রাজবাড়ীঃ মাহে রমজানে মুড়ি ছাড়া ইফতার যেন অকল্পনীয়। বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে নানান খাবারের সঙ্গে এখনও ওতপ্রতভাবে মিশে আছে মুড়ির কদর। হাতে ভাজা মুড়ির স্থান দখল করে নিয়েছে কারখানার মেশিনের তৈরি মুড়ি।
আধুনিক জীবনযাত্রা আর পরিবর্তনের ছোঁয়ায় মান্দাতা আমলের ঐতিহ্য হাতে ভাজা দেশি মুড়ি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। কালের বিবর্তনে হাতে ভাজা মুড়ি শিল্পটি আজ আর গ্রাম গঞ্জে দেখা যায় না।
আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় কারখানায় মুড়ি উৎপাদিত হওয়ায় হারিয়ে গেছে সু-স্বাদু হাতে ভাজা দেশি মুড়ি। শুধু তাই নয় দেশের বড় বড় নামি-দামি কোম্পানিগুলোও মুড়ি তৈরি করে শহর থেকে শুরু করে গ্রামের ছোটখাটো দোকানগুলোতে পৌঁচ্ছে দিচ্ছে। ফলে হাতে ভাজা মুড়ি আজ প্রায় হারানোর পথে।
গোয়ালন্দ উপজেলার উত্তর দৌলতদিয়া গ্রামে হঠাৎ চোখে পড়ে মুড়ি হাতে ভাজার দৃশ্যটি। সোনাবানু বেগম (৬০)। তিনি হাত দিয়ে মুড়ি ভাজার কাজে খুব পারদর্শী। এ কাজে তার হাত যশ ভালো। তার মুড়ি ভাজার অভিজ্ঞতা প্রায় ৪৫ বছর।
সোনাবানু বেগম বলেন, ছোট সময় থেকেই মা-দাদির কাছ থেকে দেখা ও শেখা। হাতে মুড়ি ভাজা সহজ মনে হলেও এর কায়দা আছে। সবার হাতে মুড়ি ভালো হয় না। । বালু ও চাউল ভাজা সঠিক সময় মিশাতে না পারলে মুড়ি ভালো হয় না।
তিনি বলেন, ভাতের চাল আর মুড়ির চাল এক রকম হলে হয় না। ধান সংগ্রহ করে প্রথমে আধাসিদ্ধ তারপর পুরোপুরি সিদ্ধ করে রোদে শুকিয়ে তা দিয়ে মুড়ির চাল তৈরি করা হয়। রমজান মাস আসতে তাই ইফতার করার জন্য মুড়ি ভাজলাম। তবে হাতে ভাজা মুড়ি ভাজতে প্রচুর কষ্ট। আগুনের কাছে সারা দিন বসে থাকতে হয়, তাই এতো কষ্ট করে কেও আর মুড়ি ভাজতে চায় না।
এ বিষয়ে গ্রামের বাসিন্দা মো.ছালাম মোল্লা (৬৫), বলেন, রমজান মাসে ইফতারে সময় হাতে ভাজা মুড়ি দিয়ে আমরা ছোট বেলায় থেকে পরিবারের সবাই এক সাথে ইফতার করে আসছি। তাই বলে গ্রামের সব বাড়িতে হাতে ভাজা মুড়ি পাওয়া যাবে না।
হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা থাকলেও বাজারে পাওয়া যায় না। তাই গ্রামের মানুষের মুড়ির দরকার হলে দোকান থেকে এক প্যাকেট কিনে নিয়ে আসে।
বাজারের মুড়িতে রাসায়নিক দ্রবাদি ব্যবহার করা হয়। অনেক কারখানায় আবার ইউরিয়া সারের পানি মুড়িতে মিশানোর কারণে সাদা, হালকা ও চকচকে মনে হয়।
এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ শিল্পকলা একাডেমির সাধারন সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম সালু বলেন, হাতে ভাজা মুড়ি আমাদের একটি হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য। হাতে ভাজা মুড়ি এখন আর বাজারে পাওয়া যায় না । আগে রমজান মাস আসার কয়েক দিন আগে গ্রামে হাতে ভাজা মুড়ি ভাজার ধুম পড়ে যেতো। আমাদের এই পুরনো ঐতিহ্য প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে হাতে ভাজা মুড়ির সঙ্গে বর্তমানে কারখানায় তৈরি বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেট মুড়ির স্বাদ আলাদা । হাতে ভাজা মুড়ি দিয়ে ইফতার করলে মজাই আলাদা।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাহ মুহাম্মাদ শরীফ বলেন, গ্রামের হাতে ভাজা মুড়ি খেলে স্বাস্থ্য ঝুকি নেই। আর রাসায়নিক
সার যুক্ত মুড়ি খেলে শরীরে লিভার, কিডনি, যকৃত ধীরে ধীরে অকেজো হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি।
আমাদের স্বাস্থ্য ও স্বাদের বিবেচনা করে ক্রেতা সাধারণের উচিত সু-স্বাদু হাতে ভাজা দেশি মুড়ির স্বাদ নেওয়া।
এসএস