1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

মধ্যরাতে তরুণীকে তুলে নিয়ে ১০ জন মিলে গণধর্ষণ

জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২০, ১০:৫৭ পিএম মধ্যরাতে তরুণীকে তুলে নিয়ে ১০ জন মিলে গণধর্ষণ
ছবি; সংগৃহীত

চট্টগ্রাম: নগরীর চান্দগাঁওতে এক তরুণী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাঙ্গুনিয়া থেকে নগরীতে ফেরার পথে মৌলভী পুকুর পাড় এলাকায় অটোরিকশা থেকে নামিয়ে এ সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়। গভীর রাতে নির্জন সড়কে আড়াই ঘণ্টা সময়ের মধ্যে অন্তত ১০ জন ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৭ পুরুষ ও এক নারীকে ইতোমধ্যে পুলিশ আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন- সিএনজি অটোরিকশাচালক জাহাঙ্গীর আলম (৩৮), অটোরিকশাচালক মো. ইউসুফ (৩২), মো. রিপন (২৭), মো. সুজন (২৪), অটোরিকশাচালক দেবু বড়ুয়া (৩১), দোকানদার মো. শাহেদ (২৪), অটোরিকশাচালক রিন্টু দত্ত বিপ্লব (৩০) ও মনোয়ারা বেগম (৫৫)। গ্রেপ্তারকৃত মধ্যে অটোরিকশাচালক জাহাঙ্গীর পুলিশের সোর্স। রিপন ও সুজন বখাটে এবং মনোয়ারা বেগম গৃহিণী বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ধর্ষণের ঘটনা এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের বিষয় জানাতে শুক্রবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে আসেন নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-উত্তর) বিজয় কুমার বসাক। নগরের পাঁচলাইশে উপ কমিশনার (উত্তর) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) নাদিয়া নূর, সহকারী পুলিশ কমিশনার শহীদুল ইসলাম, চান্দগাঁও থানার ওসি আতাউর রহমান খোন্দকার ও পরিদর্শক (তদন্ত) রাজেস বড়ুয়া।

পুলিশ কর্মকর্তা বিজয় কুমার বসাক জানান, আনুমানিক ২২ বছর বয়সী তরুণী বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় তার গ্রামের বাড়ি থেকে চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারে বাসার উদ্দেশে রওনা দেন। রাত ১১টার দিকে কাপ্তাই রাস্তার মাথায় অটোরিকশা থেকে নেমে চকবাজারে যাবার জন্য রিকশায় ওঠেন। এসময় সিএনজি অটোরিকশাযোগে অভিযুক্ত কয়েকজন ওই রিকশার পিছু নেয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে চান্দগাঁও মৌলভী পুকুর পাড় এলাকায় জনৈক আনোয়ার সাহেবের চতুর্থ তলা ভবনের ডান পাশের গলিতে নিয়ে অন্তত ১০ জন মিলে তাকে ধর্ষণ করে। তাদের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে ভোর ৪টার দিকে তরুণী নিজেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে যান। হাসপাতাল থেকে খবর পেয়ে চান্দগাঁও থানা পুলিশ সেখানে গিয়ে আক্রান্ত তরুণীর অভিযোগ নেন।

এরপর অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান ‍শুরু করে পুলিশ। চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে (৩৮) গ্রেপ্তার করে। বাকি সাতজনকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে উপ পুলিশ কমিশনার বিজয় কুমার বসাক বলেন, ‘মনোয়ারা ও জাহাঙ্গীর মিলে মেয়েটিকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে যায়। গলিতে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে তারা। আমরা ৮ থেকে ১০ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছি। রাত দেড়টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত তারা মেয়েটিকে আটকে এই ঘটনা ঘটায়। সাত জনকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আক্রান্ত তরুণী নিজেই ওসিসিতে যান। সেখান থেকে খবর পেয়ে আমরা ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলে গ্রেপ্তার অভিযানে নামি।’

দশজন মিলে ধর্ষণের পর তরুণীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মেয়েটি এখন অসুস্থ অবস্থায় আছে। শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল। মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছেন। আমরা তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।’

তিনি আরো জানান, ধর্ষণের আগে তরুণীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তার কাছ থেকে মোবাইল ও দুই হাজার টাকা কেড়ে নেওয়া হয়।

এদিকে উপ পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় থেকে নগরীর চান্দগাঁও থানায় নেওয়ার সময় গাড়িতে বসা গ্রেপ্তার কয়েকজন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। মনোয়ারা বেগম জানান, তিনি মানবপাচার আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। তখন আক্রান্ত তরুণীও কারাগারে ছিলেন, সেখানে তাদের পরিচয় হয়। বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীর তাকে ফোন করে মৌলভী পুকুর পাড়ে যেতে বলেন। জাহাঙ্গীর পুলিশের সোর্স হওয়ায় এলাকায় তার প্রচুর দাপট। জাহাঙ্গীরের ফোন পেয়ে সেখানে গিয়ে মেয়েটিকে কয়েকজন মিলে ধর্ষণের কথা জানতে পারেন।

গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করার কথা স্বীকার করেন। তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, গ্রেপ্তার সাতজনসহ তারা আরো কয়েকজন মিলে মৌলভী পুকুর পাড়ে বসে চা খাচ্ছিলেন। পুলিশের আরেক সোর্স সুমন তাকে ফোন করে জানায়, মেয়েটির এক বন্ধু তার কাছ থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর আগে দুই হাজার টাকা নিয়ে আর ফেরত দিচ্ছে না। মেয়ে এবং তার বন্ধুকে পাওয়া গেছে। একথা শুনে তারা ঘটনাস্থলে যান। সেখানে তারা দু’জনকে গলির ভেতরে ঢুকিয়ে মারধর করেন। মেয়েটির বন্ধুকে টাকার জন্য বেশি মারধর করা হয়।

জাহাঙ্গীরের দাবি, মেয়েটিকে তারা কেউ ধর্ষণ করেনি। সোর্স সুমন ষড়যন্ত্র করে তাদের ধরিয়ে দিয়েছে। গাড়িতে বসে কাঁদছিলেন গ্রেপ্তার হওয়া সুজন বড়ুয়া। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি শুধু ওই মেয়েটির বন্ধুকে দুটি চড় দিয়েছিলাম। আমাকে পুলিশ ধরে এনে মামলায় জড়িয়ে দিয়েছে।’

গ্রেপ্তার আসামি দেবু বড়ুয়া অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ‘করোনার সময়ে সুমন নামে তাদের এক বন্ধুর কাছ থেকে ওই নারী দুই হাজার টাকা ধার নেন। এরপর থেকে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন ওই নারী। বৃহস্পতিবার রাতে ওই নারীকে সুমন ফোন করে নিয়ে যায়। এরপর তাদের বন্ধুদের খবর দেয়। সুমন ওই নারী ও তার সঙ্গে থাকা এক কিশোরকে মারধর করে ছেড়ে দেয়। রাতে তারা ফিরে যায়। ভোর রাতে সুমন তার বাসায় আসবেন বলে জানান। কিছুক্ষণ পর পুলিশসহ এসে তাকে ধরে নিয়ে আসে। একইভাবে সবাইকে ধরলেও যে ওই নারীকে মারধর করেছে তাকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। আমরা ধর্ষণ করিনি। পুলিশের সোর্স জাহাঙ্গীরের সঙ্গে আরেক সোর্স সুমনের সম্ভবত ঝামেলা আছে। এই দু’জন মিলে আমাদের ফাঁসিয়ে দিয়েছে। জাহাঙ্গীর আমাকে বলায় আমি সরল বিশ্বাসে সেখানে গিয়েছিলাম। ধর্ষণ করিনি। আমাদের ডিএনএ টেস্ট করা হোক। মনোয়ারা অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত। তার সঙ্গে মেয়েটির সম্পর্ক আছে।’

অভিযুক্তদের এসব দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপ পুলিশ কমিশনার বিজয় কুমার বসাক বলেন, ‘এতটুকু নিশ্চিত করতে পারি যে, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে কখনোই আমরা এই ধরনের ঘটনায় জড়িত করতে পারি না। তারা ঘটনায় জড়িত ছিল বলেই গ্রেপ্তার করেছি। তদন্তের স্বার্থে আমরা অনেক তথ্য এখন দিতে পারছি না। ৭২ ঘন্টার মধ্যে সাংবাদিকদের সামনে পুরো বিষয়টি ক্লিয়ার করার চেষ্টা করবো।’

আক্রান্ত তরুণী নিজেই বাদি হয়ে চান্দগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ সোর্স জাহাঙ্গীর ও সুমনের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা। ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

পুলিশের এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, মামলার এক নাম্বার আসামি জাহাঙ্গীর ও ওই নারীর স্বামী পূর্ব পরিচিত। তাদের বাসায়ও যেতেন জাহাঙ্গীর। ওই নারীকে উত্ত্যক্ত করতেন। বৃহস্পতিবার রাতে ওই নারীকে একা যেতে দেখে তাকে অনুসরণ করেন। একপর্যায়ে রাস্তায় গতিরোধ করে তুলে নিয়ে যান। তাকে নিতে আসা এক কিশোরকেও সঙ্গে নিয়ে যান। পরে ওই কিশোরকে মারধর করে ছেড়ে দেন। জাহাঙ্গীর অন্যান্য আসামিদের খবর দিয়ে ঘটনাস্থলে নিয়ে ওই নারীকে একেরপর এক ধর্ষণ করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজেস বড়ুয়া বলেন, ‘আক্রান্ত নারী বিবাহিত। জাহাঙ্গীর তার স্বামীর পূর্বপরিচিত। পূর্বপরিচয়ের সূত্রেই জাহাঙ্গীর ওই নারীকে গলির ভেতরে নিয়ে যান। যে গলিতে ঘটনা হয়েছে, সেখানে মনোয়ারা থাকেন। ঘটনায় জড়িতদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মনোয়ারা ধর্ষণের সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে পাহারা দেন।’

গ্রেপ্তার আটজনকে শনিবার আদালতে নেওয়া হবে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আগামীনিউজ/আশা

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner