নাটোরঃ জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলার চাঁদপুর বিএম কলেজের নন এমপিও শিক্ষকদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রণোদনার টাকা ভুয়া তালিকা দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে বঞ্চিতদের পক্ষ থেকে কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ সম্প্রতি নাটোর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্র ও কর্মরতদের কাছ থেকে জানা যায়, জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলার দয়ারামপুরে ২০০০ সালে চাঁদপুর বিএম কলেজ নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক বিএম শাখা ও পরের বছর এসএসসি ভোকেশনাল শাখা এমপিওভুক্ত হলেও আজ পর্যন্ত সাধারণ শাখা এমপিওভুক্ত হয়নি।
প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. মকবুল হোসেনের এসএসসি থেকে এমএ পর্যন্ত চারটি ডিগ্রির ফলাফলই তৃতীয় শ্রেণি হওয়ায় তার নিয়োগ বৈধ নয় এমন অভিযোগে ২০১৬ সালে কলেজের সভাপতি বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কলেজের বেতন বিলে স্বাক্ষর করা বন্ধ করেন। পরে কলেজে ঢুকতে না দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ এনে অধ্যক্ষ ইউএনওর বিরুদ্ধে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
বিষয়টি নিয়ে নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজী আতিয়ুর রহমানের নেতৃত্বে তদন্ত শেষে মকবুল হোসেনকে অপসারণ করে কলেজের প্রতিষ্ঠাকালে নিয়োগপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক মো. লুৎফর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেন। ২০১৮ সালে উচ্চ আদালতে একটি রিটের মাধ্যমে একটি অস্থায়ী আদেশে অধ্যক্ষ মো. মকবুল হোসেন পুনরায় ছয় মাসের জন্য অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন।
পরে তিন বার আদালত থেকে দায়িত্বের মেয়াদ বাড়িয়ে নেন যা আগামী মাসে শেষ হবে। গত মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাকালে সংকটের জন্য নন এমপিও শিক্ষকদের পাঁচ হাজার ও কর্মচারীদের আড়াই হাজার টাকা করে প্রণোদনা দেন। যা এ কলেজের পক্ষ থেকে ভুয়া তালিকা ও স্বাক্ষরের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়।
মনোবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক মো. লুৎফর রহমান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করেন, তারা দু’জনসহ আরো কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারীকে প্রণোদনার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানের জন্ম থেকে তারা কর্মরত থাকলেও প্রণোদনার তালিকায় এমন প্রায় ১০ জনের নাম রয়েছে, যারা কখনো এ প্রতিষ্ঠানে একদিনের জন্যও আসেননি। এমনকি কোনো শিক্ষক-কর্মচারীও তাদের চেনেন না।
মো. ময়মুর সুলতান নামে একজন প্রভাষক দীর্ঘদিন থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করছেন। অথচ তিনিও স্বাক্ষর করে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রণোদনার টাকা উত্তোলন করেছেন বলে খাতা-কলমে দেখানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের এমএলএসএস আছের উদ্দিনসহ কয়েকজন এ প্রতিবেদকের কাছে প্রণোদনা উত্তোলনের তালিকায় নাম থাকলেও টাকা পাননি এবং এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন।
এদিকে বিষয়গুলোর প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজের সঙ্গে দেখা করে ভুক্তভোগীরা লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। নাটোর জেলা প্রশাসক এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী আকন্দকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ওই কলেজের অধ্যক্ষ মো. মকবুল হোসেন প্রণোদনার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, কলেজে নিয়মিত না আসায় প্রভাষক লুৎফর রহমান, আবুল কালাম আজাদ ও আব্দুস সবুরের নাম তালিকায় দেওয়া হয়নি। আর এমএলএসএস আছের উদ্দিন তার প্রতিবেশী, তাই তাকে ডেকে টাকা দিয়ে দেবেন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করার পরও কীভাবে প্রভাষক মো. ময়মুর সুলতানের নাম তালিকাভুক্ত ও টাকা উত্তোলন করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বড় ভাই চেকটি গ্রহণ করেছেন, এখানে আমার কিছু করার নেই।
নাটোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রমজান আলী আকন্দ জানান, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাঁদপুর বিএম কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রিয়াংকা দেবী পাল বলেন, তালিকার সবার প্রণোদনার টাকাই উত্তোলন করা হয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। টাকা নিতে না আসায় অনেকের টাকা ফেরতও পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে এলে সহজেই বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে আগামী নিউজ ডট কম এর সাথেই থাকুন। শিক্ষা এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট আপনার আশে-পাশে ঘটে যাওয়া যে কোন খবর আমাদেরকে ইমেইল করুন। আর চোখ রাখুন আগামী নিউজ ডক কম এর শিক্ষা পাতায়।
আগামীনিউজ/আশা