ঢাকাঃ সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন নামের এক শিক্ষিকা ১৪ শিক্ষার্থীকে চুল কেটে দেওয়ার ঘটনা সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনার পর ঘটনায় কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে রুল জারি করেছেন আদালত। রুলে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এ ধরনের আচরণ রোধে একটি আচরণবিধি তৈরি করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে কেন ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না তাও জানতে চেয়েছেন। পাশাপাশি কেন এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তাও জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার পর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
স্বরাষ্ট্র সচিব, শিক্ষা সচিব, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার নওরোজ মো, রাসেল চৌধুরী।
এর আগে গতকাল বুধবার সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কাটার ঘটনায় হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব।
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ ছাত্রের চুল কেটে দিলেন সহকারী প্রক্টর
এদিকে ঘটনার পর অভিযুক্ত শিক্ষিকা মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে রবির পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান পদ, সহকারী প্রক্টর পদ ও প্রক্টরিয়াল বোর্ডের সদস্য পদ থেকে লিখিতভাবে পদত্যাগ করেছেন।
প্রসঙ্গত, ছাত্রদের চুল বড় রাখার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন প্রক্টর। যে কারণে বেশিরভাগ ছাত্র চুল ছোট করে ফেলেছিলেন। তবে রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) পরীক্ষার হলে ঢোকার সময় শিক্ষার্থীরা দেখতে পান যে, গেটে কাঁচি হাতে দাড়িয়ে আছেন প্রক্টর। এসময় যাদের চুল মুঠোর মধ্যে ধরা যায়, তাদের মাথার সামনে থেকে বেশ খানিকটা চুল কেটে দেন তিনি। একে একে ১৪ জন শিক্ষার্থীর চুল কাটা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরে। এই ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে পোস্ট দিলে বিষয়টি ব্যাপক ভাইরাল হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান তুহিনকে তার চেম্বারে ডেকে নিয়ে গালিগালাজ করেন ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে স্থায়ী ভাবে বহিষ্কারের হুমকি দেন। এতে ভয়ে তুহিন সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাত ৭টার দিকে দ্বারিয়াপুরের শাহমুখদুম ছাত্রাবাসের নিজ কক্ষে দরজা বন্ধ করে ঘুমের বড়ি সেবন করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। রাত ৮টার দিকে তার সহপাঠীরা বিষয়টি টের পেয়ে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা এখনও আশংকাজনক বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে রাতেই রবি ক্যাম্পাসে ছুটে এসে বিক্ষোভ করেন। গভীর রাত পর্যন্ত তাদের এ বিক্ষোভ চলে। পরে মঙ্গলবার সকাল থেকে তারা আবারও বিক্ষোভ শুরু করলে রবি ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে।
আগামীনিউজ/বুরহান