ঢাকা: দুবাইয়ে পাঁচ তারকা হোটেলে চাকরি দেয়ার কথা বলে নারী পাচার করতো এমন একটি চক্রের গডফাদারসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল। গ্রেপ্তাররা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নারীদের লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে তাদের অগ্রিম টাকা দিয়ে দুবাইয়ে নিয়ে শারীরিক মানসিক নির্যাতন করে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হতো।
রোববার (১২ জুলাই) বেলা পৌনে ১২ টার দিকে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে একজন গডফাদার সহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- আজম খান ও তার দুই সহযোগী আল আমিন হোসেন ডায়মন্ড এবং আনোয়ার হোসেন ময়না।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আজম খানের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়িতে। তার বাবা দুবাইয়ে থাকতেন। তিনি ১৯৯৬ সালে দুবাইয়ে চলে যান। দুবাইয়ে তার চারটি তারকাযুক্ত হোটেলের অংশীদার রয়েছে।
হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে ফরচুন পার্ল হোটেল এন্ড ড্যান্স ক্লাব, হোটেল রয়েল ফরচুন, হোটেল ফরচুন গ্রান্ড এবং হোটেল সিটি টাওয়ারের অন্যমত মালিক। তিনি (আজম খান) গত আট বছর ধরে নারী পাচারের ব্যবসায় জড়িত হয়েছেন।
সিআইডির ডিআইজি বলেন, কিছুদিন আগে দুবাই সরকারের অভিযোগের ভিত্তিতে আজম খানের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়। পরে তাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। আজম খান দেশে এসে নতুন পাসপোর্ট তৈরি করে দেশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে অন্য কোন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
সিআইডি জানায়, আজম খান এই নারী পাচার চক্রের মূল হোতা। এসব হোটেলগুলোতে কাজের নামে বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশ থেকে পাচারকৃত অল্প বয়সী সুন্দরী তরুণীদের যৌনকাজে বাধ্য করত। আজম খানের সহযোগী আল আমিন হোসেন ওরফে ডায়মন্ড সহ আরো অনেক ড্যান্স প্রশিক্ষন দিয়ে তরুণীদের বিদেশে মোটা অংকের বেতনের প্রভোলন দেখাতো। পরে চাহিদামতো এসব তরুণীদের তারা দুবাইয়ে পাচারের ব্যবস্থা করত। সেখানে পৌঁছানোর পর আজমখানের মালিকানাধীন ড্যান্স ক্লাবগুলোতে আটক রেখে চলত যৌন নির্যাতন ও নিপিড়ন। তাদেরকে (ভুক্তভোগী) মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন দেয়ার কথা বললেও তাদেরকে কোন টাকা দেওয়া হতো না।
এসব ঘটনায় আসামিদের জড়িত থাকার সকল অডিও ক্লিপ সংগ্রহ করেছে সিআইডি। আজম খান গত আট বছর ধরে প্রায় এক হাজার তরুণীদেরকে দুবাইয়ে পাচার করেছে।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আজম খানের বাংলাদেশে ৫০ জনের মত দালাল (ট্রাভেল এজেন্সী) সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তিনি ওই দালালদের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অল্প বয়সী নারীদের বিদেশে ভালো চাকরি দেয়ার প্রভোলন দেখাত। পরে তাদের ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মত দিয়ে দুবাইয়ে নিয়ে তার বিভিন্ন হোটেলে চাকরি দিত। এক পর্যায়ে তাদেরকে তার ড্যান্স বারে নাচার জন্য বলত। কোন কোন সময়ে তাদের হোটেলে ওই তরুণীদের দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হতো। ওই নারীরা রাজি না হলে তাদেরকে খেতে না দিয়ে মারধোর করে আবার কোন কোন সময়ে তাদেরকে বৈদ্যুতিক শর্ক দেওয়া হতো।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, অপরাধের যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে তার সবকিছুর মধ্যেই তিনি (আজম খান) জড়িত। বাংলাদেশেও আজম খানের বিরুদ্ধে ১৫ টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে ছয়টি হত্যা মামলা। তার বিরুদ্ধে গত ২ জুলাই সিআইডি বাদি হয়ে লালবাগ থানায় একটি মামলা করেন।
আগামীনিউজ/এআর/এমআর