ঢাকা: কথিত মডেল পিয়াসা, মৌ, রাজ মাল্টিমিডিয়ার নজরুল ইসলাম রাজ, মিশু হাসান ও জিসানের অঢেল সম্পদের সন্ধান পাচ্ছে গোয়েন্দারা। এর মধ্যে গত রবিবার পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ সিআইডি পিয়াসা এবং রাজের চারটি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করেছে। এগুলো হচ্ছে দুটি বিএমডব্লিউ, একটি হ্যারিয়ার এবং একটি মাজদা গাড়ি। এর মধ্যে একটি বিএমডব্লিউ ও একটি মাজদা গাড়ি পিয়াসার।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রেফতারদের সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবসা না থাকলেও কীভাবে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেলেন, তা তদন্ত করতে গিয়ে হতবাক করার মতো তথ্য পাওয়া গেছে। ভয়াবহ এই সিন্ডিকেট মাদকের আসরে বিত্তশালীদের শুধু ব্ল্যাকমেলিং করেনি, তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর আরও ভয়ংকর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অস্ত্র ও সোনা-হীরা চোরাচালান এবং অর্থ ও নারী পাচারের বেশ কিছু তথ্য তদন্তে বেরিয়ে আসছে।
এদিকে রিমান্ড শেষে চিত্রনায়িকা পরীমণিকে আজ আদালতে হাজির করা হতে পারে।
গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, চিত্রনায়িকা পরীমণি, মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌর বাসায় যাতায়াত ছিল এমন ব্যবসায়ী বা ব্যক্তিদের কোনো তালিকা করা হচ্ছে না।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হেলেনা জাহাঙ্গীর, চিত্রনায়িকা পরীমণি, প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ, মাসুদুল ইসলাম ও শরফুল হাসান ওরফে মিশুর বিরুদ্ধে করা ১০টি মামলার তদন্ত করতে চায় র্যাব। তদন্তের অনুমতি চেয়ে পুলিশ সদর দফতরে চিঠি দিয়েছে র্যাব।
রবিবার এই আবেদন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল কে এম আজাদ। সিআইডির একটি সূত্র জানিয়েছে, রবিবার রাতে পিয়াসা এবং নজরুল রাজের বারিধারা এবং বনানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে চারটি বিলাসবহুল গাড়ি আটক করেছে। অপর একটি সূত্র জানায়, আয়ের উৎস না থাকলেও বিলাসী জীবনযাপন করতেন পিয়াসা ও মৌ। তাদের আয়ের উৎস কী? গোয়েন্দাদের এমন প্রশ্নে কোনো জবাব ছিল না লেডি মাফিয়ার দুই গ্যাংস্টারের কাছে। এ ছাড়া ২০১৮ সালে সংঘটিত পুলিশ কর্মকর্তা মামুন খুনে নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে পিয়াসার কাছ থেকে।
রিমান্ডে থাকা পিয়াসা তার ব্যবহারের বিলাসবহুল ফেরারি, বিএমডব্লিউ ও মার্সিডিজ গাড়ি কিংবা বিলাসী জীবনযাপনের জন্য টাকার উৎসের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিলাসী জীবনযাপন ছিল মডেল পিয়াসা ও মৌর। নামিদামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনী, দেশি-বিদেশি দামি পোশাক, সেলফে সাজানো জুতাসহ বাহারি সব পণ্যের সমাহার ছিল তাদের। হাতে ৫০ লাখ টাকার রোলেক্স ঘড়ি। বাসার ভিতরে প্রবেশ করলে চোখ চড়কগাছ হওয়ার উপক্রম হয়।
কারণ তাদের দৃশ্যমান আয়ের সঙ্গে জীবনযাপনের ব্যয়ের ছিল আকাশ-পাতাল ব্যবধান। গোয়েন্দারা এসব তদন্ত করতে গিয়ে তার পার্টনার নজরুল রাজ, মিশু হাসানের সঙ্গে অস্ত্র ও সোনা চোরাচালানের সম্পৃক্ততা পেয়েছে। এ ছাড়াও তাদের এই সিন্ডিকেটে একজন ব্যবসায়ীর নাম বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া যাচ্ছে। এ ডায়মন্ড ব্যবসায়ীকে নিয়ে পিয়াসা নিজ বাসায় আসর বসাতেন। ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে মডেল পিয়াসার ঘনিষ্ঠ ছবিও পাওয়া গেছে। পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে মোবাইল ফোনে কথোপকথনের রেকর্ড। এই ব্যবসায়ীর দেশে-বিদেশে রয়েছে শোরুম। এ ছাড়া দুবাইকেন্দ্রিক নারী পাচারের সঙ্গেও এদের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে বলে সূত্র জানায়।