ঢাকা : যুব মহিলা লীগ থেকে বহিস্কৃত আলোচিত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার মামলা তদন্ত করতে আগ্রহী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। আগামীনিউজ ডটকমকে এ বিষয়টা জানান র্যাবের গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক এএসপি সুজয় সরকার।
তিনি বলেন, ‘পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। অনুমোদন পেলে কোর্টের মাধ্যমে তাকে আমাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
এদিকে, বিমান বন্দর থানা থেকে পাপিয়ার মামলা ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিমান বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিএম ফরমান আলী। তিনি আগামীনিউজ ডটকমকে বলেন, ‘বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিমান বন্দর থানা থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবিতে নেওয়া হয়। এখন তিনি সেখানেই আছেন।’
গণমাধ্যমে পাপিয়ার ব্যাপারে যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো তার জিজ্ঞাসাবাদের প্রাথমিক স্বীকারোক্তি ছিলো বলেও জানান ওসি ফরমান আলী।
তিনি বলেন, ‘পাপিয়ার ব্যাপারে আমরা অনেক তথ্যই গণমাধ্যম থেকে পেয়েছি। এরমধ্যে অনেক ব্যাপারই আমরা আগে থেকে জানতাম না।’ তবে পাপিয়ার ব্যাপারে আর কোনো তথ্য জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করে ওসি বলেন, ‘'তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছু বলা যাবে না।’
এদিকে ডিবি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবির উত্তরের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও প্রতিরোধ টিমের সহকারী পরিচালক শাহিদুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করছেন।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে থাইল্যান্ড পালানোর সময় জাল টাকাসহ শামীমা নুর পাপিয়া (২৮), তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২) কে আটক করে র্যাব।
ওই দিন র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১-এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফিউল্লাহ বুলবুল পাপিয়ার ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর তথ্য গণমাধ্যমকে জানান।
তিনি জানান, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, এদের প্রধান কাজ ছিল দেশ থেকে অবৈধ পথে টাকা পাচার ও নারীদের দিয়ে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করা। এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক তদবির, অস্ত্র ও মাদকের ব্যবসাও পরিচালনা করে আসছিলেন তারা।’
এছাড়া, সমাজ সেবার নাম করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নারীদের ধরে এনে অবৈধ কাজে লিপ্ত করতেন। অধিকাংশ সময় রাজধানীর বিভিন্ন বিলাশবহুল হোটেল ভাড়া করে এই ব্যবসা চালাতেন। বিশেষ করে এই ব্যবসা পরিচালনার জন্য ঢাকা এবং নরসিংদিতে দামী হোটেল এবং দামী গাড়ি ভাড়া করে রাখতেন। তারা রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিন ভাড়া করে গত কয়েক মাসে ৮৮ লাখ টাকা ভাড়া দিয়েছে। প্রতিরাতে ওয়েস্টিনের পুরো বারটি বুক করে রাখতেন। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে হোটেল ও বারের বিল আসত এক কোটি ত্রিশ লাখ টাকা বলে জানান র্যাব-১-এর অধিনায়ক শাফিউল্লাহ বুলবুল।
এরপর রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে ও নরসিংদীতে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়িসহ তাদের নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থের খবর পেয়ে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব। অভিযানে ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার বাসা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
পরদিন রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি এবং সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র আইনে একটি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা করা হয়।
এসব মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরীর ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তাদের অপর দুই সহকারী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবার পাঁচ দিন রিমান্ড দেন আদালত।
আগামীনিউজ/আরিফ/ডলি/সবুজ