কুড়িগ্রামঃ তিন বেলা খাবার জোগানো সম্ভব নয় সেখানে বাড়তি ওষুধ কেনাটা যেন বিলাসিতা। একটি প্রতিবন্ধীসহ দু’টি অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান নিয়ে অসহায় জীবন পার করছেন কুড়িগ্রাম পৌরসভার পুরাতন রেল স্টেশন পাড়ার বাসিন্দা অসুস্থ রুমা বেগম। বয়সের কথা বলতেই হিসাব কষে পারলেন না বলতে। জীবন সংগ্রামের হিসাব মেলাতে না পেরে যেন সব হিসাব তার এলোমেলো।
স্থানীয় বিড়ি ফ্যাক্টরিতে কাজ করে বড় ছেলের অনিয়মিত আয় যা গড়ে দৈনিক ১০০ টাকার কম। এই সামান্য আয় এবং প্রতিবন্ধী ছোট ছেলের ত্রৈমাসিক ভাতা ২৫০০ টাকা দিয়ে কোনোরকমে তিনবেলা খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে তাদের।
বছর ১২ আগে মূলত শুরু হয় রুমা বেগমের জীবন সংগ্রাম। সেই সময় আনন্দের সংসারে মেঘকালো করে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় রুমা বেগমের স্বামী। মৃত্যুর আগেই স্বামীর চিকিৎসার পেছনে কয়েক দফা খরচে ২ শতক ভিটেবাড়ি বাদে পরিবারের সর্বস্ব বিক্রি করে দিতে হয়। বড় ছেলে জেএসসি পাস করলেও অর্থের অভাবে বন্ধ হয় লেখাপড়া। ছোট ছেলেকে প্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি করালেও গোদ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাকে স্কুল ছাড়তে হয়। প্রতিবন্ধী ছেলেকে সাথে নিয়েই অন্যের বাড়িতে ঝিঁ এর কাজ করে সংসার চালাতেন রুমা। কিন্তু সেখানেও বিধি বাম। অসুস্থ ছেলের চিৎকার ও চেঁচামেচিতে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই তাকে কাজ ছাড়তে বাধ্য করেন। এরপর বিভিন্ন রোগ বাসা বাধে তার নিজের শরীরে। পিত্তথলিতে পাথর, টিউমারসহ দেখা দেয় হার্টের সমস্যা। এ অবস্থায় আর ঝিঁয়ের কাজ করতে পারেন না। নানাজনের কাছে হাত পেতে জরুরি অবস্থায় টিউমার অপারেশন করেন।
অর্থের অভাবে কোনো রোগেরই ওষুধও কিনতে পারেন না। অর্থের অভাবে শেষ করতে পারেন নি স্বামীর রেখে যাওয়া অসমাপ্ত বাড়ির কাজ। ঘরের চাল থাকলেও বেড়ার জায়গায় ঝুলে আছে শুধুমাত্র কয়েক টুকরো কাঠ। খোলা ঘরেই অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে পার করছেন রাতের পর রাত। বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হলেও মেলে না তার কপালে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা। এভাবে নিজের জীবন কাহিনী বলতে বলতে কণ্ঠ ভারি হয়ে আসে রুমা বেগমের। এক পর্যায়ে সজোরে কেঁদে ফেলেন। কান্নায় হয়ে যান ছোট্ট শিশুটি।
রুমার প্রতিবেশী ছেলিনা বেগম বলেন, আমরা এলাকার অনেকেই সাধ্যমত এই পরিবারটিকে সহায়তা করছি। কিন্তু তাদের ৩ জনের ভরণপোষণে তা যথেষ্ট নয়। তাই তার বড় ছেলেকে কেউ একটা স্থায়ী কাজের ব্যবস্থা করে দিলে পরিবারটি ৩ বেলা দু’মুঠো খেতে পারতো বলে মনে করেন এলাকাবাসী।
রুমার দেবর নজরুল ইসলাম দুখু জানান, আমাদের নিজেদের অবস্থা তেমন ভালো নয়। তবুও তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। অসহায় রুমার পরিবারটিকে বাঁচাতে তাই সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানাই।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ আব্দুল মালেক বলেন, লোকমুখে পরিবারটির বিষয়ে জেনেছি, তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
শাহীন আহমেদ/বুইউ