স্বামী।
পরে রাতেই ঐ তরুণীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।
এমসি কলেজের হোস্টেলের পাশের আবাসিক এলাকার এক বাসিন্দা জানান, রাতে বেশ কিছুক্ষণ ছাত্রাবাসের ভেতর থেকে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পাচ্ছিলেন তিনি। পরে একপর্যায়ে নারী কন্ঠের চিৎকার শুনতে পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে স্থানীয় আরো কয়েকজনকে নিয়ে ছাত্রাবাস এলাকার ভেতরে প্রবেশ করেন।
সেসময় হোস্টেলের পাশের স্টাফ কোয়ার্টার থেকে কর্মচারীরা জড়ো হলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারেন তারা।
ঐ ঘটনার পর থেকে সিলেটে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে সাধারণ মানুষ।
এই ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল বলে বলা হচ্ছে। তবে পুলিশ এখনো তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সালেহ আহমদ জানান, ধর্ষণের ঘটনায় কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া দায়িত্ব পালনে গাফিলতির কারণে দুই নিরাপত্তাকর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
আগামীনিউজ/জেহিন